সবগুলি জেলাতেই আইনি পরিষেবার পরিকাঠামো গড়ে তোলার উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য সরকার : মুখ্যমন্ত্রী

আগরতলা, ২০ মার্চ (হি.স.)৷৷ ত্রিপুরায় বিচার ব্যবস্থার উন্নয়নে পরিকাঠামোগত বিকাশের উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে৷ এজন্য সরকার রাজ্যের সব জেলাতেই আইনি পরিষেবার পরিকাঠামো গড়ে তুলতে উদ্যোগী হয়েছে৷ আজ ত্রিপুরা হাইকোর্টের অডিটোরিয়ামে ত্রিপুরা হাইকোর্ট এবং ত্রিপুরা জুডিশিয়াল অ্যাকাডেমির যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত দুদিন ব্যাপী সপ্তম বার্ষিক জুডিশিয়াল কনক্ল্যাভের উদ্বোধনী সমারোহে এ-কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব৷


তিনি বলেন, ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত রাজ্য বাজেটে ত্রিপুরায় আইন বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলার প্রস্তাব রাখা হয়েছে৷ আইন বিশ্ববিদ্যালয় ত্রিপুরায় এক নতুন দিগন্ত খুলে দেবে এবং নতুন পরিচিতি আনবে৷ জাতীয় স্তরের ফ্যাকাল্টি তৈরির মাধ্যমে ত্রিপুরা আইন বিশ্ববিদ্যালয় আগামী দিনে উচ্চ শিখরে পৌঁছাবে বলে মুখ্যমন্ত্রী আশা ব্যক্ত করেন৷

মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের বিকাশের চিত্র তুলে ধরে বলেন, ত্রিপুরায় ইকো ট্যুরিজমের বিকাশের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে৷ ছবিমুড়া সহ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ পর্যটন কেন্দ্রগুলিকে আকর্ষণীয় করে বিশ্বের মানচিত্রে তুলে ধরতে রাজ্য সরকার ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে৷ রাজ্যের ৫৪টি চা- বাগানকে পর্যটনের ক্ষেত্র হিসেবে উন্নয়ন করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে৷ পর্যটন কেন্দ্রগুলিতে গড়ে তোলা হচ্ছে সুদৃশ্য লগহাট সহ অন্যান্য পরিকাঠামোগত সুবিধা৷ আয়তনের দিক থেকে ত্রিপুরা ছোট হলেও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর৷ পাশাপাশি রাজ্যের মানুষ অতিথিবৎসল হওয়ায় পর্যটনের যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে বলে মুখ্যমন্ত্রী উল্লেখ করেন৷


মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ইজ অব লিভিং সূচকের ক্ষেত্রে সম্প্রতি ভারত সরকারের ঘোষণা অনুসারে ১০ লক্ষ্যের নীচে জনসংখ্যার ৬২টি ছোট শহরের মধ্যে আগরতলা উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির মধ্যে প্রথম এবং দেশের মধ্যে ১১তম স্থানে রয়েছে৷ তিনি বলেন, রাজ্যের অর্থনৈতিক বুনিয়াদকে সুদৃঢ় করতে সরকার সচেষ্ট৷ উন্নয়নে প্রতি ক্ষেত্রেই ত্রিপুরা এখন দুততার সাথে এগিয়ে যাচ্ছে৷ রাজ্যের সার্বিক বিকাশে যে-সব প্যারামিটারের উন্নয়ন করা প্রয়োজন, সেই প্যারামিটার সমূহের উন্নয়নে কাজ করছে সরকার৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, করোনা অতিমারির মধ্যেও স্বচ্ছ এবং অনলাইন ব্যবস্থাপনার ফলে ত্রিপুরার রাজস্ব সংগ্রহ বৃদ্ধি পেয়েছে৷ বর্তমানে রাজ্যে ১৭৫টি অনলাইন পরিষেবা চালু করার পাশাপাশি ৩৬টি দফতরে অনলাইন ব্যবস্থা চালু রয়েছে৷ রাজ্যের কৃষি, কৃষি সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রের উন্নয়ন অর্থাৎ প্রাইমারি সেক্টরে প্রবৃদ্ধির হার পূর্বতন সরকারের আমলে যেখানে ৬.৪ শতাংশ ছিল বর্তমানে তা বেড়ে হয়েছে প্রায় ১৩.৯ শতাংশ৷ প্রাথমিক ক্ষেত্রের পাশাপাশি শিক্ষা ক্ষেত্রের উন্নয়নে সরকার বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে৷


মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ত্রিপুরা উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রবেশদ্বার হওয়ার জন্য এখন প্রস্তুত৷ বাংলাদেশ এবং ত্রিপুরার সীমান্তে ফেনী নদীর উপর নির্মিত মৈত্রী সেতু উদ্বোধনের ফলে ত্রিপুরা সহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির অর্থনীতিতেও এর প্রভাব পড়বে৷
তিনি বলেন, মৈত্রী সেতু নির্মিত হওয়ার ফলে সাব্রুম থেকে এখন চিটাগাঙ বন্দরের দূরত্ব মাত্র ৭০ কিলোমিটার৷ আগে হলদিয়া বন্দর থেকে ১,৬০০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে পণ্য সামগ্রী আসত৷ এখন চট্টগ্রাম বন্দর হয়ে পণ্য সামগ্রী পৌঁছায় ৬০০ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করে৷

এর ফলে পণ্য পরিবহণ ব্যয় অনেকটা কমেছে৷ বর্তমানে ত্রিপুরা-বাংলাদেশ সীমান্ত সাব্রুমে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, সুসংহত স্থলবন্দর, লজিস্টিক হাব, রেলওয়ে ইয়ার্ড সহ একাধিক পরিকাঠামো একই জায়গায় গড়ে তোলা হচ্ছে যা শিল্পর বিকাশে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ রাজ্যে শিল্পের বিকাশে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথাও মুখ্যমন্ত্রী তুলে ধরেন৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কোভিড-১৯ অতিমারি পরিস্থিতি আমাদের অনেক কিছু শিখিয়েছে৷ আত্মনির্ভর হয়ে ওঠার মানসিকতা গড়ে উঠেছে৷ যুব সম্প্রদায়ের মধ্যেই জব ক্রিয়েটর তৈরি হচ্ছে৷ তিনি বলেন, আত্মনির্ভর মানসিকতাই একটি রাজ্যকে স্বনির্ভর রাজ্য হিসেবে গড়ে তুলতে পারে৷ কোভিড-১৯ অতিমারি প্রতিরোধে সরকারের সদর্থক ভূমিকা গ্রহণ এবং কোভিড আক্রান্ত রোগীদের সুস্থতার হারে রাজ্যের উল্লেখযোগ্য সাফল্যের কথা উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যের বর্তমান স্বাস্থ্য পরিকাঠামো ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে এবং সময়োপযোগী পদক্ষেপের ফলে এই সাফল্য অর্জিত হয়েছে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *