নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৩ মার্চ৷৷ রাজ্যে অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা দিনদিন বেড়েই চলেছে৷ একদিনে রাজ্যের তিনটি জায়গায় তিনজনের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা রিতিমতো চাঞ্চলের সৃষ্টি হয়েছে৷ পুলিশ প্রতিটি ঘটনারই অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে৷ অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা বৃদ্ধি পাওয়ায় তথ্যাভিজ্ঞ মহল গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে৷
লেফুঙ্গা থানা এলাকার লক্ষ্মী পাড়া এলাকার বাসিন্দা সোনাই দাস বিষপানে আত্মহত্যা করেছে৷ সে পেশায় একজন নির্মাণ শ্রমিক৷নির্মাণ শ্রমিকের বিষপানে আত্মহত্যার সংবাদ ছড়িয়ে পড়তেই লেফুঙ্গা থানার লক্ষ্মী পাড়া সহ পার্শবর্তী এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে৷ জানা গেছে সোনাই দাস নামে ওই নির্মাণ শ্রমিক আদর্শ কলোনির বাসিন্দা পায়েল দেব তার বাড়িতে নির্মাণকাজ করত৷ গত ২৪ ফেব্রুয়ারি সোনাই দাস পায়েল দেব গুপ্তার বাড়িতে টাকা আনতে যায়৷
কিন্তু বাড়ির মালিক তাকে টাকা দিতে অস্বীকার করে৷ বিষয়টি নিয়ে বাড়ির মালিকের সঙ্গে নির্মাণশ্রমিকের বাকবিতণ্ডা হয়৷ওই মহিলা ও পার্শবর্তী কিছু লোকজন তাকে ডেকে নিয়ে মারধর করে বলে অভিযোগ৷ কাজ করে টাকা চাইতে গিয়ে আক্রান্ত হওয়ায় নির্মাণ শ্রমিক সোনাই দাস অপমানিত বোধ করে৷ বাড়িতে ফিরে এসে অপমান সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যার চেষ্টা করে নির্মাণ শ্রমিক সোনাই দাস৷পরিবারের লোকজন তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান৷চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার রাতে তার জিবি হাসপাতালে মৃত্যু হয়৷ মৃতের ভাই জানান পায়েল দেব গুপ্তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করবেন৷ নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যুর সংবাদ ছড়িয়ে পড়তেই অন্যান্য নির্মাণশ্রমিকের মধ্যেও শোকের ছায়া নেমে আসে৷
এদিকে, অভাব-অনটনের কারণে আত্মহত্যা করেছে এক ব্যক্তি৷ তার নাম বেনু লাল দাস৷ বাড়ি মধুপুর থানা এলাকার মাখন সরদারপাড়া৷অভাব-অনটন ও পারিবারিক কলহের জেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নিল এক ব্যক্তি৷ তার নাম বেনু লাল দাস৷ বয়স আনুমানিক ৫২ বছর৷ স্ত্রী পুত্র সবাই আছে৷ উপার্জনশীল পুত্র বৃদ্ধ পিতা-মাতার কোন খোঁজ খবর নেয় না৷ এই বয়সেও দিনমজুরি করে সংসার চালাতে হয় বেনু লাল দাসের৷ আর্থিক অনটনের কারণে পরিবারে প্রায়ই ঝগড়াঝাঁটি লেগেই থাকত৷
মঙ্গলবার সকাল বেনু লাল দাস নামে ওই ব্যক্তির উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান৷ কাজ সেরে বেলা ৩ টার মধ্যেই বাড়িতে ফিরে আসেন৷ কাছ থেকে বাড়িতে ফিরে এসে আকন্ঠ মদ্যপান করে ওই ব্যক্তি৷ পরিবারের লোকজনদের অলক্ষ্যে ফাঁসিতে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন বেনুলাল দাস৷ ঝুলন্ত দেহ টি দেখতে পেয়ে পরিবারের লোকজন চিৎকার শুরু করেন৷ চিৎকার শুনে প্রতিবেশীরা ছুটে আসেন৷ খবর পাঠানো হয় মধুপুর থানার পুলিশকে৷ খবর পেয়ে মধুপুর থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে ছুটে এসে ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতাল মর্গে পাঠায়৷ বুধবার দুপুর নাগাদ ময়নাতদন্তের পরমৃতদেহটি পরিবারের লোকজনদের হাতে তুলে দেওয়া হয়৷ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে৷
অন্যদিকে, ধলাই জেলার আমবাসা থানা এলাকার জহর নগরে জেলাশাসক অফিস সংলগ্ণ জঙ্গলে ফাঁসিতে আত্মহত্যা করেছে এক ব্যক্তি৷ তার নাম অভিজিৎ দেববর্মা৷শ্বশুর বাড়িতে থাকতো নিখোঁজ অভিজিৎ দেববর্মা নাম এক ব্যক্তি৷ তার বাড়ি সালেমা থানা এলাকার মেহেন্দি গ্রামে৷ শ্বশুর বাড়ি থেকেই গত চার দিন ধরে নিখোঁজ ছিলেন অভিজিৎ দেববর্মা৷ চার দিন নিখোঁজ থাকার পর বুধবার তার ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে আমবাসা জেলাশাসক অফিস এলাকায়৷
ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় তীব্র চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে৷ এটি আত্মহত্যা না খুন তা নিয়ে জনমনে নানা কৌতুহলের সৃষ্টি হয়েছে৷ঘটনার খবর পেয়ে আমবাসা থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে ছুটে এসে ঝুলন্ত মৃতদেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে৷পুলিশ প্রাথমিকভাবে অস্বাভাবিক মৃত্যুর জনিত একটি মামলা গ্রহণ করে এ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে৷ প্রাথমিকভাবে আশঙ্কা করা হচ্ছে পারিবারিক কলহের জেরে এই ঘটনা সংঘটিত হয়েছে৷ পুলিশ জানিয়েছে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পরই জানা যাবে এটি আত্মহত্যা না খুন৷