হীরা প্লাস উন্নয়নের দিকে এগিয়ে গেছে ত্রিপুরা : মুখ্যমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৯ ফেব্রুয়ারি৷৷ ‘সবকা সাথ সবকা বিকাশ, সবকা বিশ্বাস’ এটাই বর্তমান সরকারের কাজের মূলমন্ত্র৷ একে পাথেয় করে বর্তমান সরকার রাজ্যের সব অংশের সব জনগোষ্ঠীর মানুষের সামগ্রিক উন্নয়নে কাজ করছে৷ উন্নয়নমূলক কাজের এই ধারাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমাদের পরস্পরের মধ্যে হৃদ্যতা ও একতা বজায় রাখা প্রয়োজন৷ প্রয়োজন শান্তি ও সম্পীতির পরিবেশ বজায় রাখা৷ শান্তি ও সম্পীতির পরিবেশ বজায় রাখার দায়িত্ব আমাদের সকলের৷ আজ উত্তর ত্রিপুরা জেলার জম্পইহিল ব্লকের ভাঙ্মুন এডিসি ভিলেজে কৃষক জ্ঞান কেন্দ্রের দ্বারোদঘাটন করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব৷ এদিন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব ভার্চুয়াল মাধ্যমে জম্পইহিলের ফুলডাংসাই-এ ’জোডাই’ টুরিষ্ট লজেরও আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন৷ এদিনের অনুষ্ঠানের শুরুতেই মুখ্যমন্ত্রী ভাঙ্মুনে কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তরের উদ্যোগে নবনির্মিত ‘কৃষক জ্ঞান কেন্দ্রের’ উদ্বোধন করেন৷


এই উপলক্ষে ভাঙ্মুন ফুটবল মাঠে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা সকলেই ভারতবাসী৷ এটাই আমাদের প্রধান পরিচয়৷ এর পরের পরিচয় আমরা ত্রিপুরাবাসী৷ আমরা সকলেই সমান৷ আর অন্য কোন পরিচয় যেন আমাদের মধ্যে পার্থক্য তৈরি করতে না পারে সেদিকে আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে৷ বিভেদ ভুলে শান্তি ও সম্পীতির পরিবেশ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২০১৪ সালে দেশের দায়িত্ব নেওয়ার পর স্বচ্ছ ভারত গড়ার লক্ষ্যে ’স্বচ্ছ ভারত মিশন’ কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন৷ ভাঙ্মুন ইতিমধ্যেই স্বচ্ছতম হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছে৷ এজন্য তিনি ভাঙ্মুনবাসীকে ধন্যবাদ জানান৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, স্বচ্ছ ভাঙ্মুনের সাথে সাথে উন্নত ভাঙ্মুন গড়ে তুলতে এলাকাবাসীকে এগিয়ে আসাতে হবে৷ তিনি বলেন, ইতিমধ্যে ভাঙ্মুন-শিমলুঙ জাতীয় সড়ক-এ ১৯.০২ কিমি এর টেণ্ডার প্রক্রিয়া চলছে৷ এ সড়কটির প্রকল্পে ব্যয় হবে ৩০৯ কোটি ৪৩ লক্ষ টাকা৷


মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এই এলাকার সড়ক নির্মাণের ক্ষেত্রে এটি একটি উল্লেখযোগ্য বড় প্রকল্প৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির স্বপ ত্রিপুরার প্রতিটি প্রান্তের উন্নয়ন ঘটিয়ে ত্রিপুরাকে হীরা বানানো৷ ইতিমধ্যেই ত্রিপুরা হীরা প্লাস উন্নয়নের দিকে এগিয়ে গেছে৷ সাব্রুমে স্পেশাল ইকোনমিক জোন, ইনটিগ্রেটেড চেকপোস্ট, লজিস্টিক হাব, মৈত্রী সেতু তৈরি করার কাজ চলছে৷ মৈত্রী সেতুকে ব্যবহার করে চট্টগ্রাম বন্দরের সুুবিধা পাবে ত্রিপুরাবাসী৷ এই সুুবিধা ভাঙ্মুনবাসীও যাতে পেতে পারে এইজন্যই এখানে পৌঁছানোর জন্য সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে৷ এছাড়াও মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ২০২১-২২ অর্থবছরে জম্পইহিল ব্লকের অন্তর্গত বিভিন্ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলিকে হেলথ এণ্ড ওয়েলনেস সেন্টারে উন্নীত করা হবে এবং ৯টি বাড়তি স্বাস্থ্য পরিষেবা এই হেলথ এণ্ড ওয়েলনেস সেন্টারগুলি থেকে দেওয়া হবে৷ এছাড়াও মুখ্যমন্ত্রী জানান, জম্পইহিল সহ পুরো পেঁচারথল বিধানসভা এলাকায় গত ৩২ মাসে ৪৫৮ কোটি ৩৬ লক্ষাধিক টাকা বিভিন্ন প্রকল্পে ব্যয় করেছে বর্তমান সরকার৷


অনুষ্ঠানে কৃষি ও কৃষক দপ্তরের মন্ত্রী প্রণজিৎ সিংহ রায় বলেন, রাজ্যের কৃষি ও পর্যটন ক্ষেত্রের বিকাশে বিভিন্ন পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করছে বর্তমান সরকার৷ তিনি বলেন, রাজ্যের পর্যটন ক্ষেত্রকে দেশ-বিদেশে পরিচিতি দেওয়ার ক্ষেত্রে অন্যতম ভূমিকা নিচ্ছে জম্পইহিল৷ এখানকার সৌন্দর্য ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার জন্য পর্যটন মন্ত্রী স্থানীয় এলাকাবাসীকে ধন্যবাদ জানান৷
অনুষ্ঠানে প্রাণী সম্পদ বিকাশ দপ্তরের মন্ত্রী সান্তনা চাকমা বলেন, বর্তমান সরকার জনমুখী সরকার৷ তিনি বলেন, কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের সুুবিধাগুলি প্রত্যন্ত অঞ্চলের জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে৷ অনুষ্ঠানে এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বিধায়ক ভগবান চন্দ্র দাস, মুখ্যমন্ত্রীর প্রধান সচিব জে কে সিনহা, ক’ষি দপ্তরের সচিব চন্দ্র কুমার জমাতিয়া, পর্যটন দপ্তরের অধিকর্তা রাভাল হেমেন্দ্র কুমার, উত্তর ত্রিপুরা জেলার উচ্চপদস্থ আধিকারিকগণ৷ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জম্পইহিল বিএসি’র চেয়ারম্যান বিয়াকচুঙ্গনুঙ্গা৷ উল্লেখ্য, এদিন দ্বারোদঘাটন করা ভাঙ্মুনে নবনির্মিত কৃষক জ্ঞান কেন্দ্রটি নির্মাণ করতে ব্যয় হয়েছে ৪৫ লক্ষ ২৩২ হাজার ৩৬৯ টাকা৷ ফুলডাংসাই-এ নবনির্মিত টুরিস্ট লজের নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ২ কোটি ৪৫ লক্ষ টাকা৷