শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান কি তাহলে আদালতে গড়াবে, প্রশ্ন রাজনৈতিক মহলে

কলকাতা, ৫ অক্টোবর (হি স)। জগদীপ ধনকর পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল হয়ে আসার পর থেকে রাজ্য সরকারের সঙ্গে রাজভবনের বিবাদ বেশ কিছু ক্ষেত্রে তা সাংবিধানিক দ্বন্দ্বের রূপও পেয়েছে। কিন্তু সেই সব বিষয় নিয়ে কোনও পক্ষই আদালতের দ্বারস্থ হয়নি। এবার মুখ্যমধ্ত্রী-সহ তিন তৃণমূল বিধায়কের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান কি তাহলে আদালতে গড়াবে, প্রশ্ন রাজনৈতিক মহলে

কিন্তু এবারে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সহ আরও দুই নতুন বিধায়কের শপথগ্রহণের বিষয়টি নিয়ে যে বিতর্ক দানা বেঁধেছে। এর জল সম্ভবত আদালতে গড়াতে চলেছে। রাজ্য সরকার বা রাজ্যের শাসক দলের তরফে এ নিয়ে প্রকাশ্যে কোনও বিবৃতি দেওয়া না হলেও নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে বিষয়টি নিয়ে আইনি পথে হাঁটতে পারেন বিধানসভার স্পিকার। এই জন্য সমস্ত রকম সম্ভাবনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। খুব দ্রুত এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে বলেই জানা গিয়েছে।

প্রথমে তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছিল ১০ অক্টোবর নাগাদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শপথ নেবেন। এর পর জানা যায় তিনি আগামী ৭ তারিখ বেলা ১২টার আগেই বিধানসভাতেই শপথ নিতে চান। আবার রাজ্যপাল টুইট করে জানান, শপথগ্রহণ সম্পর্কিত গেজেট প্রকাশিত হলে তা দেখে তবেই তিনি এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। সেই টুইটের পরে পরেই সোমবার রাতেই প্রকাশিত হয় গেজেট।

আবার রাজ্যের শাসক দলের তরফে পরিষদীয় নেতা তথা রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ‘আমরা অনুরোধ করেছি রাজ্যপাল মহোদয়কে। আগামী ৭ তারিখ ১২টার আগে আমরা চাইছি বিধানসভায় এসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে উনি শপথবাক্য পাঠ করান। আমরা আশা করছি নোটিফিকেশনটা হয়ে গেল উনি ৭ তারিখ বিধানসভায় এসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং আরও দুই নতুন নির্বাচিত বিধায়ককে শপথবাক্য পাঠ করাবেন।’

তৃণমূল সূত্রে এটাও জানা গিয়েছে রাজ্যপাল যদি বিধানসভায় এসে শপথবাক্য পাঠ করাতে না চান তো সেক্ষেত্রে বিধানসভার অধ্যক্ষ আইনি পথে হাঁটা দিতে পারেন। এই বিষয়ে শাসক শিবিরের আইনজীবীদের দাবি, দেশের সব রাজ্যের বিধানসভায় বিধায়কদের শপথবাক্য পাঠ করান স্পিকার। নবনির্বাচিত বিধানসভার ক্ষেত্রে সেই দায়িত্ব পালন করেন প্রোটেম স্পিকার।

একথা ঠিক যে সাংবিধানিক ভাবে নবনির্বাচিত বিধায়কদের শপথবাক্য পাঠ করানোর অধিকার রাজ্যপালের হাতেই ন্যস্ত করা হয়েছে। সেই দায়িত্ব আবার রাজ্যপালের তরফে প্রোটেম স্পিকার বা স্পিকারকে প্রদান করার ব্যবস্থাও রয়েছে।

তৃণমূল শিবিরের মতে, পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল এখন সেই ক্ষমতাই প্রত্যাহার করে নিতে চান। অর্থাৎ তিনি সরাসরি বিধানসভার স্পিকারের ক্ষমতায় হস্তক্ষেপ করছেন। তাই এক্ষেত্রে স্পিকার রাজ্যপালের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতেই পারেন এই মর্মে যে, গোটা দেশে যেখানে সব রাজ্যের সব বিধানসভার স্পিকারের ক্ষেত্রে এই ক্ষমতা দেশের কোনও রাজ্যেরই কোনও রাজ্যপাল আজ অবধি প্রত্যাহার করেননি সেখানে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল কেন হুট করে এই অধিকার প্রত্যাহার করে নিলেন।

তৃণমূল শিবিরের মতে, রাজ্যপাল রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান হতেই পারেন, কিন্তু তিনি যখন তখন যে কোনও অধিকার বা ক্ষমতা প্রত্যাহার করতে পারেন কিনা সেটা নিয়েই প্রশ্ন উঠছে। কারন দেশের কোনও রাজ্যের ক্ষেত্রেই এই ধরনের ঘটনা স্বাধীনতার পরে দেখা যায়নি। তাই বিষয়টি নিয়ে মামলা হলে তার জল অনেকটাই গড়াতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে যেহেতু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তাঁর মুখ্যমন্ত্রীত্ব ধরে রাখতে গেলে ৫ নভেম্বরের মধ্যে বিধায়ক হিসাবে শপথ নিতেই হবে তাই সেক্ষেত্রে আইনি পথে লড়াই করার মতো সময় আদৌ পাওয়া যাবে কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন থাকছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *