নয়াদিল্লি, ১৪ আগস্ট (হি.স.) : দেশের ৭৪ তম স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিলেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ।শুক্রবার রাষ্ট্রপতিভবন থেকে দেওয়া এই ভাষণে দেশ–বিদেশের ভারতীয় নাগরিকদের শুভ কামনা জানিয়ে বক্তব্য রাখা শুরু করলেন তিনি। সাধারণতন্ত্র দিবসের ইতিহাস সম্পর্কে দু’তিন কথা বলে সাংবিধানিক দায়িত্ব নিয়ে দেশের তরুণদের অবগত করলেন রাষ্ট্রপতি । এদিন তিনি বলেন, ভারতের যুব সমাজকে একটি স্বাধীন দেশের নাগরিক হওয়ার বিশেষ গর্ব অনুভব করা উচিত । ১৫ আগস্ট জাতীয় পতাকা উত্তোলনের আনন্দ, স্বাধীনতা দিবস উদযাপনে অংশ নেওয়া এবং দেশাত্মবোধক গান শোনা আমাদের মনকে উত্তেজনায় ভরিয়ে তোলে । এই দিনটিতে ভারতের যুবকদের উচিত একটি স্বাধীন জাতির নাগরিক হওয়ার জন্য বিশেষ গর্ব অনুভব করা । আমরা কৃতজ্ঞতার সাথে আমাদের মুক্তিযোদ্ধা এবং শহীদদের স্মরণ করি, যাদের ত্যাগ আমাদের স্বাধীন জাতিতে বাঁচতে সক্ষম করেছে।
শুক্রবার রাষ্ট্রপতিভবন থেকে জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া এই ভাষণে করোনা মহামারী প্রসঙ্গ উত্থাপন করে তিনি বলেন, “প্রতি বছরের মত এই স্বাধীনতা দিবসটি আড়ম্বরপূর্ণভাবে পালিত হবে না ।তবে করোনা মোকাবেলায় ভারতের ভূমিকার প্রশংসা করে তিনি বলেন, করোনা মোকাবেলায় ভারতের ভূমিকা বিশ্বজগতের জন্য একটি শিক্ষা। এদিনের ভাষণে করোনার মোকাবিলায় কেন্দ্র ও রাজ্যের নেওয়া সিদ্ধান্তের প্রশংসা করলেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ । এদিনের ভাষণে রাষ্ট্রপতি করোনা মোকাবিলায় প্রথম সারিতে থেকে লড়াই করা সমস্ত চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের এবং করোনভাইরাস মহামারী চলাকালীন প্রয়োজনীয় পরিষেবা সরবরাহকারীদের প্রচেষ্টার প্রশংসা করেছেন। পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গে আমফানে হওয়া ব্যাপক ক্ষতির কথাও বলেন রাষ্ট্রপতি।
এদিনের ভাষণে উঠে এল গালওয়ানে চিন সেনার সঙ্গে সংঘাতের কথা । এদিন নাম না করে বেজিংকে কটাক্ষ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, পড়শিরা এই কঠিন সময় বিপথে গিয়েছে সাম্রাজ্যবাদী শক্তির নিদর্শন দেখিয়ে। তবে গালওয়ানে ভারতের বীর সন্তানদের আত্মবলিদান দেখিয়েছে যে দেশ যেমন শান্তিতে বিশ্বাস করে, কিন্তু কোনও আগ্রাসনের যোগ্য জবাব দিতেও তারা প্রস্তুত।গালওয়ানে শহিদ সেনাদের শ্রদ্ধা জানাচ্ছে গোটা দেশ।
কোবিন্দের দেওয়া জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে উঠে এল কেন্দ্র সরকারের নেওয়া আর্থিকভাবে আত্মনির্ভর ভারতের প্রসঙ্গ। শনিবার রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে দেওয়া এই ভাষণে তিনি বলেন, সমগ্র বিশ্বের কল্যাণে কাজ করা ভারতের ঐতিহ্য । আমরা কেবল নিজের জন্যই বাঁচি না, বরং পুরো বিশ্বের কল্যাণে কাজ করি। ভারতের স্বনির্ভরতা মানে পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্নতা বা দূরত্ব তৈরি না করে স্বাবলম্বী হওয়া। এটি বোঝায় যে ভারত নিজের পরিচয় বজায় রেখে বিশ্ব অর্থনীতির সাথে জড়িত থাকবে।
এদিনের ভাষণে একে একে তিনি কেন্দ্রের কিষাণ নিধি প্রকল্প, স্বচ্ছ ভারত মিশন এবং অনেক প্রকল্পের কথা উল্লেখ করলেন। কিষাণ নিধি প্রকল্প কৃষকদের সুবিধা হয়েছে বলেও জানালেন। স্বাস্থ্যের উন্নতিতে কেন্দ্রের আয়ুষ্মান প্রকল্পের সিদ্ধান্তের কথাও তুলে ধরলেন। তাঁর মতে, এই প্রকল্প জন আন্দোলনে পরিণত হয়েছে বলেও। এছাড়া স্বচ্ছ ভারত মিশনে এই সরকার খুবই কম সময়ে সাফল্য পেয়েছে। সরকারের রান্নার গ্যাসে সাবসিডি দেওয়া বা ডিজিটাল ভারতের প্রয়াস গর্ব করার মতো পদক্ষেপ। আরও বিভিন্ন ক্ষেত্রে কেন্দ্রের যোজনাগুলির প্রশংসা করে তিনি বললেন, অনেক দরিদ্র মানুষের লাভের কথা মাথায় রেখেই এই প্রকল্পগুলির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এছাড়া সরকার যে দেশের সমস্ত রাজ্যের যেমন লাদাখ, জম্মু ও কাশ্মীর, উত্তরপূর্ব রাজ্যগুলির কল্যাণের কথা সর্বক্ষণ ভেবেছে, সেই কথাও উল্লেখ করলেন।
দেশের উন্নয়নে অভ্যন্তরীণ সুরক্ষা প্রয়োজন বলে সরকার সেক্ষেত্রেও নজরদারি রেখেছে। স্বাধীনতার পর অনেক সীমাবদ্ধতার কারণে শিক্ষাব্যবস্থার দিকে বিশেষ নজর দেওয়া যায়নি। কিন্তু যে দেশে ধনসম্পত্তির চেয়ে শিক্ষাকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয় সে দেশে শিক্ষা কখনওই পিছনে পড়ে থাকে না। আর তাই সরকার সেই দিনটিকে নিয়ে আসার চেষ্টায় আছে যেদিন এ দেশে একজন ব্যক্তিও অশিক্ষার অন্ধকারে পড়ে থাকবে না। বিজ্ঞান ও খেলাধুলোতেও এ দেশ যে কোনও অংশে পিছিয়ে নেই সে কথাও জানালেন রাষ্ট্রপতি। মহাকাশ গবেষণায় ইসরো উল্লেখযোগ্য কাজ করেছে। শেষে নিজের ভাষণে ২০২০ টোকিও অলিম্পিকের জন্য ভারতীয় খেলোয়ারদের শুভেচ্ছা জানালেন তিনি। ভাষণের একদম শেষপর্যায়ে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের কথা বললেন তিনি এবং গান্ধীজির মহৎ মতবাদের কথা সবাইকে মানতে বলে উজ্জ্বীবিত করতে চাইলেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ।
এদিনের ভাষণে উঠে এল রামন্দিরের ভূমিপুজো প্রসঙ্গ । রাষ্ট্রপতি বলেন, রামন্দিরের ভূমিপুজো একটি অত্যন গর্বের ঘটনা যেখানে মানুষ ধৈর্য ধরেছিলেন, বিচারব্যবস্থার ওপর আস্থা রেখেছিলেন। যেভাবে সব পক্ষ মেনে নিয়েছে এই রায় সেটা ভারতের শান্তি, অহিংসা, সম্প্রীতি ও ভালোবাসার যে রীতি, তারই নিদর্শন।
এদিন তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে অস্থায়ী সদস্য হওয়ার ক্ষেত্রে ভারত যেভাবে বিশ্বের সহযোগিতা পেয়েছে, তাতে বোঝা যায় কীভাবে দেশকে দেখা হয় বিশ্বজুড়ে।