নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৩১ অক্টোবর৷৷ আগামী কয়েক দশকেও হারানো যাবে না বিজেপি-কে৷ তৃণমূল কংগ্রেসের-ই ভোট প্রকৌশলী প্রশান্ত কিশোরের দল অন্তত এমনটাই জানিয়ে দিয়েছেন৷ তথাপি তৃণমূল কংগ্রেস অযথা রাজ্যে এসে রাজ্যের মানুষকে বিভ্রান্ত করে তুলতে চাইছে৷ একই সাথে বাঁকা পথে ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনতে চাইছে সিপিআইএম-কে৷ প্রদেশ বিজেপি কার্যালয়ে রবিবার সন্ধ্যায় এমনটাই মনে করেন রাজ্যের তথ্য-সংসৃকতি ও ক্রীড়া দপ্তরের মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী৷
তিনি বলেন, প্রশান্ত কিশোরের দল স্পষ্টভাবেই জানিয়ে দেয়, যেখানে সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে ৩২ শতাংশ ভোট ভারতীয় জনতা পার্টি দখল করে নিয়েছে সেখানে আগামী কয়েক দশকেও হারানো যাবে না এই দলকে৷ কাজেই মাথা বিগড়ে গিয়ে এখন রাজ্যের সুস্থ এবং সুন্দর পরিবেশকে কলুষিত করে তুলতে চাইছে তারা৷ তবে তিনি জানিয়ে দেন, হাওয়াই চটি টিকবে না রাজ্যে৷ আরও বলেন, বাম আমলেই নাকি ভালো ছিলো রাজ্যের অবস্থা৷ মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলন থেকে রবিবার ৩০ লাখ টাকা ভাড়া করে যে চার্টার্ড বিমানে করে দলের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যে এলেন তার টাকাই বা কোথা থেকে এলো? এই প্রশ্ণও তুলেন তিনি৷
দলের প্রদেশ কার্যালয়ে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী বলেন, দীর্ঘদিন এ রাজ্যে বামেরা শাসন করলেও দেখা যায়নি তৃণমূল কংগ্রেসকে৷ ২০১৬ সালে একবার এলেও গুরুত্ব দেওয়া হয়নি সে সময়৷ তবে হঠাৎ করে কেনই বা এখন তাহলে? প্রশ্ণ তুলে মন্ত্রী বলেন, গট আপ গেম খেলছে তৃণমূল কংগ্রেস৷ বামেরা এবং তৃণমূল কংগ্রেস যে একই মুদ্রার এপিঠ আর ওপিঠ এটা আরও আগেই প্রমাণিত হয়েছে৷ রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার একদিকে বলছেন আমরা সমর্থন করি তাদের এজাতীয় আন্দোলনকে৷ বঙ্গের আরেক সিপিআইএম নেতা বিমান বসুও বলেছেন, তৃণমূল কংগ্রেসের সাথে চলতে আপত্তি নেই আমাদের৷ এ থেকেই স্পষ্ট যে ঘোলা জলে মাছ ধরার চেষ্টা চালাতে তারা সুযোগ করে দিতে চাইছে সিপিআইএম-কে৷ রাজ্যের মানুষ তা কখনোই মেনে নেবেন না বলে তিনি মনে করেন৷ কারণ রাজ্যের মানুষ জানেন যে কতো মায়ের কোল খালি হয়েছে তাদের সময়কালে৷
তিনি বলেন, ২০১৬ সালে বঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যে এসে সিপিআইএমকে খুনি, দুর্নীতিবাজ, গরিবদের শোষণ, নিপিরণ করছে বলে জানিয়েছিলেন৷ আর এখন তারই ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সিপিআইএমকে মাইলেজ পাইয়ে দিতে গিয়ে খাটো করতে ছাড়লেন না ভারতীয় জনতা পার্টিকে৷ যেখানে তাদের নেই কোনও সংগঠন, নেই দলের ভিত, সেখানে তারাই নাকি আবার ২০২৩ সালে ক্ষমতার আসনে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে রাজ্যে৷ একটা অশান্ত পরিবেশ সৃষ্টি করতে পুলিশ প্রশাসনের বাধা সত্ত্বেও রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবন এর সামনে সভা করেন তারা৷ পুলিশ প্রশাসনের বক্তব্য ছিলো, যেহেতু দূর-দূরান্ত থেকে শয়ে শয়ে মানুষ তাদের জনসভায় উপস্থিত হবেন সে ক্ষেত্রে কোভিডের এই পরিস্থিতিতে সভার স্থানটি পরিবর্তন করে নিয়ে যাওয়া হোক আস্তাবল ময়দানে৷ কিন্তু তা না করায় ত্রিপুরা উচ্চ আদালত একটি রায় দিয়ে জানিয়ে দেয় সভা যদি এখানেই করতে হয় তবে জনসমাগম যাতে কোনও অবস্থাতেই ৫০০ এর অধিক না হয়৷
মন্ত্রী বলেন, কার্যক্ষেত্রে জনসমাগম যে অতোটা হবে না তা তারা আগেই জানতো৷ যে কারণে আস্তাবল ময়দানে গিয়ে ফ্লপ শো করার পথে এগোয়নি তারা৷ তিনি বলেন, বেশ কিছু ক্ষেত্রে বহি রাজ্য থেকে কর্মী-সমর্থকদের জড়ো করার চেষ্টা চালানো হয় তাদের পক্ষ থেকে৷ এক্ষেত্রে উত্তর ত্রিপুরা জেলার চুড়াইবাড়ি সীমান্তে বহু বাস আটক করা হয়েছে৷ তাদেরকে কোভিড টেস্ট করার পর অনেকের মধ্যে আবার পজিটিভও মিলেছে৷ তার কথায়, আসামের কাছাড় এবং বঙ্গ থেকেই ২০ থেকে ৩০ বছর বয়সেই যুবক-যুবতীদেরকে রাজ্যে আনার চেষ্টা চালানো হয়৷ ক্ষমতা দখলের জন্য এমন সব কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানান তিনি৷ পাশাপাশি জনসভা থেকে রবিবার তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যেভাবে শাসক দল এবং ত্রিপুরা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে রক্ষা করে বিশ্রী ভাষায় গালমন্দ করেছেন তাতে বিষয়টি রাজ্যের জনগণের জন্যই অপমানজনক বলে মনে করেন মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী৷
তিনি বলেন, যে দলের নেতারা গত কয়েক মাস যাবত রাজ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন প্রকৃত অর্থে তারাই হচ্ছেন সে রাজ্যের গরিব মানুষের অর্থ লুটেপুটে খাওয়ার মূল কান্ডারী৷ সারদাকাণ্ডে বেশ কয়েক বছর জেল খাটতে হয়েছে কুণাল ঘোষকে৷ এজলাসে দাঁড়িয়ে তিনিই আবার স্বীকার করেছিলেন সারদার টাকা রয়েছে দলের প্রধান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে৷ তাছাড়াও কয়লা কেলেঙ্কারিতে জড়িত ছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়৷ বিমানবন্দরের স্বর্ণ পাচারের সময় কাস্টমের হাতে ধরা পড়েছিলেন তিনি৷ এছাড়াও রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, যিনি গত বিধানসভার আগে দল পাল্টে এখন আবার তৃণমূল কংগ্রেসের ঠাঁই নিয়েছেন৷ এর মূল কারণ, লুটেপুটে খাওয়ার রাজনীতি ভারতীয় জনতা পার্টিতে নেই৷ চোর বলে আখ্যা দিয়ে তার হয়ে ক্ষমা চাইতেও দেখা গিয়েছে দলের সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে৷ এরপর অবস্থা এমন জায়গায় গিয়ে ঠেকেছে, যেখানে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগদান করতে গিয়ে ত্রিপুরায় চলে আসতে হলো তাকে৷
রাজ্য মন্ত্রিসভার সদস্য তথা মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী আরও জানান, বঙ্গ থেকে ত্রিপুরা কোনও অংশেই পিছিয়ে নেই৷ বরং অনেকাংশেই এগিয়ে রয়েছে ত্রিপুরা৷ দীর্ঘ বাম শাসনের অবসান ঘটিয়ে এখন রাজ্যের পার ক্যাপিটা ইনকাম হয়েছে ১,২৫,১৯১ টাকা এবং বঙ্গের ক্ষেত্রে এই পার ক্যাপিটা ইনকাম দাঁড়িয়েছে ১,১৫,৭৪৮ টাকা৷ এছাড়াও রাজ্যের জিএসডিপি যেখানে ১৬.৪৬ শতাংশ সেখানে পশ্চিমবঙ্গের এই জিএসডিপির পরিমাণ ১২.৪৭ শতাংশ৷ শিক্ষাক্ষেত্রেও ত্রিপুরা রাজ্যে যেখানে শিক্ষিত জনগণের হার ৯৫ শতাংশের ওপর সেখানে বঙ্গে এই হার ৭৬ শতাংশের কাছাকাছি৷ এছাড়াও বর্তমান কোভিড পরিস্থিতিতে ত্রিপুরা রাজ্যে যে সময়ের মধ্যে ৯৫ শতাংশ কোভিডের টিকা প্রদান করা হয়ে গিয়েছে সে সময় বঙ্গে এনিয়ে চলছে কালোবাজারি৷ এছাড়াও তিনি বলেন, জল জীবন মিশন নিয়ে মানুষের কাছে পানীয় জল পৌঁছে দিতে রাজ্য সরকার যেখানে ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত করতে পেরেছে সেখানে পশ্চিমবঙ্গে তা মাত্র ৫.৪৬ শতাংশ পর্যন্তই সম্ভব হয়৷