করোনা আক্রান্ত মহিলার বাড়ির এক কিমি এলাকা জুড়ে সিল, যুদ্ধকালীন তৎপরতা প্রশাসনের

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৭ এপ্রিল৷৷ ত্রিপুরায় করোনা ভাইরাসে প্রথম মহিলা আক্রান্তের সন্ধান মিলতেই যুদ্ধকালীন প্রস্তুতিতে পরিস্থিতি মোকাবিলায় নেমে পড়েছে প্রশাসন৷ আক্রান্ত মহিলা উদয়পুর গকুলপুর এলাকার বাসিন্দা৷ তাই গকুলপুরের ১ কিমি এলাকা সিল করে দেওয়া হয়েছে৷ কেবল স্বাস্থ্য সম্পর্কিত জরুরি প্রয়োজনে মানুষ বাড়ি থেকে বের হতে পারবেন৷ এছাড়া, দোকানপাট, বাজারহাট সমস্ত কিছু বন্ধ রাখতে নির্দেশ দিয়েছে গোমতি জেলা প্রশাসন৷


মঙ্গলবার এ-বিষয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে গোমতির জেলাশাসক টি কে দেবনাথ বলেন, গত ১৮ মার্চ ওই মহিলা গুয়াহাটি থেকে ত্রিপুরাসুন্দরী এক্সপ্রেসে আগরতলার উদ্যেশ্যে রওনা হন৷ ওই ট্রেন ১৯ মার্চ পৌঁছে আগরতলায়৷ তার পর লোকাল ট্রেনে তিনি উদয়পুর যান এবং উদয়পুর স্টেশন থেকে অটো করে গকুলপুরের বাড়িতে যান তিনি৷ তাই যাঁরা ওই ট্রেনের এস-৪ ও এস-৫ বগিতে সফর করেছেন, তাঁদের মধ্যে যদি কোনও ধরনের কোভিড-১৯ (করোনা) সংক্রান্ত লক্ষণ থাকে, তবে অবশ্যই তাঁদের নিকটবর্তী স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যোগাযোগ করতে বলেছেন জেলাশাসক৷ সাথে তিনি ১৯ মার্চ আগরতলা লোকাল ট্রেনে উদয়পুর সফর করেছেন এমন কেউ কোনও লক্ষণ মনে হলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকদের সংস্পর্শে যেতে আহ্বান জানান তিনি৷ তাঁর আবেদন, রাজ্যবাসীর সুস্বাস্থ্যের জন্য এই গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষেত্রে গাফিলতি একদম করবেন না৷


এদিন জেলাশাসক বলেন, ওই মহিলার পরিবারের তিনজন, তাঁদের মধ্যে সাত বছরের বাচ্চা এবং গতকাল যে গাড়িতে করে মহিলা আগরতলার জিবি হাসপাতালে গিয়েছিলেন তার চালককে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে নেওয়া হয়েছে৷ সাথে তিনি যোগ করেন, ওই গ্রামের ২৯ জনকেও প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে ইতিমধ্যে নিয়ে যাওয়া হয়েছে৷ তাঁর বক্তব্য, সমস্ত বিষয়ে পর্যালোচনা চলছে৷ আরও কয়েকজনকে প্রয়োজনে কোয়ারেন্টাইনে নেওয়া হতে পারে৷


তাঁর কথায়, আক্রান্ত মহিলার বাড়ি থেকে চারিদিকে এক কিলোমিটার পর্যন্ত কোর এরিয়া হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে৷ সে অনুযায়ী ওই এলাকার কোনও মানুষ বাড়ি থেকে বের হতে পারবেন না৷ সমস্ত দোকানপাট বন্ধ থাকবে৷ তাদের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস প্রশাসনিকভাবে পৌঁছানো হবে৷ তিনি বলেন, পশ্চিম দিকে উদয়পুর ডন বসকো সুকল, দক্ষিণ দিকে হাউজিং বোর্ড চৌমুহনি, পূর্ব দিকে উদয়পুর বালিকা বিদ্যালয় এবং উত্তর দিকে গকুলপুর মসজিদ পর্যন্ত গোটা এলাকা সিল করা হয়েছে৷ সব মিলিয়ে প্রশাসনিক ব্যবস্থা দ্রুতগতিতে কাজ করে চলেছে৷ তবে জনগণেরও আমাদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে হবে৷


গোমতির জেলাশাসক আরও বলেন, আক্রান্ত মহিলা একেবারে ঘরোয়া প্রকৃতির৷ গ্রামীণ এলাকার মহিলারা যেমন পরিবার, গ্রামের মানুষের সাথে মেলামেশা করেন তেমনি গত কয়েকদিনে তিনি তাঁর দৈনন্দিন জীবন পার করেছেন৷ তিনি জানান, ওই মহিলা রেশনেও গিয়েছেন৷ তাঁর স্বামী উদয়পুর শহরের মূল বাজারে এসেছেন৷ বাজার করেছেন, ওষুধও কিনেছেন৷ ফলে ওই এলাকায় আক্রান্ত মহিলার সংস্পর্শে যাঁরা এসেছেন তাঁদের কোনও প্রকার করোনা ভাইরাস আক্রমণ সংক্রমিত উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার আবেদন জানান জেলাশাসক৷


তিনি বলেন, মহিলার কোনও বিউটি পার্লার নেই৷ তাছাড়া, আক্রান্ত মহিলার মেয়ের জামাই কিছুদিন আগে তাঁর বাড়িতে গিয়েছিলেন৷ তিনি পেশায় টিএসআর জওয়ান, অম্পিতে কর্মরত৷ তাঁকে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে৷ গোমতির জেলাশাসক ওই জায়গার লোকদেরও সজাগ ও সতর্ক থেকে সমস্যা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পরামর্শ দিয়েছেন৷ তাঁর দাবি, ওই মহিলার গতিবিধি, গত কয়েকদিনে কার সাথে মেলামেশা করেছেন তা উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো সকলের নৈতিক দায়িত্ব৷ বিশেষ করে উদয়পুর গকুলপুরের মানুষের এই দায়িত্ব পালন করতে হবে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *