মানসিক অবসাদের শীর্ষে রয়েছে ভারত, মহিলারা

কলকাতা, ১৫ জুন (হি. স.) : মানসিক অবসাদের শিকারের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে ভারত। আর, এদিক থেকে পুরুষদের টেক্কা দিয়েছে মহিলারা।

শারীরিক স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতন অনেকেই। ডায়েট, এক্সারসাইজে নিজেকে ঠিক রাখার প্রবণতা তৈরি হয়েছে মানুষের মধ্যে। কিন্তু মানসিক রোগ নিয়ে এখনও ভাবেন না একটা বড় অংশের মানুষ। সেই রোগ চোখে দেখা যায় না। কিন্তু একটু একটু করে একজনকে শেষ করে দেয়। শারীরিক রোগের মতই মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয় মানসিক অবসাদ।

একাধিকবার অভিনেত্রী দীপিকা পারুকন এই বিষয়ে মুখ খুলেছেন। এমনকি সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে বিশেষ উদ্যোগও নিয়েছেন তিনি। ‘লিভ লাভ লাফ ফাউন্ডেশন’ নামে একটি সংস্থার মাধ্যমে সেই সচেতনতার প্রচার চালান দীপিকা। বলিউডের অন্যতম সফল অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যু যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। এর আগেও বহু সেলেব্রিটি ডিপ্রেশনের স্বীকার হয়েছেন, যার মধ্যে অন্যতম দীপিকা। বলিউডের দীপিকার সাফল্য আলাদা করে বলার অপেক্ষা রাখে না। একের পর এক ব্লকবাস্টারের পরও মানসিক অবসাদে ভুগেছেন তিনি।

সুশান্তের মৃত্যুতে ইনস্টাগ্রামে মানসিক স্বাস্থ্যের কথাই লিখেছেন অভিনেত্রী। তিনি লিখেছেন, ‘মানসিক সমস্যায় আমিও ভুগেছি। আমি জানি কথা বলাটা কতটা জরুরি। কথা বলুন। নিজেকে প্রকাশ করুন। প্রয়োজনে সাহায্য চান। মনে রাখবেন আপনি একা নন। আমরা সবাই একসঙ্গে আছি। আর সবথেকে বড় কথা সবকিছুর শেষে আশা আছে।’

তারকা ব্যাডমিন্টন প্লেয়ার প্রকাশ পাডুকোনের এয়ে দীপিকা। অল্প বয়সেই নিজের স্বপ্ন পূরণে পাড়ি দিয়েছিলেন মুম্বই। প্রথমে মডেলিং ও পরে অভিনয়ে সফল কেরিয়ার। বলিউডে একজন উজ্জ্বল নক্ষত্র বলা যেতে পারেই। খ্যাতি, টাকা সবকিছুতেই অনেককে ছাপিয়ে সফল তিনি। অথচ সেই মেয়েটিই অবসাদে ভোগেন! বিশ্বাস করতে অসুবিধা হলেও এটাই সত্যি। বিশিষ্ট মনোবিজ্ঞানি ডা. আর. নিয়োগী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘মানসিক অবসাদ যে একটা অসুখ, তার যে চিকিৎসা দরকার, সেটা মনে রাখেন না শতকরা নব্বই জন৷”

সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, বিশ্বে যত মহিলা আত্মহত্যা করেন, জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে তার ৩৭ শতাংশ ভারতীয়।  তাঁদের বয়স ১৫ থেকে ৪০-এর মধ্যে৷ অধিকাংশই বিবাহিতা৷ সমীক্ষা বলছে, ভারতে এই মর্মান্তিক মৃত্যুর পঞ্চম বড় কারণ আত্মহনন৷ বিবাহিতা মহিলাদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি কেন ? প্রথম এবং প্রধান কারণ লিঙ্গ বৈষম্য৷ দ্বিতীয় কারণ, ভারতে বিবাহ নামক প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোয় মেয়েদের আশা-আকাঙ্খা পূরণের পরিসর তেমন নেই বললেই চলে৷ একদিকে সাংসারিক তথা সামাজিক প্রত্যাশার চাপ, অন্যদিকে আর্থিক স্বনির্ভরতার অভাব৷ অল্প বয়সে বিয়ে এবং অল্প বয়সে মাতৃত্বের দায় দায়িত্ব৷

মেয়েদের জীবনে এক শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা৷ সেই চাপটা এসে পড়ে মনের উপর৷ এই চাপ উপশমে যদি সে কাউকে, বিশেষ করে স্বামী বা অন্য পরিজনকে পাশে না পায়, তাহলে সেটা পরিণত হয় মানসিক অবসাদে৷ জীবন সম্পর্কে দেখা দেয় এক অনীহা, বিতৃষ্ণা৷ বাঁচার ইচ্ছেটা চলে যায়৷ আত্মহননকে এই চাপ থেকে মুক্তির সহজ পথ হিসেবে বেছে নেয়৷ এর পাশাপাশি আরো একটা বড় কারণ মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে অজ্ঞানতা৷