আগরতলা, ১৯ মার্চ (হি. স.) : করোনা মোকাবিলা এবং ত্রিপুরা-র মানুষের প্রত্যাশা পূরণে কার্যকরী ভূমিকা-য় ত্রিপুরা সরকার রাজ্যপালের বাহবা কুড়িয়েছে৷ অবশ্য, করোনা মহামারী মোকাবিলায় অসাধারণ ভূমিকা এবং নয়া শিক্ষা নীতি প্রনয়ণের জন্য কেন্দ্র-রাজ্য উভয় সরকারের ভূয়সী প্রশংসা করলেন ত্রিপুরার রাজ্যপাল রমেশ বৈস৷ শুধু তাই নয়, করোনা মোকাবিলায় ত্রিপুরা সরকার-র আলাদাভাবে পিঠ চাপডেছেন তিনি৷
আজ ত্রিপুরা বিধানসভায় ইংরেজি বছরের প্রথম অধিবেশনে প্রথা মেনে ভাষণ দিয়েছেন তিনি৷ ওই ভাষণে কেন্দ্রীয় সরকার এবং ত্রিপুরা সরকারের বিভিন্ন কাজকর্মের জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপনের সাথে বাহবা দিয়েছেন ত্রিপুরার রাজ্যপাল৷ তাতে, বাদ যায়নি দীর্ঘ ২৩ বছর পুরনো ব্রু শরণার্থী সমস্যা সমাধানে কেন্দ্রীয় ও ত্রিপুরা সরকার-র আন্তরিক প্রচেষ্টা৷ তিনি দাবি করেন, ত্রিপুরা ক্রমশ উন্নতির দিকে এগিয়ে চলেছে৷ নানা প্রতিকুলতা কাটিয়ে উঠছে৷
আজ তিনি বলেন, জাতীয় শিক্ষা নীতি ২০২০ প্রনয়ণ করা হয়েছে৷ আমূল পরিবর্তনের লক্ষ্যে ভারতের নতুন শিক্ষা পদ্ধতির নকশা তৈরির উদ্দেশ্যে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা ২০২০ সালের ২৯ জুলাই ওই শিক্ষানীতির অনুমোদন দিয়েছে৷ তাঁর মতে, দেশের শিক্ষার উন্নয়নে পথ প্রদর্শন করার ক্ষেত্রে নয়া শিক্ষা নীতি একটি সুসংহত কাঠামো হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে৷ তাই, তিনি হৃদয়ের অন্তস্থল থেকে ভারত সরকার-কে ধন্যবাদ জানিয়েছেন৷
তিনি বলেন, গত এক বছরে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ভীষণ পরিবর্তন এসেছে৷ করোনা-র প্রকোপ সকলকে ভীষণভাবে প্রভাবিত করেছে৷ ওই রোগে আক্রান্ত হয়ে বহু মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন৷ ওই কঠিন সময়ে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের ভূমিকা নিঃসন্দেহে প্রসংসনীয়, তা অস্বীকার করার উপায় নেই৷ তিনি বলেন, সময় লকডাউন সহ গৃহীত বিভিন্ন সিদ্ধান্ত ভারত-কে বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় ভাল অবস্থায় থাকতে সহায়তা করেছে৷ তিনি করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সামনের সারির কর্মী এবং অন্যান্য সহযোগী ব্যক্তিদের নিষ্ঠা সহকারে জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন৷
রাজ্যপাল দাবি করেন, করোনা মোকাবিলায় ত্রিপুরা সরকার যথেষ্ট প্রসংশনীয় কাজ করেছে৷ ফলে, গত ৮ মার্চ পর্যন্ত ত্রিপুরায় করোনা আক্রান্তের গড় হিসাব ০.০৮ শতাংশ৷ শুধু তাই নয়, ত্রিপুরায় করোনা আক্রান্ত হয়ে অস্বাভাবিক মৃত্যুর হার হ্রাস পেয়েছে৷ তিনি বলেন, কোভিড-র নতুন ব্রিটেন প্রজাতি চিহ্ণিত করার জন্য একটি মেশিন ক্রয়ে ত্রিপুরা সরকার প্রয়াস নিয়েছে৷
এদিন তিনি তিনটি কৃষি বিল-এ রাষ্ট্রপতির সম্মতি-র জন্য সন্তষ্টি প্রকাশ করেছেন৷ তাঁর মতে, পরিকাঠামো উন্নয়ন এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে কৃষি পণ্য সরবরাহে বেসরকারী বিনিয়োগ-কে আরও উতাহিত করার মধ্য দিয়ে তিনটি বিলে সংস্কার কৃষি ক্ষেত্রে বৃদ্ধির হার আরও ত্বরান্বিত করবে৷
রাজ্যপাল-র কথায়, ত্রিপুরা সরকার সর্বক্ষেত্রে প্রশংসার কাজ করেছে৷ কৃষক কল্যাণ, উদ্যান চর্চা ও বাগিচা ফসল উতাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে আত্মনির্ভর করে তোলা, বিশ্বের সবচেয়ে বৃহত স্বাস্থ্য সেবা প্রকল্প আয়ুষ্মান ভারত-প্রধানমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনার সফল বাস্তবায়ন, মডেল স্টেট-র স্বপ্ণ পূরণে শিক্ষার গুনগত মান বৃদ্ধি, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য উন্নতি, শিল্প ও বানিজ্যের বিভিন্ন সুযোগ সম্প্রসারণ-র মাধ্যমে ত্রিপুরা এগিয়ে চলেছে৷
রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা প্রসঙ্গ তুলে তিনি যোগ করেন, বেড়েছে সাজার হার, কমেছে অপরাধ৷ তিনি বলেন, দুর্বল অংশের মানুষের আয়ের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে৷ বেড়েছে মাথা পিছু আয়৷ ফলে, রাজ্যের নির্দিষ্ট চাহিদার উপর ভিত্তি করে স্থায়ী উন্নয়নে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে ত্রিপুরা সরকার৷ তাঁর কথায়, দীর্ঘ ২৩ বছরের ব্রু শরণার্থী সমস্যা-র স্থায়ী সমাধান হয়েছে৷ ৩৭১৩৭ ব্রু শরণার্থী-কে ত্রিপুরায় পুনর্বাসন দেওয়া হবে৷ এই সমস্যা সমাধানে তিনি কেন্দ্রীয় সরকার ও ত্রিপুরা সরকার-কে কুর্নিশ জানিয়েছেন৷
এদিন তিনি দৃঢ়তার সাথে বলেন, ত্রিপুরা সরকার-র কাছে রাজ্যের সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা অনেক বেশি এবং তা যুক্তি সংগতও৷ তবে আমি নিশ্চিত, মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব-র সক্রিয় নেতৃত্বে ত্রিপুরা সরকার জনগণের প্রত্যাশা পূরণে কার্যকরী ভূমিকা গ্রহণ করবে৷ সাথে তিনি যোগ করেন, ওই উদ্যোগ ত্রিপুরা-কে একটি স্বপ্ণের মডেল রাজ্যে রুপান্তরিত করবে৷