মহারাষ্ট্র ফেরত ১৬ জনের দেহে করোনার সন্ধান, এখন রাজ্যের আট জেলাই সংক্রমিত

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৩ মে৷৷ মহারাষ্ট্র ফেরত ত্রিপুরায় ১৬ জনের দেহে করোনা-র সংক্রমণ মিলেছে৷ আজ ৯৯৬টি নমুনা পরীক্ষায় ওই ১৬ জনের কোবিড-১৯ রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে৷ সবমিলিয়ে ত্রিপুরায় ১৯১ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন৷ কিন্তু, এখন শুধুই বহিঃরাজ্য থেকে আগত ত্রিপুরার নাগরিকদের দেহে করোনা সংক্রমণের ঘটনায় রাজ্য প্রশাসনের চিন্তা আরও বাড়িয়েছে৷ সাথে রাজ্যবাসীর বেড়েছে দুশ্চিন্তা ও আতঙ্ক৷ কারণ, ধলাই, গোমতি, খোয়াই, উত্তর ত্রিপুরা, সিপাহিজলা এবং ঊনকোটি জেলার সাথে এখন পশ্চিম ও দক্ষিণ জেলাও করোনা সংক্রমিতের তালিকায় ঠাঁই পেয়েছে৷ মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব বহিঃরাজ্য থেকে আগতদের বাড়িতে একান্তবাসে থাকার নিয়ম কঠোরভাবে পালনের অনুরোধ জানিয়েছেন৷


শনিবার রাতে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব এক ট্যুইট বার্তায় জানিয়েছেন, আজ ৯৯৬টি নমুনা পরীক্ষায় ১৬ জনের কোভিড-১৯ রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে৷ তাঁরা সকলেই মহারাষ্ট্র থেকে ফিরেছেন৷ স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিক জানিয়েছেন, ওই ১৬ জনের মধ্যে পশ্চিম ত্রিপুরা জেলায় ৬ জন, গোমতী ও সিপাহীজলা জেলায় ৩ জন করে, দক্ষিণ জেলায় ২ জন এবং খোয়াই ও ধলাই জেলায় এক জন করে বাসিন্দা রয়েছেন৷


প্রসঙ্গত, রাজ্যে নতুন করে করোনা আক্রান্তের ঘটনা যথেষ্ট উদ্বেগজনক বলেই মনে করা হচ্ছে৷ কারণ, ১৬ জন করোনা আক্রান্তই সাধারণ নাগরিক৷ এখন তাঁদের সংস্পর্শে যাঁরা ছিলেন সকলকে চিহিণত করতে হবে৷ আগরতলা রেলস্টেশনে নেমে তাঁরা বেসরকারি গাড়িতে কিংবা নিজস্ব গাড়ি করে বাড়ি ফিরেছেন৷ ফলে তাঁদের সংস্পৃষ্ট সকলকেই খুঁজে বের করে একান্তবাসে পাঠাবে স্বাস্থ্য দফতর৷
এদিকে, শিক্ষামন্ত্রী রতন লাল নাথ জানিয়েছেন, আজ করোনা সংক্রমণে চিকিৎসাধীন ২০ জনকে সুস্থতার পর ছেড়ে দেয়া হয়েছে৷ এরমধ্যে ভগৎ সিং যুব আবাস থেকে ১৮ এবং ২ জনকে ছাড়া হয়েছে জিবি হাসপাতাল থেকে৷ বর্তমানে ১৫৩ জন করোনা সংক্রমিত ব্যক্তি সুস্থ হয়ে বাড়িতে ফিরে গিয়েছেন৷ শিক্ষামন্ত্রী জানান, আজ পর্যন্ত স্ক্রীনিং করা হয়েছে ২ লক্ষ ৭৬ হাজার ৭৫৬ জনকে৷ নমুনা সংগ্রহ করা হয় ২০১৩৭ জনকে৷ নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ১৮২৭১ জনের৷ মোট পজিটিভ ছিল ১৭৫ জন৷ নেগেটিভ ১৮৫৪৬৷ সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১৫৩ জন৷ করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের সুস্থ হওয়ার হার ৮৭.৪৩ শতাংশ৷ তিনি জানান, গতকাল ৮৪৭ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল৷ তার মধ্যে সবজনই নেগেটিভ৷ আজ নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ১৩৮৯ জনের এবং নমুনা পরীক্ষা চলছে ৮০০ জনের৷ শিক্ষামন্ত্রী জানান, রাজ্যে ৪২ টি কোয়ারেন্টাইন সেন্টার রয়েছে৷ তিনি জানান, রাজ্যে বর্তমানে ফেসিলিটি কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন ৩৫৯ জন এবং হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছে ৭৩২৩ জন৷


শিক্ষামন্ত্রী জানান, আজ পর্যন্ত মোট ৭ টি ট্রেনে করে বর্হিরাজ্যে আটকে থাকা মোট ৮২৮০ জন রাজ্যে পৌঁছেছে৷ এদের মধ্যে উত্তর জেলায় নেমেছে ১৩৩৪ জন৷ ধলাই জেলায় নেমেছে ৩৩৭ জন৷ পশ্চিম জেলায় নেমেছেন ৬৫৯৯ জন৷ এদের মধ্যে থেকে ৮২৬৫ জন হোম কোয়ারেন্টাইনে এবং ১৫ জন ফেসিলিটি কোয়ারেন্টাইনে রয়েছে৷ চেন্নাই থেকে আগত ৫ জনের করোনা পজিটিভ পাওয়া গেছে এবং তাদের চিকিৎসা চলছে৷ মন্ত্রী শ্রীনাথ জানান, লকডাউন ঘোষণার পর ট্রেনে এবং চুড়াইবাড়ি গেইট দিয়ে রাজ্যে মোট এসেছে ১৭৯৫৩ জন৷ তিনি জানান, এখন পর্য/ন্ত ২৩৪১৮ জন সার্ভেলেন্সে ছিল৷ তারমধ্যে ১৪ দিন সময়কাল শেষ করেছে ১৫৭৩৬ জন৷ তিনি জানান, আজ চুড়াইবাড়ি চেকপোস্ট দিয়ে রাজ্যে ৩৯৭ জন৷ এরমধ্যে ১১৬ জন ট্রাক ড্রাইভার, ৩ জন চিকিৎসার জন্য বর্হিরাজ্যে গিয়েছিল এবং ২৭৮ জন আটকে থাকা মানুষজন৷ আজ দামছড়া দিয়ে ১২ জন রাজ্যে এসেছে বলে তিনি জানান৷ শিক্ষামন্ত্রী জানান, গতকাল ও আজকে দু’দিনে ও এন জি সি’র ৮৬ জন কর্মী বিমানে করে রাজ্যে এসেছে৷ বিমানে ওঠার আগে তাদের সকলেরই করোনা নেগেটিভ রিপোর্ট রয়েছে৷ রাজ্যে আসার পর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে তারা ড্রিলিং সাইটে যোগদান করেছেন৷ সেখানেও তাদের নিজস্ব মেডিক্যাল টিম রয়েছে৷ শিক্ষামন্ত্রী জানান, আজ আমবাসা থেকে বিহারের উদ্দেশ্যে শ্রমিকদের নিয়ে একটি ট্রেন ছেড়েছে৷ ২৪ মে বিশ্রামগঞ্জ থেকে বিহারের উদ্দেশ্যে ১৫৮৪ জন যাত্রী নিয়ে আরেকটি ট্রেন ছাড়বে৷

২৫ মে, ২৬ মে ও ২৮ মে বিহার, রাঁচি ও ঝাড়খণ্ডে উদ্দেশ্যে রাজ্য থেকে শ্রমিকদের পাঠানোর জন্য ট্রেন চালানোর প্রচেষ্টা চলছে৷ শিক্ষামন্ত্রী জানান, বাংলাদেশে আটকে পড়া ১০৫ জন ২৮ মে আখাউড়া চেকপোস্ট দিয়ে রাজ্যে ফিরবে৷ শিক্ষামন্ত্রী জানান, বর্হিরাজ্য থেকে ট্রেনে রাজ্যের যাত্রীদের আসা বাবাদ এ পর্যন্ত রাজ্য সরকারের ব্যয় হয়েছে ১ কোটি ১৪ লক্ষ ৮৬ হাজার টাকা৷ যদিও চেন্নাই এবং হায়দরাবাদ থেকে যারা রাজ্যে এসেছেন তাদের জন্য রাজ্য সরকারকে কোন টাকা দিতে হয়নি৷ তিনি জানান, বর্হিরাজ্যে আটকে পড়া ৭০৪২ জনকে প্রথম দফায় ২ কোটি ৪২ লক্ষ ৭২ হাজার ১৭০ টাকা সহায়তা দেয়া হয়েছে৷ দ্বিতীয় দফায় ১২২৩ জনকে ৩৪ লক্ষ ৫৯ হাজার ৯০০ টাকা সহায়তা দেয়া হয়েছে৷