নিলামবাজার, ১৪ নভেম্বর (হি.স.)৷৷ ত্রিপুরায় কথিত সাম্প্রদায়িক হিংসার মিথ্যা, ভুয়ো এবং রং চড়ানো গুজব সংবলিত খবরের ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়ানোর দায়ে দিল্লি-ভিত্তিক দুই যুবতী সাংবাদিককে আটক করেছে অসমের করিমগঞ্জ জেলার নিলামবাজার থানার পুলিশ৷
দিল্লি-ভিত্তিক নিউজ পোর্টাল এইচডব্লিউ নিউজ নেটওয়ার্কের দুই সাংবাদিক যথাক্রমে ওড়িশার ঝাড়সুগুদা এলাকার মানোয়ারপাড়ার বাসিন্দা জনৈক গোপাল সকুনিয়ার মেয়ে সমৃদ্ধি কে সকুনিয়া এবং নয়াদিল্লির রোহিণী এলাকার জনৈক রত্নেশ্বর ঝায়ের মেয়ে স্বর্ণা ঝা৷ ত্রিপুরা থেকে পালিয়ে শিলচর (কুম্ভিরগ্রাম) বিমানবন্দরে যাওয়ার পথে আজ রবিবার বিকেল প্রায় তিনটায় নিলামবাজার পুলিশ সমৃদ্ধি এবং স্বর্ণা নামের দুই মহিলা সংবাদকর্মীকে থানায় আটকে রেখেছে৷
এঁরা ত্রিপুরা থেকে দিল্লি পালাতে শিলচেরের উদ্দেশে রওয়া হয়েছে৷ এই খবরের ভিত্তিতে গোমতি জেলা পুলিশ সুপার যোগাযোগ করেন অসমের করিমগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপারের সঙ্গে৷ করিমগঞ্জের পুলিশ সুপার ত্রিপুরা-অসম জাতীয় সড়ক সংলগ্ণ সব থানাকে সতর্কবার্তা পাঠিয়ে ভুয়ো খবর ছড়ানোকারিণী দুই সাংবাদিককে ধরতে নির্দেশ দেন৷ এরই পরিপ্রেক্ষিতে আজ রবিবার নিলামবাজার থানা কর্তৃপক্ষ দলবল নিয়ে তালাশি-অভিযান চালিয়ে তাঁদের আটক করেন৷ এদিকে খবর পেয়ে আটক দুই সংবাদকর্মীকে নিয়ে যেতে নিলামবাজার থানায় এসেছে ত্রিপুরা পুলিশ৷ কিন্তু নিলামবাজার পুলিশ রাতে তাঁদের ত্রিপুরা পুলিশের হাতে সমঝে দিতে রাজি হয়নি৷ তাই তাঁদেরকে স্থানীয় উজ্জ্বলা হোমে রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে৷
প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশে সম্প্রতি সংগঠিত ঘটনার রেশ ধরে ত্রিপুরায়ও কিছু ঘটনা সংঘটিত হয়েছিল বলে নানাভাবে বিকৃত খবর সম্প্রচারিত হয়েছিল৷ কথিত ওই সব ঘটনা কভার করতে দিল্লির এইচডব্লিউ নিউজ নেটওয়ার্কের দুই সংবাদকর্মী সমৃদ্ধি সকুনিয়া এবং স্বর্ণা ঝা গত বৃহস্পতিবার ত্রিপুরায় গিয়েছিলেন৷ এ প্রসঙ্গে ত্রিপুরা পুলিশের অ্যাসিস্টেন্ট আইজি (আইন-শৃঙ্খলা) জানান, ত্রিপুরা পৌঁছেই দুই সংবাদকর্মী গোমতি জেলার উদয়পুর এলাকায় যান৷ এর পর পশ্চিম ত্রিপুরার সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকায়ও এই দুই সংবাদকর্মী খবর সংগ্রহের জন্য গিয়েছিলেন৷ গতকাল শনিবার তাঁরা উনোকুটি জেলায় যান৷ যেখানে বিশ্বহিন্দু পরিষদের নেতৃত্বে হিন্দুরা সংখ্যালঘুদের একটি নির্মীয়মাণ মসজিদ ভেঙে দেওয়ার গুজব রটানো হয়েছিল৷ ওই গুজবকে আধার করে সংবাদকর্মী সমৃদ্ধি ও স্বর্ণা স্থানীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের জনগণকে উস্কানি দেন৷ ফটিকরায়ের পালবাজার এলাকার মুসলিম জনতার মুখ দিয়ে বিশ্বহিন্দু পরিষদের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ সংবলিত বক্তব্য তাঁরা সংগ্রহ করেন৷ কতিপয় মুসলিম নাগরিক নাকি বলেন, গত ২৩ অক্টোবর বিশ্বহিন্দু পরিষদের কর্মীরা ’’জয় শ্রীরাম’’ ধবনি দিয়ে পালবাজার এলাকার মসজিদ ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছিলেন৷ দিল্লির দুই সংবাদকর্মীর এমন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে লিপ্ত থাকার অভিযোগ স্থানীয় পুলিশের কাছে গিয়ে পৌঁছে৷
ততক্ষণে এইচডব্লিউ নিউজ নেটওয়ার্কের দুই সংবাদকর্মী উনোকুটি জেলা ছেড়ে চলে যান৷ উভয় সংবাদকর্মী উত্তর ত্রিপুরার সদর শহর ধর্মনগরের একটি হোটেলে গিয়ে উঠেন৷ খবর পেয়ে পুলিশ তৎক্ষণাৎ ওই হোটেলে গিয়ে উপস্থিত হয়৷ কিন্তু তাঁদের পাওয়া যায়নি৷ ধর্মের নামে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে সংঘাত সৃষ্টির অভিযোগে দুই মহিলা সংবাদকর্মীর বিরুদ্ধে আজ ১৪ নভেম্বর ভোরে ত্রিপুরার কাঁকড়াবন থানায় ৮২/২০২১ কেকেবি ০৮২ নম্বরে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৫৩-এ, ১৫৩-বি, ১৯৩, ৫০৪, ১২০-বি এবং ২০৪ ধারায় মামলা রুজু করে নোটিশ জারি করে ত্রিপুরা পুলিশ৷
ত্রিপুরা পুলিশের অ্যাসিস্টেন্ট আইজি (আইন-শৃঙ্খলা) আরও জানান, ইতিমধ্যে উত্তর ত্রিপুরার ফটিকরায় থানায় ধর্মের নামে সংঘাত সৃষ্টি করার ষড়যন্ত্র রচনার দায়ে ৩৯/২০২১ নম্বরে ভারতীয় ফৌজদারি দণ্ডবিধির ১২০-বি, ১৫৩-এ এবং ৫০৪ ধারায় মামলা রুজু করে সিআরপিসির ৪১-সি বলে নোটিশ জারি করে ২১ নভেম্বর তাদের থানায় হাজির হতে বলা হয়েছিল৷
প্রসঙ্গত, ত্রিপুরায় সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ সংক্রান্ত ভুয়ো ও গুজব ছড়িয়েছিলেন এই দুই মহিলা সাংবাদিক৷ তাঁরা হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের সমালোচনা করে লাগাতার সংবাদ পরিবেশন করছিলেন৷ তাই ধর্মের নামে সংঘাত সৃষ্টির অভিযোগ করে ত্রিপুরার বিভিন্ন থানায় এফআইআর দায়ের করেছিলেন বিশ্বহিন্দু পরিষদের কার্যকর্তারা৷ ওই সব এফআইআরের ভিত্তিতে পুলিশ মামলা দায়ের করে সমৃদ্ধি কে সকুনিয়া এবং স্বর্ণা ঝাকে গ্রেফতার করতে অভিযান চলিয়েছিল৷