আগরতলা, ২১ ডিসেম্বর (হি.স.)৷৷ অতীতে ব্যবসায়ী না হলেও উপরতলার নির্দেশে ঋণ দিতে হয়েছে৷ ত্রিপুরা গ্রামীণ ব্যাঙ্কের এনপিএ-র হার নিয়ে এই সুরেই কটাক্ষ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব৷ তবে, বর্তমান সরকার সেই পথে কখনও হাঁটবে না, দৃঢ়তার সাথে বলেন তিনি৷
রাজ্যের অর্থনৈতিক বিকাশে ব্যাঙ্কের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে৷ এজন্য সরকারের পরিকল্পনার সাথে সমন্বয় রেখে ব্যাঙ্কগুলিকে রাজ্যের উন্নয়নে এগিয়ে আসতে হবে৷ সোমবার আগরতলার রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনের ১ নম্বর হল-এ ত্রিপুরা গ্রামীণ ব্যাঙ্কের ৪৫ তম প্রতিষ্ঠা দিবস উদযাপন উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠিত মেগা ঋণ প্রদান শিবিরের উদ্বোধন করে এ-কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব৷ তিনি বলেন, রাজ্যের অর্থনৈতিক বিকাশে সরকার কৃষি ও কৃষি সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্র, অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র, মাঝারি শিল্পগুলির উপর সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছে৷ ত্রিপুরা গ্রামীণ ব্যাঙ্ক সরকারের এই অগ্রাধিকারের ক্ষেত্রগুলিতে বিনিয়োগ করার জন্য স্ব-উদ্যোগীদের ঋণ প্রদানের মাধ্যমে উৎসাহিত করে তাদের স্বাবলম্বী হয়ে উঠতে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবে বলে তিনি আশা ব্যক্ত করেন৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, পূর্বে জমির কাগজপত্র না থাকার কারণে বর্গাদার কৃষকগণ ঋণের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হতো৷ কিন্তু বর্তমানে এই ব্যবস্থাপনার সরলীকরণ করে বর্গাদার কৃষকদের ঋণের সুবিধার আওতায় আনতে মুখ্যমন্ত্রী বর্গাদার এবং ভূমিহীন কৃষক প্রকল্প চালু করেছে ত্রিপুরা সরকার৷ এই প্রকল্পে ত্রিপুরা গ্রামীণ ব্যাঙ্ক নাবার্ডের সহায়তায় এ পর্যন্ত ৮,৩৫০ জন ভূমিহীন বর্গাদার কৃষকদের ২০ কোটি ৩৩ লক্ষ টাকা ঋণ প্রদান করেছে৷ পাশাপাশি এই প্রকল্পের আওতাধীন সুবিধাভোগীদের ঋণ প্রদানের পাশাপাশি তাদের বিমার আওতায় আনার বিষয়টি সুনিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি৷
মুখ্যমন্ত্রী ত্রিপুরার গ্রামীণ ব্যাঙ্কের আমানত অর্থ এবং ঋণ প্রদানের মধ্যে যে ব্যবধান রয়েছে তা কমিয়ে আনার পরামর্শ দিয়েছেন৷ তিনি বলেন, ত্রিপুরা গ্রামীণ ব্যাঙ্কের এনপিএ রেট ৮.৪৫ শতাংশ৷ তাঁর কটাক্ষ, অতীতে ব্যবসায়ী না হলেও উপরতলার নির্দেশে ঋণ দিতে হয়েছে৷ কিন্তু, বর্তমান সরকার সেই পথে কখনও হাঁটবে না৷ এক্ষেত্রে ব্যাঙ্কে আমানত অর্থরাশির পরিপ্রেক্ষিতে ঋণ প্রদান বাড়ানোর উপর গুরুত্বারোপ করেন৷ অনুষ্ঠানে বক্তব্য পেশ করতে গিয়ে তিনি রাজ্যে কৃষি, এমএসএমই সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রদত্ত ঋণের পরিসংখ্যান তুলে ধরে সংশ্লিষ্ট শিল্প ক্ষেত্রগুলিকে যথাযথ মূল্যায়ন সাপেক্ষে ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে প্রয়োজনীয় সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নেওয়ার জন্য ত্রিপুরা গ্রামীণ ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন৷ পাশাপাশি তিনি ঋণ প্রদানের পর নিয়মিত পর্যবেক্ষণের উপরও গুরুত্ব আরোপ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী৷
মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, প্রধানমন্ত্রীর ভোকাল ফর লোকাল-এর আহ্বানে সাড়া দিয়ে রাজ্যে উৎপাদিত পণ্য সামগ্রীর বাজারজাতকরণের উপর গুরুত্ব দিয়েছে ত্রিপুরা সরকার৷ এ প্রসঙ্গে তিনি দেশে-বিদেশে রাজ্যে তৈরি বাঁশের বোতলের চাহিদার কথা তুলে ধরেন৷ তিনি বলেন, এই বাঁশের বোতল আগামীদিনে দেশে-বিদেশে ত্রিপুরার পরিচিতি বাড়াতে অগ্রণী ভূমিকা নেবে৷ এজন্য ত্রিপুরা গ্রামীণ ব্যাঙ্ক এবং নাবার্ড-কে এই শিল্পের উন্নয়ন এবং প্রসারে এগিয়ে আসার পরামর্শ দেন তিনি৷ পাশাপাশি তিনি রাজ্যের ধূপকাঠি শিল্পের প্রসারেও এই শিল্পের সঙ্গে জড়িতদের উৎসাহিত করে প্রয়োজনীয় সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন৷

