গত এক সপ্তাহে ২.৪২ শতাংশ করোনা আক্রান্তের হার বৃদ্ধি, পশ্চিম ও উত্তর ত্রিপুরায় সংক্রমণের হার উর্দমুখী

আগরতলা, ৬ মে (হি. স.)৷৷ ত্রিপুরায় গত এক সপ্তাহে ২.৪২ শতাংশ করোনা আক্রান্তের হার বৃদ্ধি পেয়েছে৷ বিশেষ করে পশ্চিম এবং উত্তর ত্রিপুরায় আক্রান্তের হার উর্দমুখী৷ করোনার এযাবতীয় সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে সচিবালয়ে স্টেট লেভেল কোভিড টাস্ক ফোর্সের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে৷ ওই বৈঠকে সমস্ত বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা সম্পর্কে চর্চা হয়েছে৷ এদিকে, রাজ্যে গত ২৪ ঘন্টায় নতুন করে ৩০০ জন করোনা আক্রান্তদের সন্ধান মিলেছে৷


ত্রিপুরার মুখ্যসচিব মনোজ কুমারের সভাপতিত্বে স্টেট লেভেল কোভিড টাস্ক ফোর্সের এক বৈঠক আজ সচিবালয়ের কনফারেন্স হলে অনুষ্ঠিত হয়েছে৷ এই বৈঠকে রাজ্যের সামগ্রিক কোভিড পরিস্থিতির পর্যালোচনা করা হয়েছে৷ স্বাস্থ্য, শিক্ষা, শিল্প, রাজস্ব, তথ্য ও সংসৃকতি, আরক্ষা প্রশাসন সহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দফতরের প্রধান সচিব, সচিব ও পদস্থ আধিকারিকগণ সভায় উপস্থিত ছিলেন৷ মূলতঃ এই বৈঠকে রাজ্যে সর্বশেষ কোভিড সংক্রমণ পরিস্থিতি, টিকাকরণ, কোভিড প্রতিরোধে জনসচেতনতা সৃষ্টি করা, কোভিডে আক্রান্তদের চিকিৎসা, কোভিড কেয়ার সেন্টারের ব্যবস্থাপনা প্রভৃতি বিষয় নিয়ে বিস্তারিত পর্যালোচনা করা হয়৷ সভায় মুখ্যসচিব মনোজ কুমার কোভিড টেস্টিং এবং বিশেষ করে টিকাকরণের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন৷

এই ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য দপ্তর ও জেলা প্রশাসনকে প্রতিনিয়ত মনিটরিং করার জন্য তিনি নির্দেশ দেন৷ আজকের পর্যালোচনা সভায় স্বাস্থ্য দফতরের পক্ষ থেকে গতকাল পর্যন্ত কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা এবং এলাকাভিত্তিক পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়৷ জানা গেছে, গত এক সপ্তাহে রাজ্যে কোভিড পজিটিভিটির রেট ৩.১৯ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৫.৬১ শতাংশে৷ আগরতলা পুর নিগমের কিছু কিছু এলাকা সহ পশ্চিম জেলা ও উত্তর জেলায় পজিটিভিটির হার উর্দমুখী৷ এই পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিম ও উত্তর জেলায় কোভিড টেস্টিং হার বৃদ্ধি এবং প্রয়োজনে কনটেইনমেন্ট জোন করার উপর বৈঠকে গুরুত্ব আরোপ করা হয়৷ বহিরাজ্য থেকে ট্রেনে যে সমস্ত যাত্রীরা রাজ্যে আসছেন তাদের টেস্টিং-এর জন্য রাজ্যের অভ্যন্তরে বিভিন্ন রেল স্টেশনগুলিতে টেস্টিং ব্যবস্থা করা হবে৷ বিশেষ করে দেশের হটস্পট জোন থেকে আগত যাত্রীদের টেস্টিং-এর ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেবে স্বাস্থ্য দফতর৷


আজকের পর্যালোচনা বৈঠকে যেসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে সেগুলি হল-আগরতলা শহর এলাকায়, বিশেষ করে বাসস্ট্যান্ড, বাজার, রেলস্টেশন এবং অফিসগুলিতে রেন্ডম কোভিড টেস্টিং করা৷ ৪৫-৬০ বছর পর্যন্ত সকলকে আগামী ৭দিনের মধ্যে টিকাকরণের আওতায় নিয়ে আসা৷ এক্ষেত্রে জেলাশাসকগণ বি এল ও-দের সহায়তায় উক্ত বয়সীদের চিহ্ণিত করে টিকাকরণের আওতায় নিয়ে আসবেন৷ টিকার প্রথম ডোজের ক্ষেত্রে শহর এলাকার সেন্টারগুলিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে৷ অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের মধ্যে রয়েছে, ভলান্টারি লকডাউনের ক্ষেত্রে জনগণকে সচেতন করে তোলা৷ অর্থাৎ জনগণ যাতে স্বেচ্ছায় বাড়ির বাইরে বের না হন৷ কোনও বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া নাগরিকরা যাতে বাড়ির বাইরে না বের হন তারজন্য ব্যাপক প্রচার চালানো হবে৷ পাশাপাশি মাস্ক পড়া, স্যানিটাইজার ব্যবহার করার উপর সচেতনতামূলক প্রচার অব্যাহত থাকবে৷ সভায় সিদ্ধান্তের মধ্যে রয়েছে কোনো প্রকার রাজনৈতিক, সাংসৃকতিক, বিনোদনমূলক ও ক্রীড়া ক্ষেত্রে জমায়েত করা যাবেনা৷ কোভিড কেয়ার সেন্টারগুলির ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে ২ জন নোডাল অফিসার দায়িত্বপ্রাপ্ত থাকবেন৷ একজন জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পদস্থ আধিকারিক এবং অন্যজন স্বাস্থ্য দপ্তরের চিকিৎসক৷

প্রত্যেক কোভিড কেয়ার সেন্টারে ২৪ ঘন্টার জন্য একটি অ্যাম্বুলেন্স রাখা হবে বলে আজকের সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়৷ জেলাস্তরে একজন ফিজিসিয়ান প্রতিদিন কোভিড কেয়ার সেন্টারে থাকা রোগীদের চিকিৎসার ব্যাপারে তদারকি করবেন এবং ৭২ ঘন্টা অন্তর অন্তর হোম আইসোলেশনে থাকা রোগীদের শারীরিক বিষয়ে খোজখবর নেবেন৷ বাজারগুলিতে ভিড় নিয়ন্ত্রণের জন্য জেলা ও মহকুমা প্রশাসন বিশেষ নজরদারি চালাবেন৷ বাজার কমিটিগুলির সঙ্গে আলোচনা করে ভীড় এড়াতে দোকান খোলার সময়সীমা নির্ধারিত করা, বাজার প্রশস্ত করা ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে৷ নিয়ম ভঙ্গ করলে কঠোর পদক্ষেপও নেওয়া হতে পারে৷ এরজন্য জেলা ও মহকুমা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিশেষ এনফোর্সমেন্ট টীম গঠন করা হবে৷ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর যেসব জওয়ানরা বহির্রাজ্যে থেকে আসছেন তাদের সকলের টিকাকরণ এবং যাদের সংক্রমণের লক্ষণ রয়েছে তাদের আইসোলেশনে রাখার বিষয়ে বৈঠকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়৷ সভায় বি এস এফের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে রাজ্যে তারা ১২টি কোভিড কেয়ার সেন্টার চালু করবে৷ সংশ্লিষ্ট এলাকার জেলা শাসকগণ এই বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করবেন৷ আজকের বৈঠকে কোভিড চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ঔষধের সরবরাহ এবং অক্সিজেনের সামগ্রিক অবস্থা নিয়ে বিশদ আলোচনা করা হয়৷ জরুরী এইসব বিষয়ে নিয়মিত পর্যালোচনা ও তদারকি করার উপরও বৈঠকে গুরুত্ব আরোপ করা হয়৷ স্বাস্থ্য দপ্তরের প্রধান সচিব জে কে সিনহা কোভিড মোকাবিলায় স্বাস্থ্য দফতরের বিভিন্ন স্তরের কর্মচারীরা সময়ে সময়ে উদ্ভুত পরিস্থিতির মোকাবিলা করে যেভাবে কাজ করছেন তার জন্য তাদের ভূয়সী প্রশংসা করেন৷


সভায় স্বাস্থ্য দফতরের প্রধান সচিব জে কে সিনহা, পরিবহণ দপ্তরের প্রধান সচিব শ্রীরাম তরণীকান্ত, নগরোন্নয়ন দপ্তরের সচিব কিরণ গিত্যে, শিক্ষা দফতরের সচিব সৌম্যা গুপ্তা, তথ্য ও সংসৃকতি দপ্তরের সচিব ড় প্রশান্ত কুমার গোয়েল, রাজস্ব দফতরের সচিব তনুশ্রী দেববর্মা, পশ্চিম ত্রিপুরা জেলার জেলাশাসক রাভেল হেমেন্দ্র কুমার, স্বাস্থ্য দপ্তরের অধিকর্তা ডা. শুভাশিস দেববর্মা, পরিবার কল্যাণ ও রোগ প্রতিরোধ অধিকারের অধিকর্তা ডা. রাধা দেববর্মা, জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের মিশন ডিরেক্টর ডা. সিদ্ধার্থ শিব জয়সওয়াল, বি এস এফ, এর্র্র্য়পোট অথোরিটির প্রতিনিধি সহ স্বাস্থ্য দফতরের অন্যান্য পদস্থ আধিকারিকগণ উপস্থিত ছিলেন৷ সভায় শেষে রাজ্যের প্রাক্তন প্রধান সচিব আর পি মীনার প্রয়াণে শোক জ্ঞাপন করে দু’মিনিট নীরবতা পালন করা হয়৷

ত্রিপুরায় করোনার সংক্রমণ এবার তিনশ-র দরজায় পৌছে গেল৷ গত ২৪ ঘন্টায় নতুন করে ৩০০ জন করোনা আক্রান্তদের সন্ধান মিলেছে৷ অবশ্য, আবারও নমুনা পরীক্ষার সংখ্যায় বৃদ্ধির কারণেই অধিক মাত্রায় করোনা আক্রান্তের খোজ পাওয়া গিয়েছে৷ তবে সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হল, করোনা আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘন্টায় ফের ১ জনের মৃত্যু হয়েছে৷ কিন্তু, ১৪৯ জন করোনা সংক্রমণ থেকে মুক্তি-ও পেয়েছেন৷ তাতে দেখা যাচ্ছে, সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ে গত ২৪ ঘন্টায় সবচেয়ে বেশি মানুষ করোনা সংক্রামিত এবং রোগ মুক্তি পেয়েছেন৷ তবে চিন্তা রীতিমত বাড়িয়ে রেখেছে, নতুন করে করোনা আক্রান্তদের মধ্যে ১৪৪ জন শুধু পশ্চিম ত্রিপুরা জেলায় অবস্থান করছেন৷ বর্তমানে ত্রিপুরায় সক্রিয় করোনা আক্রান্ত রয়েছেন ১৯৭৭ জন৷
স্বাস্থ্য দফতরের মিডিয়া বুলেটিন অনুসারে, গত ২৪ ঘন্টায় আরটি-পিসিআর ৭৫২ এবং র্যাপিড এন্টিজেনের মাধ্যমে ৪৬০০ জন মোট ৫৩৫২ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে৷ তাতে, আরটি-পিসিআর ৫৮ জন এবং র্যাপিড এন্টিজেন-এ ২৪২ জনের দেহে করোনার সংক্রমণ মিলেছে৷ সব মিলিয়ে গত ২৪ ঘন্টায় মোট ৩০০ জন নতুন করোনা সংক্রামিতের খোঁজ পাওয়া গেছে৷
তবে, সামান্য স্বস্তির খবরও রয়েছে৷ গত ২৪ ঘন্টায় ১৪৯ জন করোনা সংক্রমণ থেকে মুক্তি পেয়েছে৷ তাতে, বর্তমানে করোনা আক্রান্ত সক্রিয় রোগী রয়েছেন ১৯৭৭ জন৷ প্রসঙ্গত, ত্রিপুরায় এখন পর্যন্ত ৩৬৫৩৪ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন৷ তাদের মধ্যে ৩৪০৯৫ জন করোনা সংক্রমণ থেকে মুক্তি পেয়ে সুস্থ হয়েছেন৷ বর্তমানে ত্রিপুরায় করোনা আক্রান্তের হার ৪.৯৮ শতাংশ৷ তেমনি, সুস্থতার হার ৯৩.৪৭ শতাংশ৷ এদিকে মৃতের হার ১.১০ শতাংশ৷ এখন পর্যন্ত ত্রিপুরায় ৪০১ জন করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন৷
স্বাস্থ্য দফতর সুত্রে খবর, ক্রমাগত পশ্চিম জেলা সংক্রমণে শীর্ষে থাকছে৷ গত ২৪ ঘন্টায় সংক্রমণ আবারও দেড় শতক-র কাছাকাছি পৌছে গেছে৷ নতুন করে পশ্চিম জেলায় গত ২৪ ঘন্টায় ১৪৪ জন, দক্ষিন জেলায় ১২ জন, গোমতি জেলায় ১৬ জন, ধলাই জেলায় ৩৪ জন, সিপাহীজলা জেলায় ২৪ জন, উত্তর ত্রিপুরা জেলায় ৩৭ জন, উনকোটি জেলায় ২৮ জন এবং খোয়াই জেলায় ৫ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন৷ তাতে, দেখা যাচ্ছে, প্রত্যেক জেলায় করোনার সংক্রমণ অতি দ্রুত গতিতে ছড়িয়ে পড়ছে৷