দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে অতিরিক্ত নির্দেশিকা জারি হল রাজ্যে

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১১ অক্টোবর৷৷ আসন্ন দুর্গাপূজার সময় কোভিড-১৯ মহামারির সংক্রমণ প্রতিরোধে রাজ্য সরকার গত ৪ সেপেম্বর, ২০২০ একটি নির্দেশিকা জারি করেছিল৷ পরবর্তী সময়ে ভারত সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রকও উৎসবকালীন সময়ে কোভিড-১৯ সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে গত ৬ অক্টোবর, ২০২০ সর্বসাধারণের জন্য একটি নির্দেশিকা বা স্ট্যাণ্ডার্ড অপারেটিং প্রসিজার (ছঞ্জঞ্ঝ) জারি করেছে৷ তাই রাজ্যেও দুর্গাপূজার সময়ে কিছু অতিরিক্ত নির্দেশিকা জারি করার প্রয়োজন রয়েছে মনে করে স্টেট এগজেকিউটিভ কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে মুখ্যসচিব একটি অতিরিক্ত নির্দেশিকা জারি করেছেন সমস্ত ক্লাব/ পুজা কমিটি/ পূজা আয়োজক ও ব্যক্তিগত পূজা আয়োজকদের জন্য৷
এই নির্দেশিকায় বলা হয়েছে :কন্টেইনমেন্ট জোন-এ কোন উৎসবের আয়োজন করা যাবে না৷ তবে কন্টেইনমেন্ট জোন-এ বসবাসকারী পরিবারগুলি যার যার বাড়িতে এই উৎসব উদযাপন করতে পারবেন৷প্যাণ্ডেলে মূর্তি নিয়ে আসার সময় কোনপ্রকারের শোভাযাত্রা / নাচগান ইত্যাদি করা যাবে না৷


বড় জায়গা রয়েছে এমন প্যাণ্ডেলগুলিকে সবদিকে খোলা রাখতে হবে৷ যদি কোন কারণে সিলিং বন্ধ করতে হয় তাহলে পার্শবর্তী দিকগুলি খোলা রাখতে হবে৷ আর যদি পার্শবর্তী দিক বন্ধ করতে হয় তাহলে সিলিং অবশ্যই খোলা রাখতে হবে৷ এন্িন্ট পয়েন্ট থেকে দর্শনার্থীদের দাঁড়ানোর জন্য ফ্লোরে ২ মিটার (৬ ফুট) দূরত্বের ব্যবধানে স্থান চিহিণত করে দিতে হবে৷পূজাপ্যাণ্ডেল ও তার চারপাশে শারীরিক দূরত্ব বজায়, মাস্ক পরিধান ইত্যাদি নিয়ম মেনে চলার জন্য সিসি টিভির মাধ্যমে নজরদারি রাখতে হবে৷ প্রয়োজনে এই সিসি টিভি-র ফুটেজ পুলিশ প্রশাসনের কাছে তুলে দিতে হবে৷ পুরোহিত যতটুকু সম্ভব মাইক্রোফোনে মন্ত্রপাঠ করবেন যাতে দূরে দাঁড়িয়ে থাকা দর্শনার্থীরাও তা শুনতে পান৷ ভিড় এড়াতে অ’লি দেওয়ার জন্য ভক্তদের বাড়ি থেকে ফুল নিয়ে আসতে হবে৷ বিভিন্ন সময়ে ১০-১৫ জনের দলে বিভক্ত হয়ে অ’লি দেওয়া যাবে৷আলাদা আলাদা সময়ে পূজা কমিটিগুলি ১০-১৫ জনের দলের জন্য পরিকল্পিতভাবে সিঁদুর খেলার আয়োজন করবেন৷ক্লাব/পূজা কমিটিগুলি পূজাপ্যাণ্ডেলের নিকট কোন মেলার আয়োজন করতে পারবেন না৷


৬৫ বছরের বেশি বয়সী, বিভিন্ন রোগের সমস্যা রয়েছে এমন ব্যক্তি, গর্ভবতী মহিলা এবং দশ বছরের কম বয়সী শিশুদের বাড়িতে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে৷ এই নিয়ম পূজা আয়োজকদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে৷যেখানে সেখানে থুথু ফেলা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে৷প্যাণ্ডেল প্রাঙ্গণে খুব সামান্য সংখ্যায় স্টল খোলা যাবে৷ তবে ভিড় এড়াতে এই স্টলগুলি পূজাপ্যাণ্ডেল থেকে কিছুটা দূরে করতে হবে৷সামাজিক দূরত্ব বজায়, মাস্ক পরিধান ইত্যাদি নিয়ম বলবৎ করার জন্য উপযুক্ত সংখ্যায় স্বেচ্ছাসেবক রাখতে হবে৷
সমস্ত আয়োজক, পুরোহিত ও স্বেচ্ছাসেবকদের প’মীর আগেই কোভিড টেস্ট করাতে হবে যাতে তাদের মাধ্যমে কোন সংক্রমণ না ঘটে৷ সেজন্য স্বাস্থ্য দপ্তর বিভিন্ন বড় বড় পূজার কাছাকাছি টেস্টিং টিম নিযুক্ত করতে পারে. স্বাস্থ্যদপ্তর পূজার দিনগুলিতেও কিছু গুরুত্বপূর্ণ পূজা এলাকায় টেস্টিং টিম রাখতে পারে যাতে আয়োজকদের দ্বারা নির্বাচিত পূজা দিতে আসা লোকেদের টেস্ট করা যায়৷ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে কোভিড-১৯ প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার উপর পোস্টার/স্ট্যাণ্ডীজ/ এ ভি মিডিয়া ইত্যাদির মাধ্যমে প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে পূজা প্যাণ্ডেলের কাছে৷ রোগের লক্ষণ রয়েছে এমন কোন ব্যক্তিকে পূজা প্যাণ্ডেল বা সংশ্লিষ্ট স্থানে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না৷

এদিকে, শুরু হয়ে গিয়েছে উৎসবের মরসুম৷ সামনে একে একে এখন অনেক উৎসব৷ নবরাত্রি, দশহরা, দুর্গাপূজা, কালীপুজো, দিওয়ালি, ভাইফেঁটা, ছট পুজো৷কিন্তু এই উৎসবের মরসুমে দেশবাসীকে করোনা বিধি মেনে চলার আহ্বান করেছেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা: হর্ষবর্ধন৷ বিধি মেনে না চললে দেশজুড়ে বাড়তে পারে করোনা সংক্রমণ বলে জানিয়েছেন তিনি৷
রবিবার দিল্লিতে এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, উৎসবের মরসুমে বিধি মেনে না চললে করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে৷ সকলের জন্য বড় ধরনের বিপদ হয়েছে দেখা দিতে পারে৷ যে কোন ধর্মেরই ধর্মগুরুরা সাধারণ নাগরিকের জীবনকে বিপন্ন করে তুলবে না৷প্যান্ডেলে গিয়ে পুজো করতে কোন ভগবান বলে দেয়নি৷শুদ্ধ অন্তঃকরণের মাধ্যমেই ভগবানকে অনুসরণ করা যায়৷ পরিবারের সঙ্গে বাড়ির মধ্যেই উৎসব উদযাপন করা যায়৷প্যান্ডেল বা মেলায় যাওয়ার প্রয়োজন নেই৷ স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে দেশের জনগণকে রক্ষা করা কর্তব্য থেকেই তিনি এই কথা বলেছেন বলে জানিয়েছেন হর্ষবর্ধন৷
উল্লেখ করা যেতে পারে ভারতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা সবমিলিয়ে ছাড়িয়ে গিয়েছে ৭০ লাখের গণ্ডি৷বিগত ২৪ ঘন্টায় আক্রান্ত হয়েছে ৭৪৩৮৩, ওই সময়ের মধ্যে নিহত হয়েছে ৯১৮৷