মুখ্যমন্ত্রীর সাথে পশ্চিমবঙ্গে ঘূর্ণিঝড় আমফান-এ ক্ষতিগ্রস্ত ঘুরে এলাকা দেখলেন প্রধানমন্ত্রী, ১০০০ কোটি টাকা বিশেষ আর্থিক সহায়তার ঘোষণা

কলকাতা, ২২ মে (হি. স.) : আমফান-র দানবীয় তান্ডবলীলা আকাশপথে পর্যবেক্ষন শেষে বৈঠক থেকে বেরিয়েই এক মুহূর্ত দেরি না করে পশ্চিমবঙ্গ-কে ১০০০ কোটি টাকার বিশেষ সহায়তা-র ঘোষণা দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। গতকাল তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন, পশ্চিমবঙ্গে ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকাগুলিকে পুনরুজ্জীবিত করতে কেন্দ্রীয় সরকার সবরকম সহায়তা দেবে। আজ সেই প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন প্রত্যক্ষ করলেন পশ্চিমবঙ্গবাসী। সাথে প্রধানমন্ত্রী এদিন বুঝিয়ে দিলেন, কেন্দ্রীয় সরকারের পরিচালনায় দুর্যোগ মোকাবিলায় গোটা দেশ এক ও অভিন্ন। 

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর আবেদনে সাড়া দিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঝূর্ণিঝড় প্রভাবিত এলাকা পরিদর্শনে আসেন। সকাল ১১টায় দমদম বিমানবন্দরে বিশেষ বিমানে প্রধানমন্ত্রী পৌছানোর পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় এবং রাজ্যপাল জগদীপ ধনকর তাঁকে স্বাগত জানান। প্রধানমন্ত্রীর সাথে কেন্দ্রীয় পরিবেশ রাষ্ট্র মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়, মহিলা এবং শিশু কল্যাণ রাষ্ট্র মন্ত্রী দেবশ্রী চৌধুরী, ধর্মেন্দ্র প্রধান এবং প্রতাপ সারেঙ্গী এসেছেন। বিমানবন্দরে সাক্ষাৎপর্ব  শেষে  তাঁরা  সকলে  হেলিকপ্টারে  ঝূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে রওয়ানা দেন। 

এদিন কলকাতায় পৌছে একটি হেলিকপ্টারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় এবং রাজ্যপাল জগদীপ ধনকর ও অন্য আরেকটি হেলিকপ্টারে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিগণ প্রথমে উত্তর ২৪ পরগনা যান। সেখানে ঘূর্ণিঝড় প্রভাবিত এলাকা ঘুরে দেখেন। গোসাবা, বসিরহাট, বনগাঁ পরিদর্শন করে তাঁরা চলে যান দক্ষিণ ২৪ পরগনা। সেখানে সুন্দরবন, মিনাখাঁ সহ সমুদ্র উপকূলীয় ক্ষেত্রে আকাশপথে পরিদর্শন করেন। হেলিকপ্টারে বসেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় প্রধানমন্ত্রী-কে পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত করেন। ৪৮ ঘন্টা অতিক্রান্ত হওয়া সত্ত্বেও ওই এলাকাগুলিতে এখনো জল জমে রয়েছে, বিষয়টি ব্যাখ্যা করেন মুখ্যমন্ত্রী। সাথে বলেন, রাস্তায় গাছ ভেঙে পরে রয়েছে, এমনকি বিদ্যুতের খুঁটি, তারও ছিড়ে পরে রয়েছে। যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। 

মুখ্যমন্ত্রী এদিন প্রধানমন্ত্রী-কে জানিয়েছেন, যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে, তাই বিদ্যুতের সমস্যা সমাধান করা যাচ্ছে না। তেমনি, বিদ্যুৎছিন্ন হয়ে যাওয়ায় পানীয় জলের সংকট দেখা দিয়েছে। তাতে, মানুষ ভীষণ সমস্যায় পড়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী জানান, এনডিআরএফ-র ২৩টি দল এবং রাজ্য প্রশাসনের দল মাইল ঘূর্ণিঝড় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় মানুষের জন্য ত্রাণ সামগ্রী পৌছে দিচ্ছে। পাশাপাশি, সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় উদ্ধার কার্য চলছে। 

এদিন আকাশপথে পর্যবেক্ষণ শেষে হেলিকপ্টারে তাঁরা বসিরহাট কলেজ ময়দানে অবতরণ করেন এবং সেখানেই প্রধানমন্ত্রী প্রশাসনিক বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বলেন, আমফান ঘূর্ণিঝড়-এ ক্ষতিগ্রস্ত পশ্চিমবাসীর জন্য ১০০০ কোটি টাকার বিশেষ সহায়তা দেবে কেন্দ্রীয় সরকার। সাথে তিনি যোগ করেন, কাল বিলম্ব দেরি না করে জরুরি ভিত্তিতে ওই আর্থিক সহায়তা রাজ্যের কাছে পৌছে দেওয়া হবে। তাঁর দাবি, এছাড়াও কেন্দ্রীয় সরকার প্রয়োজনীয় সমস্ত সহায়তা প্রদান করবে। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি সব ঘুরে দেখেছি। পশ্চিমবঙ্গের এই কঠিন সময়ে আমার সাথে সমগ্র দেশবাসী বাংলার পাশে থাকবে। বাংলা যাতে আবার দ্রুত ঘুরে দাঁড়াতে পারে, তার জন্য ভারত সরকার কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করবে। এদিন তিনি আরও ঘোষণা দেন, ঘূর্ণিঝড়ে মৃতদের পরিবারকে প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে ২ লক্ষ টাকা করে ও আহতদের পরিবারকে ৫০,০০০ টাকা করে দেওয়া হবে’।

প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার একাধিক ট্যুইটে প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, পুরো দেশ পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে রয়েছে। শুধু তাই নয়, ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যের ক্ষেত্রে কোনও কার্পণ্য করা হবে না। ট্যুইটে প্রধানমন্ত্রী লেখেন, “ঘূর্ণিঝড় আমফান-এ পশ্চিমবঙ্গের ধ্বংসলীলা দেখলাম। এটা কঠিন সময়। পশ্চিমবঙ্গের প্রতি সহমর্মিতার সঙ্গে রয়েছে পুরো দেশ। তিনি রাজ্যের মানুষের দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠার কামনা করেন। সাথে বলেন, স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফেরানোর নিরন্তর চেষ্টা থাকবে।

এদিন বাংলার পর ওড়িশায় চলে যান প্রধানমন্ত্রী মোদী । ওড়িশাতেও ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ফলে সেখানে উপকূলবর্তী এলাকায় ব্যাহত হয়েছে বিদ্যুৎ, টেলিকম যোগাযোগ ব্যবস্থা। ওড়িশা সরকারের তরফে জানানো হয়েছে সে রাজ্যে ৪৪.৮ লক্ষ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত।