চিকিৎসক-রোগীর পরিবারের বাকবিতণ্ডা ক্ষুব্ধ উভয় পক্ষ অসন্তুষ্ট এটিজিডিএ

আগরতলা, ৪ ডিসেম্বর (হি.স.)৷৷ ত্রিপুরায় হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক নিগ্রহ হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে৷ এমন-কি থানায় মামলাও হয়েছে৷ কিন্তু, ওই ঘটনাকে ঘিরে চিকিৎসক এবং রোগীর পরিবার উভয় মহলে ক্ষোভ বিরাজ করছে৷ পুলিশ জানিয়েছে, রোগীর চিকিৎসা নিয়ে চিকিৎসকের সাথে কথা কাটাকাটির ঘটনা ঘটেছে৷ তবে, মারধর কিংবা নিগ্রহের কোনও প্রমাণ প্রাথমিক তদন্তে পাওয়া যায়নি৷ এদিকে, ওই ঘটনায় প্রচণ্ড ক্ষোভ প্রকাশ করেছে সারা ত্রিপুরা সরকারি চিকিৎসক অ্যাসোসিয়েশন (এটিজিডিএ)৷ সংগঠন ফেসবুক বার্তায় কটাক্ষের সুরে বলেছে, চিকিৎসকদের সুরক্ষার দায় নিজেদেরই নিতে হবে৷ তা সম্ভব না হলে সরকারি চাকরি ছেড়ে দিন৷


প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার রাতে খোয়াই জেলা হাসপাতালে রোগীর চিকিৎসা নিয়ে গাফিলতি এবং অমানবিক আচরণের অভিযোগ এনে তুলকালাম কাণ্ড ঘটেছে৷ ডা. তমাল সরকারকে রোগীর পরিবারের সদস্যরা নিগ্রহ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে৷ এ-বিষয়ে খোয়াই জেলা হাসপাতাল সুপারিনটেনডেন্ট ডা. ধনঞ্জয় রিয়াং জানিয়েছেন, গতকাল রাতে হাসপাতালে রোগীর আত্মীয়রা চিকিৎসক, স্বাস্থ্য কর্মী এবং নিরাপত্তা রক্ষীকে মারধর করেছে৷ ওই ঘটনায় আজ থানায় মামলা করা হয়েছে৷ তিনি বলেন, রোগীর আত্মীয়রা চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্য কর্মীদের নিগ্রহ করেই থেমে থাকেননি৷ তারা যাওয়ার সময় হাসপাতাল থেকে দুটি অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে গেছে৷


তবে, ওই ঘটনা সম্পর্কে পুলিশের বক্তব্য ভিন্ন৷ খোয়াই মহকুমা পুলিশ আধিকারিক শঙ্কর দাস জানিয়েছেন, গতকাল রাতে হাসপাতালে ঘটনার খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ ছুটে গিয়েছে৷ সাব-ইন্সপেক্টর সমরেশ চাকমা ঘটনার প্রাথমিক তদন্ত করেছেন৷ তিনি বলেন, গতকাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং চিকিৎসক কেউই মামলার পথে হাঁটেননি৷ তাঁর বক্তব্য, প্রাথমিক তদন্তে ওঠে এসেছে, গতকাল রাতে গুরুতর অসুস্থ রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে তাঁর চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয়ে ডা. তমাল সরকারের সাথে রোগীর পরিবারের সদস্যদের বাকবিতণ্ডা হয়েছে৷ কিন্তু, নিগ্রহ কিংবা মারধরের কোনও ঘটনা ঘটেছে বলে এখনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি৷ সাথে তিনি যোগ করেন, হাসপাতাল থেকে অক্সিজেন সিলিন্ডার চুরির বিষয়টিও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে৷ কারণ, প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, হাসপাতাল থেকে সিলিন্ডার ভাড়া নেওয়ার আবেদন করা হয়েছিল৷ তবে, ওই আবেদনের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে কিনা তার তদন্ত করে দেখা হবে৷


মহকুমা পুলিশ আধিকারিকের কথায়, গতকাল হাসপাতাল থেকে কোনও মামলা করা না হলেও আজ দুপুরে গতকালের ঘটনাকে ঘিরে একটি মামলা হয়েছে৷ সাথে সিলিন্ডার চুরির বিষয়টিও উল্লেখ রয়েছে৷ রোগীর পরিবারের অভিযোগ, চিকিৎসক সঠিক সময়ে চিকিৎসা করতে রাজি হলে রোগীর মৃত্যু হতো না৷ চিকিৎসকের গাফিলতিতেই রোগীর মৃত্যু হয়েছে৷ তাদের আরও অভিযোগ, চিকিৎসা দেওয়ার বদলে আমাদের সাথে ডা. তমাল সরকার দুর্ব্যবহার করেছেন৷ তাতে কিছুটা বাকবিতণ্ডা হয়েছে৷ স্থানীয় সূত্রের খবর, ডা. তমাল সরকার প্রায় সময় রোগীর পরিবারের সাথে দুর্ব্যবহার করেন৷ চিকিৎসায় গাফিলতি ছাড়াও তাঁর বিরুদ্ধে বহু অভিযোগ রয়েছে৷


এদিকে, ওই ঘটনায় প্রচণ্ড ক্ষোভ প্রকাশ করেছে সারা ত্রিপুরা সরকারি চিকিৎসক অ্যাসোসিয়েশন (এটিজিডিএ)৷ সংগঠন এক ফেসবুক বার্তায় বলেছে, কিছুদিন পরপর চিকিৎসক নিগ্রহের ঘটনা ত্রিপুরায় ঘটছে৷ এটিজিডিএ-র বক্তব্য, সারা ত্রিপুরায় বিভিন্ন হাসপাতালে কিছুদিন পর পর কিছু দুষৃকতী যেভাবে ডাক্তার ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীদের উপর হামলা-হুজ্জতি করছে, তা যদি সরকার এবং প্রশাসন উপেক্ষার দৃষ্টিতে দেখে থাকে, তবে তার প্রবণতা দিন দিন বাড়তেই থাকবে৷ স্বাস্থ্যকর্মীগণ যদি কর্মক্ষেত্রে নিরাপদ বোধ না করেন, নিশ্চিন্তে রোগীদের সেবা করতে না পারেন, তবে বড় বড় টাইলস বসানো সুদৃশ্য হাসপাতাল, উন্নত যন্ত্রপাতি, উন্নত মেডিসিন, আর বড় বড় ভাষণ জনগণের স্বাস্থ্যপরিষেবার উন্নতি ঘটাতে পারবে না৷ প্রচণ্ড ক্ষোভের সুরে সমস্ত চিকিৎসকদের প্রতি সংগঠনের বার্তা, সরকারি হাসপাতালে কাজ করার সময় মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকবেন, যে-কোনও সময় যে কেউ এসে কারণে-অকারণে আপনাকে চড়-থাপ্পর-কিল-ঘুসি দিতে পারে৷ যদি তা মেনে নিয়ে মুখ বুঝে অপমান সহ্য করে কাজ করতে রাজি থাকেন তবেই সরকারি চাকরি করবেন৷ এটিজিডিএ-র সাফ কথা, চিকিৎসকদের সুরক্ষার দায় নিজেদেরই নিতে হবে৷ তা সম্ভব না হলে সরকারি চাকরি ছেড়ে দিন৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *