মহিলাকে ধাক্কা, গণপিটুনিতে মৃত্যু বাইসাইকেল চালকের ,মৃতদেহ নিয়ে রাস্তা অবরোধ

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৪ অক্টোবর৷৷ বাই-সাইকেলের ধাক্কায় জনৈক মহিলা এবং তাঁর কোলের শিশুর আঘাত পাওয়ার ঘটনায় বাই-সাইকেল চালকের গণপিটুনিতে মৃত্যু হয়েছে বুধবার৷ মৃতদেহ নিয়ে পরিবারের সদস্যরা রাস্তা অবরোধ করেছেন৷ জনরোষে বড়জলা এলাকায় উত্তেজনা দেখা দিয়েছে৷


বড়জলা টিআরটিসি এলাকার বাসিন্দা পেশায় দিনমজুর অরুণ কুমার দাস (৪৫) গণপিটুনিতে গুরুতর আক্রান্ত হওয়ার পর আজ মারা গেছেন৷ তাঁর পরিবারে স্ত্রী, এক ছেলে, এক মেয়ে, বৃদ্ধ মা ও এক ভাই রয়েছেন৷ গত শনিবার বাই-সাইকেলে বাড়ি ফেরার সময় এক মহিলাকে ধাক্কা দেন তিনি৷ তাতে তার কোলের শিশুটি পড়ে গিয়ে আঘাত পেয়েছিল৷ ওই ঘটনায় স্থানীয় কয়েকজন যুবক তাকে প্রচণ্ড মারধর করেছিলেন৷ কোনক্রমে প্রাণ বাঁচিয়ে ওইদিন তিনি বাড়ি যেতে সক্ষম হন৷ কিন্তু বাড়িতে যাওয়ার পর সন্ধ্যা থেকে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে৷ পরিবারের সদস্যদের বক্তব্য, তিনি মাথায় প্রচণ্ড আঘাত পেয়েছিলেন৷ তাঁকে জিবি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখান থেকে তাকে স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছিল৷

বেসরকারি হাসপাতাল সূত্রের খবর, অরুণ কুমার দাসের মাথায় অস্ত্রোপচার করা হয়েছিল৷ কিন্তু তাঁর জ্ঞান ফেরেনি৷ অস্ত্রোপচারের পর থেকেই তিনি অচৈতন্য ছিলেন৷ আজ সকালে তাঁর মৃত্যু হয়েছে৷ তাঁর মৃত্যুতে পরিবারের সদস্যরা প্রচণ্ড উত্তেজিত হয়ে পড়েন৷ খবর পেয়ে এনসিসি থানার পুলিশ হাসপাতালে ছুটে যায়৷ দুপুর দেড়টা নাগাদ বড়জলার বিধায়ক ডা. দিলীপ দাসও হাসপাতালে যান৷ কোনক্রমে বুঝিয়ে মৃতদেহ নিয়ে হাসপাতাল থেকে ফিরে আসেন পরিবারের সদস্যরা৷ কিন্তু সন্ধ্যায় মৃতদেহ নিয়ে তাঁর পরিবারের সদস্যরা বড়জলা টিআরটিসি এলাকায় রাস্তা অবরোধ করেন৷


এদিকে, রাস্তা অবরোধের খবর পেয়ে এনসিসি এসডিপিও প্রিয়া মাধুরি মজুমদার বিশাল পুলিশ বাহিনী নিয়ে অবরোধস্থলে যান৷ বিধায়ক ডা. দিলীপ দাসও খবর পেয়ে ছুটে যান সেখানে৷ কিন্তু মৃতের পরিবারের রোষানলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হচ্ছে না৷ স্থানীয় জনগণও প্রশ্ণ তুলেন, গণপিটুনিতে মৃত্যুর ঘটনায় গ্রেফতার নেই কোন স্বার্থে৷ পুলিশ এবং বিধায়ক উভয়েই নিরুপায় হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন৷ অন্যদিকে, মৃতের পরিবারের কান্নায় বড়জলা টিআরটিসি এলাকার বাতাস ভারী হয়ে গেছে৷


তাঁদের অভিযোগ, গণপিটুনির পর কাউকেই গ্রেফতার করা হয়নি৷ প্রকাশ্য দিবালোকে অরুণ কুমার দাসকে মারধর করা হয়েছে৷ অথচ অভিযুক্ত একজনকেও পুলিশ গ্রেফতার করতে পারেনি৷ এ-বিষয়ে বিধায়ক ডা. দিলীপ দাস বলেন, বর্বরতার সমস্ত সীমা লঙ্ঘন হয়েছে৷ একজন নিরীহ ব্যক্তিকে পিটিয়ে রক্তাক্ত করার ঘটনা নৃশংসতার পরিচয় দিয়েছে৷ তিনি জানান, আজ দুই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে৷ আরও দুজনকে পুলিশ খুঁজছে৷ তবে ঘটনার সাথে সাথে দোষীদের গ্রেফতার করা উচিত ছিল৷ তিনি বলেন, মৃতের পরিবারকে সবরকম সহায়তা করা হবে৷ তাঁদের আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য ইতিমধ্যে মুখ্যমন্ত্রীর সাথে কথা হয়েছে৷ তিনি সাফ জানিয়েছেন, দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক, তার সমস্ত ব্যবস্থা করা হবে৷
এদিকে পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্ত দুজনকে গ্রেফতারের পাশাপাশি আরও দুজনের খুঁজে তল্লাশি চলছে৷ এজাহারে যে মহিলার নাম রয়েছে তাঁকেও খোঁজ করা হচ্ছে৷ শীঘ্রই তাকে গ্রেফতার করা সম্ভব হবে বলে পুলিশ আশা প্রকাশ করেছে৷ রাত আটটা নাগাদ রাস্তা অবরোধ প্রত্যাহার হয়েছে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *