আগরতলা, ৯ মার্চ (হি.স.) : মৈত্রী সেতু ভারত ও বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিরাট অবদান রাখবে৷ আজ মঙ্গলবার ত্রিপুরা সরকারের তিন বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে আগরতলায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে মৈত্রী সেতু উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ভিডিও বার্তায় এ-কথা বলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ সাথে তিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের জনগণকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য ত্রিপুরার প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেছেন৷
তিনি বলেন, আমরা ভুলিনি, ১৯৭১ সালে কীভাবে আমার জনগণকে আপনারা আশ্রয় দিয়েছিলেন, সমর্থন দিয়েছিলেন, সহযোগিতা করেছিলেন এবং আমরা আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছিলাম৷
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হাসিনার মতে, এই সেতু ভারত ও বাংলাদেশের মধযে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিরাট অবদান রাখবে৷ তাঁর কথায়, শুধু চট্টগ্রাম পোর্ট নয়, ত্রিপুরাবাসী চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরও ব্যবহার করতে পারবেন৷ মৈত্রী সেতু ভারতের পাশাপাশি নেপাল, ভুটানের সঙ্গেও বাংলাদেশের বাণিজ্যকে আরও সহজ করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন৷
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১০ সালে ত্রিপুরার তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী ফেনী নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণ করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন৷ তিনি বলেছিলেন, চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করতে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ব্যবসায়ীদের জন্য এই সেতুটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ ওই অনুরোধ আমরা ইতিবাচকভাবে বিবেচনা করেছি৷ তার পর থেকে বাংলাদেশ সরকার ভারতকে সেতু নির্মাণে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করে আসছে৷ তিনি বলেন, ওই সেতু নির্মাণে ১০ বছর সময় লেগেছে৷ এখন এই সেতু উত্তর-পূর্ব ভারতের জন্য একটি বাণিজ্য লাইফলাইন হবে৷ তিনি সকলের অবগতির জন্য বলেন, পণ্য পরিবহণে ইতিমধ্যে বাংলাদেশ ভারতকে চট্টগ্রাম ও মংলাবন্দর ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে৷
তাঁর মতে, মৈত্রী সেতু চালুর মধ্যে দিয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন রাজ্য বাংলাদেশের মধ্যে দিয়ে পণ্য পরিবহণ করতে পারবে৷ তিনি বলেন, আগে ১৬০০ কিলোমিটার দূরে আগরতলার নিকটতম সমুদ্রবন্দর ছিল কলকাতা৷ বর্তমানে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে আগরতলার নিকটতম সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রাম বন্দরের দূরত্ব ১০০ কিলোমিটারেরও কম হবে৷
এদিন শেখ হাসিনা বলেন, আজ এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত৷ ভারতোর সাথে বাংলাদেশের সংযোগ স্থাপনের মধ্যে দিয়ে এক নতুন যুগের সৃষ্টি হয়েছে৷ তাঁর কথায়, আমরা এমন একটি অঞ্চলে বসবাস করছি যেখানে সংযোগ স্থাপনে সকলেই রক্ষণশীল ছিল এবং যেখানে সম্ভাবনার চেয়ে আন্তঃআঞ্চলিক বাণিজ্য অনেক কম৷ তিনি বিশ্বাস করেন, রাজনৈতিক সীমাবদ্ধতাগুলো ব্যবসার ক্ষেত্রে বাধা হওয়া উচিত নয়৷ সাথে তিনি যোগ করেন, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের আন্তঃসীমান্ত পরিবহণ ব্যবস্থার উন্নয়ন একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ এবং এটি আঞ্চলিক ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়াতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে৷
প্রধানমন্ত্রীর দাবি, মৈত্রী সেতু ত্রিপুরা এবং ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোর জনগণের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নতি করবে৷ পাশাপাশি, মৈত্রী সেতুর আশপাশের এলাকায় বসবাসরত বাংলাদেশিদের জীবন-জীবিকার উন্নতিতেও অবদান রাখবে৷ তিনি বলেন, আমরা মৈত্রী সেতু এমন এক সময় উদ্বোধন করছি, যখন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং বাংলাদেশ-ভারত কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ তম বর্ষ উদযাপন হচ্ছে৷ তাঁর কথায়, ৫০ বছর আগে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা সংগ্রামকে সমর্থন জানিয়ে ভারত বাংলাদেশের জন্য তাদের সীমান্ত খুলে দিয়েছিল, আজ আমরা একসঙ্গে সমৃদ্ধ অঞ্চল তৈরি করছি৷
শেখ হাসিনা ত্রিপুরাবাসীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, আমরা ভুলিনি, ১৯৭১ সালে কীভাবে আমার জনগণকে আপনারা আশ্রয় দিয়েছিলেন, সমর্থন দিয়েছিলেন, সহযোগিতা করেছিলেন এবং আমরা আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছিলাম৷ কাজেই আজকের দিনে আমি সবাইকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি৷ তিনি মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেবকেও আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়েছেন৷