নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৩১ জুলাই৷৷ ত্রিপুরায় দ্বাদশ শ্রেণির চূড়ান্ত পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে৷ এ বছর উচ্চমাধ্যমিকে পাশের হার ৮০.৮০ শতাংশ৷ গত বছরের প্রায় সমতুল্য৷ করোনা-প্রকোপে লকডাউনে ফলাফল প্রকাশে বিলম্ব হয়েছে৷ শুক্রবার ত্রিপুরা মধ্যশিক্ষা পর্ষদ সভাপতি ড় ভবতোষ সাহা সাংবাদিক সম্মেলনে এই ফলাফল ঘোষণা করেছেন৷ তিনি জানিয়েছেন, লকডাউনের কারণে আজই মার্কশিট সুকলে পৌঁছনো সম্ভব হবে না৷ তবে লকডাউন সমাপ্ত হলেই ছাত্রছাত্রীরা মার্কশিট পেয়ে যাবে৷ সে-ক্ষেত্রে উত্তরপত্র পুনঃমূল্যায়নের আবেদনপত্র সুকলে জমা দেওয়ার অন্তিম তারিখ ১০ অগাস্ট ধার্য করা হয়েছে৷ সুকল কর্তৃপক্ষকে ১৪ অগাস্টের মধ্যে পর্ষদের কাছে ওই সব আবেদনপত্র জমা দিতে হবে৷
আজ পর্ষদ সভাপতি বলেন, করোনা অতিমারিরর কারণে গোটা দেশে লকডাউন জারির পরিপ্রেক্ষিতে কিছু পরীক্ষা ২৩ মার্চ থেকে স্থগিত রাখতে হয়েছিল৷ তাতে উচ্চমাধ্যমিকের নয়টি বিষয় যেমন আরবি, অর্থনীতি, ভূগোল, হোম ম্যানেজমেন্ট ও নার্সিং, সঙ্গীত, পুষ্টিবিজ্ঞান, মনোবিজ্ঞান, সংসৃকত এবং রাশিবিজ্ঞান৷ এছাড়া মাধ্যমিক (পুরাতন) সিলেবাসের দুটি বিষয় জীববিজ্ঞান ও ভৌতবিজ্ঞান মাদ্রাসা আলিম এবং মাদ্রাসা ফাজিলের বেশ কয়েকটি বিষয়ের পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হয়নি৷ যা পরবর্তী পর্যায়ে ৫ থেকে ১১ জুনের মধ্যে পুনরায় পরীক্ষা নেওয়ার চেষ্টা করেও গোটা রাজ্যে করোনা-র প্রকোপ বৃদ্ধির কারণে স্থগিত রাখতে হয়েছিল৷ অবশেষে ২৯ জুন এই পরীক্ষাগুলো বাতিল বলে ঘোষণা করা হয়৷ এই প্রেক্ষাপটে পরীক্ষাগুলোর ফল প্রকাশে অহেতুক বিলম্ব ঘটেছে, দাবি করেন তিনি৷
তিনি জানান, এ বছর উচ্চমাধ্যমিকে মোট ২৭,১৪৭ জন পরীক্ষার্থী নাম নথিভুক্ত করেছিল৷ তাদের মধ্যে পরীক্ষা দিয়েছে ২৬,৪০০ জন৷ ওই সকল পরীক্ষার্থীর মধ্যে ছাত্র ১৩,৪৬০ জন এবং ছাত্রী ১২,৯৪০ জন রয়েছে৷ তিনি আরও বলেন, এ বছর তফশিলি জাতির ৫,২৭৬ জন, তফশিলি উপজাতির ৬,২১২ জন ও অন্যান্য ১৪,৯১২ জন পরীক্ষা দিয়েছে৷ তাঁর কথায়, পরীক্ষার্থীর মধ্যে বাণিজ্য বিভাগে ৬৩৬ জন, বিজ্ঞান বিভাগে ৩,১৭৩ জন এবং বিভাগে ২২,৫৬১ জন পরীক্ষা দিয়েছে৷ তিনি বলেন, এ-বছর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীয় মূলত ৪০৮টি সুকলের ছাত্রছাত্রী অংশ নিয়েছে৷ তারা রাজ্যের ৬০টি পরীক্ষাকেন্দ্রভুক্ত মোট ৮৬টি বিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিয়েছে৷ তিনি বলেন, এ বছর মাদ্রাসা ফাজিল পরীক্ষায় নাম নথিভুক্ত করে ২৮ জন৷ তাদের মধ্যে ছাত্রী রয়েছে সাত জন৷ তারা মূলত কৈলাসহর (টিলাবাজার), ধর্মনগর (কুর্তি) এবং সোনামুড়ায় অবস্থিত মাদ্রাসা থেকে পরীক্ষা দিয়েছে৷ সাথে তিনি যোগ করেন, এ বছর মাদ্রাসা আলিম পরীক্ষা দিয়েছে ১৯৫ জন৷ তাদের মধ্যে ছাত্রী রয়েছে ১৬ জন৷ আলিমের পরীক্ষার্থীরা ওই তিনটি মাদ্রাসা ছাড়া বিশালগড় (কড়ইমুড়া), বক্সনগর, উদয়পুর (রাজধননগর) এবং বড়নারায়ণ (কাঁঠালিয়া) মাদ্রাসার৷ তিনি বলেন, মাদ্রাসা আলিম পুরাতন সিলেবাসে পরীক্ষা দিয়েছে মাত্র এক জন৷ এবার মাধ্যমিক পুরাতন সিলেবাস পরীক্ষায় নাম নথিভুক্ত করেছিল ৩০১ জন৷ যাদের মধ্যে ২১১ জন পরীক্ষা দিয়েছে৷ তাদের মধ্যে ছাত্র ৮৬ জন ও ছাত্রী ১২৫ জন৷ তিনি বলেন, তফশিলি জাতি ৪২ জন, তফশিলি উপজাতি ৭০ জন ও অন্যান্য ১৯ জন রয়েছে৷
পর্ষদ সভাপতি জানিয়েছেন, এ বছর উত্তরপত্র মূল্যায়ন শুরু হয়েছিল ২৪ এপ্রিল৷ সমাপ্ত হয়েছে ২২ মে৷ তাঁর কথায়, এবার উচ্চমাধ্যমিকে গড় পাশের হার ৮০.৮০ শতাংশ৷ গত বছর পাশের হার ছিল ৮০.৫১ শতাংশ৷ তিনি বলেন, এ বছর কলা বিভাগে ৭৯.৫২ শতাংশ, বাণিজ্য বিভাগে ৭৮.৫৬ শতাংশ এবং বিজ্ঞান বিভাগে ৮৯.৮৫ শতাংশ, মাদ্রাসা ফাজিল কলা বিভাগে ৬৩.৬৪ শতাংশ এবং থিওলজিতে ৭৬.৪৭ শতাংশ পাশ করেছে৷ এদিন পর্ষদ সভাপতি জানিয়েছেন, এ বছর উচ্চমাধ্যমিকে তফশিলি উপজাতি ৬৮.৫৩ শতাংশ এবং তফশিলি জাতি ৮৩.৮১ শতাংশ পাশ করেছে৷ এদিকে, এডিসি এলাকায় বিদ্যালয়ে ৭০.৬৮ শতাংশ পাশ করেছে৷ তাছাড়া, জেলাস্তরে পাশের নিরিখে সিপাহিজলা জেলা শীর্ষে রয়েছে৷ সিপাহিজলা জেলায় ৮৪.২৭ শতাংশ পাশ করেছে৷ অন্যদিকে ধলাই জেলায় সর্বনিম্ন পাশের হার, ৭৩.৮৪ শতাংশ৷ পর্ষদ সভাপতির কথায়, এবছর ২৭টি সুকলে উচ্চমাধ্যমিকে ১০০ শতাংশ ছাত্রছাত্রী পাশ করেছে৷ তবে, একটি সুকলের ১০০ শতাংশ ছাত্রছাত্রীই অনুর্তীর্ণ হয়েছে৷
পর্ষদ সভাপতি বলেন, এ বছর সংশোধনাগার থেকে কেউ উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দেননি৷ তাছাড়া, অসদুপায় অবলম্বনের জন্য ২ জনকে বহিষ্কার এবং একজনকে আরএ করা হয়েছে৷ তিনি বলেন, এ বছর ১০ জন দৃষ্টিহীন এবং ১৮ জন দিব্যাঙ্গ ছাত্রছাত্রী পরীক্ষা দিয়েছে৷ পর্ষদ সভাপতি সংশ্লিষ্ট সকলকে পরীক্ষা সুচারুভাবে সম্পন্ন করতে সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন৷

