আইজল, ২৪ জুন (হি.স.) : গত ১৮ তারিখ থেকে ছয়দিনে পঞ্চমবার ভূমিকম্প হয়েছে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অন্যতম রাজ্য মিজোরামে। বুধবার সকাল ০৮:০২:৩৬ মিনিটে সংঘটিত হয়েছে মাঝারি ভূমিকম্প। এর তীব্রতা রিখটার স্ক্যালে ৪.১ ধরা পড়েছে। এর আগে মঙ্গলবার সন্ধ্যারাত ০৭:১৭:৩৭ মিনিটে ৩.৭ তীব্রতার এবং এদিনই রাত ১১:০৩ মিনিটে ৩.২ প্রাবল্যের ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। মাত্র গত সাতদিনের মাথায় একদিনে ষোলো ঘণ্টার ব্যবধানে আজ ষষ্ঠবারের ভূমিকম্পে সমগ্র মিজোরামের পাশাপাশি সংলগ্ন দক্ষিণ অসমের কাছাড় ও হাইলাকান্দি জেলায় ব্যাপক আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। ঘন ঘন ভূমিকম্পের ঘটনায় উদ্বিগ্ন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী জোরামথাঙ্গার সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। দিয়েছেন সবধরনের কেন্দ্রীয় সহায়তার আশ্বাস। আজকের ভূমিকম্পে কোনও ক্ষয়ক্ষতি এবং হতাহতের খবর নেই বলে রাজ্য প্রশাসনের সূত্র জানিয়েছে।
ন্যাশনাল সেন্টার ফর সিসমোলজি সূত্রে জানা গেছে, আজ সকাল ০৮:০২:৩৬ মিনিটে ৪.১ প্রাবল্যের যে ভূমিকম্প হয়েছে তার কেন্দ্রস্থল ছিল মিজোরামের ভারত-মায়ানমার সীমান্ত জেলা সদর চাম্পাই থেকে প্রায় ৩১ কিলোমিটার দূরে, দক্ষিণ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ভূপৃষ্ঠের ১০ কিলোমিটার গভীরে এপিএফ ২৩.১৮° উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯৩.২৫° পূর্বে।
এর আগে গতকাল মঙ্গলবার রাতে আরও দুবার ভূমিকম্প হয়েছে রাজ্যে। এদিন প্রথম ৩.৭ রিখটার স্ক্যালে ভূমিকম্প অনুভূত হয় সন্ধ্যারাত ০৭:১৭:৩৭ মিনিটে। এর উৎসস্থল ছিল রাজ্যের সেরচিপ জেলার থেনজওয়াল শহর থেকে ৩৯ দূরে দক্ষিণ-পূর্বে ভূপৃষ্ঠ থেকে ২৫ কিলেমিটার গভীরে এপিএফ ২৩.০১° উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯৩.০৩° পূর্বে।
এর পর রাত ১১:০৩:৪৮ মিনিটে ৩.২ প্রাবল্যের ফের ভূকম্প হয় রাজ্যে। এর উৎসস্থল ছিল রাজ্যের চাম্পাই জেলা শহর থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার দূরে, দক্ষিণ দক্ষিণ-পূর্বে ভূপৃষ্ঠের ১০ কিলোমিটার গভীরে এপিএফ ২২.৮৯° উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯৩.৬৪° পূর্বে।
এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, এর আগে ১৮ জুন ৫.০ প্রাবল্যের ভূমিকম্পে মিজোরাম সহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের কয়েকটি রাজ্য কেঁপেছিল। ওইদিনও মিজোরামের চাম্পাই জেলায় ভূপৃষ্ঠ থেকে ৮০ কিলোমিটার ভেতরে কম্পনের উৎসস্থল ছিল বলে জানিয়েছিল গুয়াহাটির আবহাওয়া বিজ্ঞান কেন্দ্র। এর পর ২১ জুন বিকেল ৪:১৫ মিনিটে মিজোরামে ভূমিকম্প হয়। রিখটার স্কেলে তীব্রতা ছিল ৫.১। ন্যাশনাল সেন্টার ফর সিসমোলজি সূত্রের তথ্য সেদিন সংঘটিত ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল আইজলের ২৫ কিলেমিটার পূর্ব এবং উত্তর-পূর্বে ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার গভীরে ২৫.৬° উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০.৬° পূর্ব ছিল।
এর পরের দিন ২২ জুন ভোর ৪:১০:৫২ মিনিটে ৫.৫ প্ৰাবল্যের ভূমিকম্পে রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে বিস্তর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল মিজোরামের ভারত-মায়ানমার সীমান্ত জেলা সদর চাম্পাই থেকে প্রায় ২৭ কিলোমিটার দূরে দক্ষিণ পশ্চিমের জোকহাউথা এলাকায় ভূপৃষ্ঠের ২০ কিলোমিটার গভীরে এপিএফ ২৩.২২° উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯২.২৪° পূর্বে।
আজকের মতো সেদিনও ভূমিকম্পের পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী জোরামথাঙ্গার সঙ্গে কথা বলে সার্বিক পরিস্থিতির খোঁজ নিয়েছিলেন। যে কোনও প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় সরকার মিজোরাম সরকারকে সাহায্য করতে প্রস্তুত, মুখ্যমন্ত্রীকে এই আশ্বাসও দিয়েছিলেন মোদী ও শাহ।
প্রসঙ্গত, গত ২ জুন ভারতীয় সময় সকাল ৭:১৪ মিনিটে ৩.৯ প্রাবল্যের ভূমিকম্প হয়েছিল মণিপুরে। সেদিনের ভূমিকম্পের উৎসস্থল ছিল ওই রাজ্যের পূর্ব উখরুল জেলার ভূপৃষ্ঠের ১১ কিলোমিটার গভীরে। এর আগে ২৫ মে রাত ৮টা ১২ মিনিটে ৫.৪ তীব্রতার ভূমিকম্প হয়েছে অসম, মেঘালয় এবং ত্রিপুরায়ও। সেদিনের ভূমিকম্পের উৎসস্থল ছিল মণিপুরের চূড়াচাঁদপুর জেলা এবং মায়ানমার সীমান্ত।
এদিকে করোনা সংকটের মধ্যে ঘন ঘন সংঘটিত ভূমিকম্পে মানুষজনের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। এরই সূত্রে এক জিজ্ঞাসার উত্তর দিতে গিয়ে গুয়াহাটিতে অবস্থিত আঞ্চলিক আবহাওয়া কেন্দ্রের কার্যনির্বাহী বিজ্ঞানী অতুলকুমার সিং জানান, গত ডিসেম্বর থেকে আজ পর্যন্ত উত্তর-পূর্বাঞ্চলে প্রায় ২৬-বার ভূমিকম্প হয়েছে। সিসমিকের হিসেবে উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে পাঁচের মধ্যে রাখা হয়েছে। তাই এই অঞ্চলে ঘন-ঘন ভূকম্প সংঘটিত হয়। এ ব্যাপারে সতর্কতাই একমাত্র অবলম্বন বলে পরামর্শ দিয়েছেন বিজ্ঞানী অতুলকুমার সিং।