রাজ্যে এসমা লাগু হলেও প্রয়োগ হয়নি : আইনমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১১ এপ্রিল৷৷ রাজ্যে এসমা লাগু হলেও, এখনও কারোর ওপর প্রয়োগ করা হয়নি৷ শনিবার সাফ জানালেন আইনমন্ত্রী রতনলাল নাথ৷ তাঁর কথায়, জরুরি পরিষেবা ব্যাহত হলে এই আইন প্রয়োগ করা হবে৷ কিন্তু আমরাও চাই না, আইনটি প্রয়োগ হোক৷


করোনা ভাইরাস মোকাবিলা এখন সারা বিশ্বের কাছে সবচেয়ে চ্যালেঞ্জের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও লড়াই চালিয়ে যেতে হচ্ছে৷ ত্রিপুরায় দুই করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে৷ এরই মধ্যে একাংশ স্বাস্থ্য কর্মী সুরক্ষা সামগ্রীর অভাবের অভিযোগ এনে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন৷ অথচ পর্যাপ্ত সুরক্ষা সামগ্রী মজুত রয়েছে এবং বিলি করা হয়েছে, তা পরবর্তী সময়ে প্রমাণিত হয়েছে৷ ওই ঘটনায় ১৮ জন স্বাস্থ্যকর্মীকে দফতর কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করেছে৷
মুখ্যমন্ত্রী করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় রাজ্যবাসীর স্বার্থে এসমা লাগু করা হয়েছে বলে ঘোষণা করেছেন৷ বিরোধীরা ত্রিপুরা সরকারের ওই সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেন এবং এসমা প্রত্যাহারের দাবি জানান৷


আজ আইনমন্ত্রী রতনলাল নাথ বলেন, ত্রিপুরায় এসমা লাগু করা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু এখনও কারোর ওপর প্রয়োগ করা হয়নি৷ তিনি বলেন, ২০১৯ সালের অক্টোবরে ত্রিপুরা সরকার বিধানসভায় ওই আইন পাশ হয়েছে৷ তাঁর দাবি, স্বাস্থ্য, পরিবহণ এবং খাদ্য দফতরের কাজকর্মে কোনও ব্যাঘাত যাতে না ঘটে তা সুনিশ্চিত করতে চাইছে ত্রিপুরা সরকার৷ সে-ক্ষেত্রে কর্মবিরতি কিংবা ধর্মঘটের পরিস্থিতি এড়ানোর জন্যই আইনটি লাগু করা হয়েছে৷ করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবিলায় এ-ছাড়া অন্য কোনও পথ খোলা ছিল না, বলেন তিনি৷


বিরোধী দলনেতা আজ স্বাস্থ্যকর্মীদের পি পি ই কিট নিয়ে বিক্ষোভ ও এসমা আইন প্রয়োগ সম্পর্কে যে অভিযোগ করেছেন তার প্রতি রাজ্য সরকারের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে৷ এ সম্পর্কে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, প্রথমত স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রয়োজনীয় পি পি ই প্রদানের ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে যে অভিযোগ শ্রী সরকার করেছেন তা সত্য নয়৷ কেননা এই পি পি ই কিট শুধুমাত্র ঙ্খঞ্জঝজ্জঙ্গক্ষ্ম১৯ রোগীদের সংস্পর্শে থাকা স্বাস্থ্যকর্মীদের দেওয়া হয়ে থাকে৷ বর্তমানে রাজ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণে (৪৫২৫টি) পি পি ই কিট রয়েছে৷ অতিরিক্ত ৮০০০টি পি পি ই কিটের জন্য অর্ডার দেওয়া হয়েছে৷ অযথা পি পি ই-এর ঘাটতি রয়েছে বলে গুজব ছড়ালে স্বাস্থ্যকর্মী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়াবে৷ গ্লাভস, মাস্ক, স্যানিটাইজার ইত্যাদির মত অন্যান্য সুুরক্ষা সামগ্রীরও ঘাটতি নেই রাজ্যে৷ কার্গো বিমানে নিয়মিতভাবে এসব সামগ্রী নিয়ে আসা হচ্ছে রাজ্যে৷


দ্বিতীয়ত বিরোধী দলনেতা জিবি হাসপাতাল ও ঊনকোটি জেলা হাসপাতালের নার্সদের দ্বারা ব্যক্তিগত সুুরক্ষা সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করলে তাঁদের বিরুদ্ধে এসমা প্রয়োগ করা হয়৷ এই অভিযোগের মূলে রাজ্য সরকার থেকে জানানো হয়েছে যে, মূলত: রাজ্যের জনসাধারণকে স্বাস্থ্য পরিষেবা দানের কাজে যাতে ব্যাঘাত না ঘটে সেজন্য এসমাজারি করা হয়েছে৷ যখন গোটা দেশ করোনা ভাইরাস মহামারির সাথে লড়াই করছে তখন রাজ্যের মানুষের জন্য স্বাস্থ্য পরিষেবা নিশ্চিত রাখা খুবই জরুরী৷ স্বাস্থ্য পরিষেবা এক জরুরী পরিষেবা ক্ষেত্র তাই বলে সেক্ষেত্রে যাতে কোন দল বা কর্মী ধর্মঘট করে এই পরিষেবায় ব্যাঘাত না ঘটাতে পারে তাই এই আইন বলবৎ করা হয়েছে৷ এই মূহুর্তে স্বাস্থ্যকর্মী হোক তার স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের অন্য কোন কর্মী যেমন সাফাইকর্মী, নিরাপত্তারক্ষী ইত্যাদি কারো দ্বারা ধর্মঘট করা মোটেও কাম্য নয়৷ এখানে মনে রাখতে হবে যে, স্বাস্থ্য পরিষেবাকে জরুরী পরিষেবা বলে ভারত সরকার লকডাউনের আওতার বাইরে রেখেছে৷ তাই স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের কোন পরিষেবায় ব্যাঘাত একেবারেই কাম্য নয়৷


ততীয়ত বিরোধী দলনেতা অভিযোগ করেছেন এসমা প্রয়োগ করা ন্যায়সঙ্গত নয় এবং স্বৈরাচারী পদক্ষেপ বলে যে অভিযোগটি করেছেন সেই সম্পর্কে জানানো হয়েছে, এই আইনটি প্রয়োগ করা হয়েছে এক মহৎ উদ্দেশ্য অর্থাৎ এই সংকটপূর্ণ মূহুর্তে রাজ্যবাসীর জন্য স্বাস্থ্য পরিষেবা অক্ষুন্ন রাখতে৷ এই পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে কোন দলের ধমর্ঘট ডাকা ন্যায়সঙ্গত নয়৷ তাই এসমা প্রয়োগ করে স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে যেকোন ধরণের ধর্মঘট নিষিদ্ধ করা হয়েছে৷


তা সত্বেও তাঁরা তাঁদের কোন অভিযোগ বা দাবি থাকলে উপযুক্ত পদ্ধতিতে জানাতে পারবেন৷
বিরোধী দলনেতার চতুর্থ অভিযোগটি ছিল সরকার মানুষের মত প্রকাশের অধিকারকে রোধ করতে চাইছে৷ এ সম্পর্কে জানানো হয়েছে, এই মূহুর্তে সমস্ত মানুষের একমাত্র চিন্তা হওয়া উচিত কিভাবে করোনা আক্রান্ত ও অন্যান্য রোগীদের প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য পরিষেবা দেওয়া যায়৷ রাজ্য সরকারের পদক্ষেপের একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল যাদের স্বাস্থ্য পরিষেবার দরকার তাঁদের জন্য এই পরিষেবা সুুনিশ্চিত করা৷ পি পি ই সম্পর্কে সঠিক তথ্য না জেনে মন্তব্য করা মানে মানুষের বিশেষ করে স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়ানো৷ এভাবে কোন একটি দলের দাবিকে সমর্থন না করে বিরোধী দলনেতার প্রকৃত তথ্য বিস্তারিতভাবে জানা প্রয়োজন ছিল৷ এই মূহুর্তে যদি তিনি এক্ষেত্রে ধর্মঘটকে সমর্থন করেন তাহলে সেটা খুবই দুঃখজনক৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *