আগরতলা, ২৬ জুন : কৃষক আন্দোলন নিয়ে কেন্দ্রের আচরণ অহংকারের বহিঃপ্রকাশ বলে কটাক্ষ করেন ত্রিপুরার বিরোধী দলনেতা তথা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার। তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাথে তুলনা টেনে এনে ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। নইলে আগামীদিনে খেসারত দিতে হবে বলে তিনি হুশিয়ারির সুরে সতর্ক করেছেন।
মূলত, আজ সারা দেশের ত্রিপুরাতেও কৃষি বাঁচাও গণতন্ত্র বাঁচাও এই স্লোগানকে সামনে রেখে সংযুক্ত কিষান মোর্চা, ট্রেড ইউনিয়ন, বামপন্থী মহিলা ও ছাত্র যুব সংগঠন যৌথভাবে রাজভবন অভিযান করেন। ওই অভিযান শুরু হয়েছিল সার্কিট হাউস থেকে। করোনা পরিস্থিতি মাথায় রেখে রেলি হয়নি, শুধু প্লেকার্ড, পতাকা ও ব্যানার হাতে নিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছেন বামপন্থীরা। এদিনের কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন সারা ভারত কৃষক সভা রাজ্য সম্পাদক পবিত্র কর ও সভাপতি অঘোর দেববর্মা সহ গণমুক্তি পরিষদের রাজ্য সভাপতি জিতেন্দ্র চৌধুরী, পলিটব্যুরোর সদস্য মানিক সরকার, বাদল চৌধুরীর মত নেতৃত্বরা। তাঁরা রাজ্যপালের মাধ্যমে মেমোরেন্ডাম রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠিয়েছেন।
এদিন মানিক সরকার বলেন, দেশে ৭ মাস ধরে চলমান কৃষক আন্দোলনের পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছে সিপিএম। কারণ, কৃষকরা তিনটি কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে লাগাতর আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। উপরন্ত এখন কেন্দ্রীয় সরকার নতুন বিদ্যুত বিল আনছে। তাতে, সাধারণ মানুষের উপর চাপ আরও বাড়বে। এসবের বিরুদ্ধেই আজ সারা দেশে সম্মিলিত আন্দোলন হচ্ছে। তিনি ক্ষোভের সুরে বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার দেশব্যাপী কৃষক আন্দোলনকে গুরুত্ব দিচ্ছে না। তাতে, তাদের অহংকারী মানসিকতার প্রমাণ মিলেছে। তবে, পাঁচ রাজ্যের ফলাফলে ওই অহংকারের পরিণতিও দেখা গেছে, বিদ্রুপ করে বলেন তিনি। তাঁর দাবি, আগামীদিনে আরও বেশি মূল্য দিতে হবে তাঁদের।
বিজেপি পরিচালিত কেন্দ্রীয় সরকার-কে তুলোধুনা করতে গিয়ে ত্রিপুরার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জরুরি অবস্থার প্রসঙ্গ টেনে আনেন। তিনি বলেন, বিজেপি সারা দেশে জরুরি অবস্থার বর্ষপূর্তিতে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করছে। তাতে, অপরাধের কিছু নয়। কারণ, ক্ষমতায় থাকার জন্য প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী দেশে জরুরি অবস্থা জারি করেছিলেন। গত ভারতকে জেলখানায় পরিনত করেও তিনি নিশ্চিন্ত হতে পারছিলেন না। তিনি বুঝতে পারছিলেন, তাঁর গ্রহণযোগ্যতা কমছে, সাথে মানুষের মনে ক্ষোভ বাড়ছে। এই উপলব্ধি থেকে বিরোধী দলের নেতাদের জেলে পাঠিয়ে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। ভেবেছিলেন, তাঁরা জেল থেকে বের হয়ে প্রস্তুতি নিতে পারবেন না। তাই, ১৯৭৭ সালে নির্বাচন ঘোষণা দেন। ফলাফলে দেখা গেল, ইন্দিরা গান্ধীর নেতৃত্বে কংগ্রেস পরাস্ত হয়েছে। মানিক বাবু আজ প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাথে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর তুলনা টেনে বলেন, ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিন। কারণ, ইতিহাস খুবই রূঢ়। এখনই শিক্ষা না নিলে তার খেসারত দিতে হবে, হুশিয়ারির সুরে সতর্ক করে দেন তিনি।

