নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৫ জুন৷৷ চার দফা দাবী নিয়ে আগামী ২০ জুন থেকে ২৮ জুন পর্যন্ত রাজ্যে বিক্ষোভ আন্দোলন সংগঠিত করবে বামদলগুলি৷ পাঁচটি বাপন্থী দলের পক্ষ থেকে মঙ্গলবার যৌথভাবে বিবৃতি দেয়া হয়েছে৷
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, একদিকে কোভিড অতিমারীতে দেশ ও রাজ্যবাসীর জীবন সংশয়, অন্যদিকে কোভিড স্বাস্থ্য বিপর্যয়ের আঘাত মোকাবিলা করতে জনগণকে সাহায্য করার পরিবর্তে কেন্দ্রীয় সরকার পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা ভোটের ফল প্রকাশের পর ২৩ বার পেট্রোপণ্যের দাম বাড়িয়েছে৷ এর ফলে মুদ্রাস্ফীতি বেড়েছে এবং পাইকারী মূল্যসূচক গত ১১ বছরে মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে৷
পেট্রোপণ্যের উপর মোদি সরকার ব্যাপক পরিমাণ অন্তঃশুল্ক চাপিয়ে সাধারণ মানুষের পকেট কেটে বিপুল পরিমাণ অর্থ সংগ্রহ করছে৷ ত্রিপুরায়ও পেট্রোপণ্যের মূল্য প্রতি লিটার ১০০ টাকা অতিক্রম করেছে৷ আন্তর্জাতিক বাজারে পেট্রোপণ্যের দাম ক্রমশ নিম্নমুখী হলেও ভারত সরকার প্রায় প্রতিদিন এসব পণ্যের দাম বাড়িয়ে যাচ্ছে৷ একটি হিসেবে দেখা যাচ্ছে ২০১৪ সালে পেট্রোলের উপর অন্তঃশুল্ক ছিল লিটার প্রতি ৯ টাকা ৪৮ পয়সা, আজ তার পরিমাণ বেড়ে হয়েছে প্রতি লিটারে ৩২ টাকা ৯০ পয়সা৷ ডিজেলের ক্ষেত্রে একই সময়ে অন্তঃশুল্ক ছিল ৩ টাকা ৫৬ পয়সা৷ আজ তা বেড়ে হয়েছে লিটার পিছু ৩১ টাকা ৮০ পয়সা৷
এর প্রভাবে যাত্রী ভাড়া ও মালামাল পরিবহনের খরচ বেড়েছে, যা সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমিয়ে দিচ্ছে৷ গত মে মাসে খাদ্য সামগ্রীর দাম ৫ শতাংশ বেড়েছে, কৃষিজাত পণ্যের দাম বেড়েছে প্রায় ১৩ শতাংশ এবং একই ভাবে ভোগ্যপণ্যের দাম বেড়েছে প্রায় ৩১ শতাংশ৷ এই হিসেব পাইকারি মূল্যের৷ খুচরো বাজারে ভোক্তাদের অনেক বেশি দামে এসব পণ্য কিনতে হচ্ছে৷
ত্রিপুরায় সর্ষের তেলের লিটার ২০০ টাকা ছাড়িয়েছে৷ ওষুধের দাম বেড়েছে কয়েকগুণ৷ কোভিড অতিমারীতে দেশে দ্বিতীয় ঢেউয়ে আড়াই কোটি মানুষ কাজ হারিয়েছেন৷ রাজ্যের চিত্র আলাদা নয়৷ গণবন্টনের মাধ্যমে যে-সব ডাল, তেল, চিনি প্রভৃতি সামগ্রীর উপর থেকে রাজ্য সরকার ভর্তুকি তুলে দিয়েছে৷ রেগা-টুয়েপের কাজ নেই৷ রেগা-র কিছু কাজ হলেও মাসের পর মাস ধরে মজুরি পাচ্ছেন না৷ ছাঁটাই আছে, শূন্যপদ অবলুপ্তি আছে, কিন্তু নতুন কোনও নিয়োগ নেই৷ ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষুধা বেড়েছে৷ দারিদ্রসীমার নীচে বসবাসকারীর সংখ্যা ব্যাপক ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে৷ এই পরিস্থিতিতে পেট্রোপণ্য ও ভোগ্য সামগ্রী এবং ওষুধের দাম ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় সুযোগ তৈরি করেছে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগেই৷ তিন কালো কৃষি আইনের অন্তর্গত অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আইন সংশোধন করে কেন্দ্রীয় সরকার কালোবাজারি ও মজুতদারি আইনসিদ্ধ করে দিয়েছে৷
কোভিড মোকাবিলায় সরকারি পরিকল্পনা তৎপরতা এবং টিকাকরণের ক্ষেত্রে ব্যর্থতা স্পষ্টভাবে ধরা পড়েছে৷ জুন মাসে গড় মৃত্যুর হার দৈনিক ৭-এ পৌঁছেছে৷ বাড়িঘরে কোয়ারেন্টাইনে থাকা কোভিড আক্রান্তদের জন্য না আছে চিকিৎসার ব্যবস্থা, না আছে কোনও সরকারি ত্রাণ সাহায্য৷ সামনে করোনার তৃতীয় ঢেউ আসার সতর্কবার্তা জারি করেছেন আন্তর্জাতিক স্তরের স্বাস্থ্যবিজ্ঞানীরা৷ এই পরিস্থিতিতে সরকার নীরব হয়ে থাকতে পারে না৷ কাজের কাজ না করে শুধু নানা প্রকল্পের ঘোষণায় কোভিড ও ক্ষুধা- কোনওটাই মোকাবিলা করা সম্ভব নয়৷ তাই জাতীয় স্তরে পাঁচটি বামপন্থী দলের যুক্ত আহ্বানে সাড়া দিয়ে নিম্নলিখিত দাবির ভিত্তিতে ‘কোভিড বিধি মেনে আগামী ২০-২৮ জুন চার দফা দাবিতে ত্রিপুরার সর্বত্র বিক্ষোভ কর্মসূচী পালনের আহ্বান জানাচ্ছি৷
বামদলগুলির তরফ থেকে যে চার দফা দাবি সেগুলি হল-সরকারি খরচে সকলের জন্য সর্বজনীন টিকাকরণ নিশ্চিত করতে হবে৷ কোভিড ও কোভিডের সঙ্গে যুক্ত অন্যান্য রোগে মৃতদের পরিবারকে সরকার ঘোষিত ১০ লক্ষ টাকা আর্থিক সাহায্যের প্রতিশ্রুতি রূপায়িত করতে হবে৷ পেট্রোসামগ্রীর ওপর থেকে অস্তঃশুল্ক প্রত্যাহার করতে হবে৷ রেশনে প্রদেয় সামগ্রীর উপর থেকে ভর্তুকি প্রত্যাহার চলবে না৷ ভোগ্যপণ্য, ওষুধের দাম সরকারি হস্তক্ষেপে কমানোর ব্যবস্থা করতে হবে৷ আয়করের আওতার বাইরে থাকা সব পরিবারকে আগামী ৬ মাস মাসিক ৭,৫০০ টাকা করে নগদ হস্তান্তর করতে হবে৷ সব পরিবারকে বিনামূল্যে মাথাপিছু ১০ কেজি করে চাল সরবরাহ করতে হবে৷