শহীদ সিআরপিএফ জওয়ানের মৃতদেহ এল রাজ্যে বিমান বন্দরে শ্রদ্ধা জানালেন মুখ্যমন্ত্রী ও সাংসদ প্রতিমা

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা/ তেলিয়ামুড়া, ২৭ মার্চ৷৷ শহীদ সিআরপিএফ জওয়ান মঙ্গরাম দেববর্মার মরদেহ আজ আগরতলায় এসে পৌঁছেছে৷ এমবিবি বিমান বন্দরে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানান মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব, সাংসদ প্রতিমা ভৌমিক সহ সিআরপিএফ- এর পদস্থ আধিকারিকরা৷ সেখান থেকে তাঁর মরদেহ তৈদু স্থিত দক্ষিণ সমতল পাড়া এলাকায় নিজ বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে৷ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সেখানেই তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়৷ জওয়ানের মরদেহ ত্রিপুরায় পৌছাতেই শোকের ছায়া আরও গভীর হয়েছে৷


এদিন সিআরপিএফ-এর আইজি বলেন, সাব-ইন্সপেক্টর মঙ্গরাম দেববর্মার শহীদ হওয়ার ঘটনায় সমবেদনা জানাচ্ছি৷ তিনি বলেন, মঙ্গরাম দেববর্মা ৭৩ নম্বর ব্যাটেলিয়ানে সাব-ইন্সপেক্টর পদে কর্মরত ছিলেন৷ গত বৃহস্পতিবার বিকেলে শ্রীনগরের লওয়াইপোরায় সিআরপিএফ জওয়ানদের একটি টহলদার দলকে হঠাৎ আক্রমণ করে জঙ্গিরা৷ তাদের বাধা দেওয়ার আগেই গুলিতে গুরুতর জখম হন জওয়ানরা৷ জওয়ানরা জাতীয় সড়কে চেকিং করছিলেন৷ তখনই জঙ্গিদের গুলিতে ঝাঁজরা হয়ে যান তিন জওয়ান৷ ওই ঘটনায় দুই জওয়ান শহীদ হন৷ তিনি জানান, ওই ঘটনার সাথে যুক্ত জঙ্গী সহযোগী-দের ইতিমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে৷ জঙ্গি-দের খুঁজে বের করা হবে৷


আজ শহীদ জওয়ানের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর পর সাংসদ প্রতিমা ভৌমিক বলেন, মাতৃভূমি এবং আমাদের রক্ষায় জীবন বলিদান দিয়েছেন সিআরপিএফ জওয়ান মঙ্গরাম দেববর্মা৷ তাঁকে নতমস্তকে প্রণাম জানাই৷ তাঁর পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই৷ তিনি বলেন, মৃত্যু বরাবরই দুঃখ বয়ে আনে৷ কিন্ত, মঙ্গরাম দেববর্মার বীরগতি প্রাপ্তি আমাদের গর্বিত করেছে৷ আমাদের রাজ্যের বীর সন্তান দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছেন, তাঁর অকৃত্তিম অবদান রাজ্য এবং গোটা দেশের কাছে চিরস্মরনীয় হয়ে থাকবে৷ সাথে তিনি যোগ করেন, শহীদ মঙ্গরাম স্ত্রীও একজন বীর যোদ্ধা৷ কারণ, তিনি সংসার ও সন্তান প্রতিপালনের গুরুদায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছেন এবং স্বামীকে সর্বদা সাহস যুগিয়েছেন৷ আজ নিজে স্বামীকে হারিয়ে কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছেন৷ তাই, তাঁর বীরত্বকেও আমি প্রণাম জানাই, বলেন তিনি৷ সাংসদ ভৌমিকের কথায়, আমাদের রাজ্যের ছেলেরাও দেশের সেবায় নিজেদের প্রানাহুতি দিচ্ছেন৷ রাজ্য থেকে আরও অনেক ছেলেমেয়ে সেনাবাহিনীতে যোগ দেবেন ওই প্রত্যাশা রাখেন তিনি৷

এদিন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব শহীদ জওয়ানের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে বলেন, অত্যন্ত হৃদয় বিদারক ঘটনা৷ বীর শহীদকে নতমস্তকে প্রণাম জানাই৷ তিনি বলেন, শহীদ জওয়ান মঙ্গরাম দেববর্মা স্ত্রী, দুই কন্যা ও এক পুত্র সন্তান রেখে গেছেন৷ তাদের প্রতি সমবেদনা জানাই৷ তিনি বলেন, দুঃখের সময় সমগ্র রাজ্য এবং গোটা দেশ তাঁদের পাশে রয়েছে৷ মুখ্যমন্ত্রী আজ শহীদের পরিবারকে ৫ লক্ষ টাকা আর্থিক সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দেন৷ সাথে তিনি বলেন, রাজ্য সরকার আরও কীভাবে তাদের সহায়তা দিতে পারে তা ভেবে দেখা হবে৷ সঠিকভাবে তাঁদের দৈনন্দিন জীবনযাপন-এ ত্রিপুরা সরকার সবর্োতভাবে পাশে দাড়াবে৷ কর্মরত অবস্থায় তাঁর মৃত্যুতে পরিবারের লোকজন কেন্দ্রীয় সরকার থেকে সমস্ত সুযোগ সুবিধা সময়মতো পাওয়ার জন্য-ও ত্রিপুরা সরকার পাশে থাকবে৷


মুখ্যমন্ত্রী এদিন বলেন, জঙ্গিদের এ-ধরনের ন্যাক্কারজনক কার্যকলাপ কোনভাবেই বরদাস্ত করা হবে না৷ রুখে দাঁড়ানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী অনেক আগেই বার্তা দিয়েছেন৷ তাই জওয়ানের রক্তের হিসেব নেওয়া হবে৷ তিনি ওই ঘটনায় তীব্র ভাষায় নিন্দা জানিয়েছেন৷
এদিকে, আজ শহীদ জওয়ান মঙ্গরাম দেববর্মা-র মরদেহ তেলিয়ামুড়া মহকুমায় সাত মাইল এলাকায় পৌঁছানোর পর স্থানীয় জনগণ এবং নিরাপত্তা বাহিনীর জওয়ানরা মিছিল করে তৈদু দক্ষিণ সমতল পাড়া এলাকায় নিয়ে গেছে৷ রাজ্য জুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে৷ আজ সাংবাদিকদের সাথে কথা বলার সময় সাংসদ প্রতিমা ভৌমিক-এ আবেগতাড়িত হয়ে পরেন৷ অনেক কষ্টে তিনি চোখের জল আটকে রেখেছেন, যা ক্যামেরায় ধরা পড়েছে৷
বীর শহীদ জওয়ানের নিথর দেহ কফিনবন্দি হয়ে শনিবার পৌঁছাল গোমতী জেলার তৈদু থানার অধীন রাম বাবু পাড়ার নিজ বাড়িতে৷ কফিন বন্দী নিথর দেহ এলাকায় পৌছতেই গোটা এলাকা জুড়ে কান্নার রোলে আকাশ বাতাস সর্বত্র ভারী হয়ে ওঠে৷


এলাকার যুবকরা বাইক রেলী করে বড়মুড়া থেকে প্রথমত নিয়ে আসে তেলিয়ামুড়া তে৷ সামনে তেলিয়ামুড়া মারুতি সিন্ডিকেটের সামনে বীর শহীদ জওয়ান মঙ্গরাম দেববর্মার নিথর দেহে ফুল-মালা দিয়ে শ্রদ্ধা জানান রাজ্য বিধানসভার মুখ্য সচেতক কল্যাণী রায়৷ পরে কফিনবন্দি দেহ তৈদু থানাধীন রামবাবু পাড়ায় শহীদ জওয়ানের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়৷ শহীদ জওয়ানের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা এবং শোকার্ত পরিবারবর্গ কে সমবেদনা জানানোর জন্য উপস্থিত ছিলেন রাজ্য বিধানসভার মুখ্য সচেতক কল্যাণী রায়, অম্পিনগর বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক সিন্ধু চন্দ্র দেববর্মা, আই.জি.পি ত্রিপুরা সেক্টর সি.আর.পি.এফ সৎপাল রাওয়াত, ১২৪ নং ব্যাটেলিয়ানের কমান্ডেন্ট রাজেশ যাদব, ডি .আই .জি. পি- সি.আর.পি.এফ মোহাম্মদ ইমরান মল্লিক,৭১ নং ব্যাটেলিয়ানের কমান্ডেন্ট এ.কে.ভারতী সহ বহু গুণমুগ্দ ব্যক্তিবর্গরা৷
সেখানে বীর শহীদ জওয়ান মঙ্গ রাম দেববর্মার প্রতি পুষ্প এবং পুষ্পস্তবক প্রদান করে এবং নিরাপত্তা বাহিনীর জওয়ানদের গার্ড অফ অনার এবং গান স্যালুট দিয়ে অন্তিম শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয়৷ পরে খ্রিস্টান ধর্ম মতে বীর শহীদ জাওয়ান মঙ্গ রাম দেববর্মার নিথর দেহ সমাধি করা হয়৷ মৃত্যুকালে বীর শহীদ জাওয়ান মঙ্গ রাম দেববর্মা রেখে যান দুই কন্যা, এক পুত্র, স্ত্রী সহ বহু গুণমুগ্দ আত্মীয়-পরিজনদের৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *