নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৬ এপ্রিল৷৷ করোনার প্রকোপ থেকে বাদ গেল না ত্রিপুরাও৷ অবশেষে গোমতী জেলা সদর উদয়পুরের বাসিন্দা জনৈকা মহিলা করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন৷ আজ তাঁর করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের খবর সরকারী ভাবে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে৷ তিনি সম্প্রতি গুয়াহাটি সফর করেছিলেন৷ তাই মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব গত ১৮ মার্চ গুয়াহাটি থেকে আগরতলায় ত্রিপুরা সুন্দরী এক্সপ্রেসের এস৪ এবং এস৫ বগিতে যারা সফর করেছেন তাদের অতিসত্বর নিকটবর্তী স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যোগাযোগ করার আবেদন জানিয়েছেন৷ স্টেট সার্ভেইলেন্স অফিসার ডাঃ দ্বীপ কুমার দেববর্মা জানিয়েছেন, করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ওই মহিলা জিবি হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছেন৷ তাঁর শারিরিক অবস্থা বর্তমানে স্থিতিশীল৷ এদিক, রাতের মধ্যেই ওই মহিলার সংস্পর্শে থাকা ২৯জনকে কোয়ারেন্টাইনে নেওয়া হয়েছে৷ তাঁদের মধ্যে ওই মহিলার পরিবারের চারজন সদস্যও রয়েছেন৷ মহিলার পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সাত বছরের এক শিশুও রয়েছে৷
করোনা ভাইরাসের প্রকোপ সারা বিশ্বে দেখা দিয়েছে৷ ভারতও ওই ভাইরাসের প্রকোপ থেকে রক্ষা পায়নি৷ গতকাল পর্যন্ত দেশের ৩০টি রাজ্য করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিল৷ আজ প্রথমে দাদরা ও নগর হাবেলি এবং এরপর ত্রিপুরা ওই তালিকায় যুক্ত হয়েছে৷ আজ রাতে আগরতলা সরকারী মেডিকেল কলেজে সাংবাদিক সম্মেলনে স্টেট সার্ভেইলেন্স অফিসার ডাঃ দ্বীপ কুমার দেববর্মা জানান, কিছুক্ষণ আগে এক মহিলার করোনা ভাইরাসের রিপোর্ট পজেটিভ এসেছে৷ উদয়পুরের বাসিন্দা ওই মহিলা জিবি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন৷ তাঁর নমুনা পরীক্ষার পর রিপোর্ট পজেটিভ মিলেছে৷ তিনি জানান, নিশ্চিত হওয়ার জন্য তার নমুনা পুণেস্থিত এনআইভি-তে পাঠানো হয়েছিল৷ সেখান থেকেও তাঁর রিপোর্ট পজেটিভ বলে নিশ্চিত করেছে৷
ডাঃ দ্বীপ বলেন, গত ১৮ মার্চ ওই মহিলা গুয়াহাটি থেকে আগরতলায় এসেছেন৷ ৩১ মার্চ তিনি অসুস্থতা বোধ করেন৷ এরপর তিনি স্থানীয় চিকিৎসকদের সাথে যোগাযোগ করেন এবং চিকিৎসা নেন৷ কিন্তু, তাতে রোগ নিরাময় হচ্ছিল না দেখে গতকাল তিনি আইএলএস হাসপাতালে যান৷ সেখানে থেকে তাঁকে জিবি হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল৷ তিনি বলেন, জিবি হাসপাতালের চিকিৎসকরা তাঁকে মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তির পরামর্শ দেন৷ কিন্তু, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা তাঁকে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে সঙ্গে সঙ্গে আইসোলেশন ওয়ার্ডে স্থানান্তর করেন৷ ডাঃ দ্বীপ বলেন, আজ তাঁর নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল এবং তার রিপোর্ট পজেটিভ এসেছে৷ তিনি জানান, মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডে নতুন করে সেনিটাইজ করা হয়েছে৷ এমনকি, ওই ওয়ার্ডের সমস্ত রোগী ও স্বাস্থ্যকর্মীদের আগামী চৌদ্দ দিনের জন্য কোয়ারেন্টাইনে রাখা হবে৷
ডাঃ দ্বীপ বলেন, ওই মহিলার ভ্রমণের সমস্ত তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে৷ ইতিমধ্যে তিনি কোন ট্রেনে ও কোন বগিতে সফর করেছেন তার সমস্ত তালিকা বের করা হচ্ছে৷ ত্রিপুরায় ফেরার পর ওই মহিলার সংস্পর্শেন যারা এসেছে তাদের সকলকে খোঁজে বের করা হবে৷ তাঁর দাবি, রাতের মধ্যেই অধিকাংশদের খোঁজে বের করা সম্ভব হবে৷ কারণ গোমতী জেলা প্রশাসন ইতিমধ্যে খোঁজ শুরু করে দিয়েছে৷ ডাঃ দ্বীপ বলেন, ওই মহিলা গুয়াহাটিতে কামাখ্যা মন্দির দর্শনে গিয়েছিলেন৷
এই বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে, গত ১৫ মার্চ তিনি গুয়াহাটি গিয়েছিলেন৷ সেখান থেকে তিনি ১৯ মার্চ ত্রিপুরা সুন্দরী এক্সপ্রেসে আগরতলায় ফিরেছেন৷ রাত ১টা নাগাদ ত্রিপুরা সুন্দরী এক্সপ্রেস আগরতলা স্টেশনে পৌঁছেছিল৷ মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব এক ট্যুইট বার্তায় রাজ্যবাসীর কাছে আবেদন জানিয়েছেন, ১৮ মার্চ ত্রিপুরা সুন্দরী এক্সপ্রেসে এস৪ এবং এস৫ বগিতে সফর করে যারা গুয়াহাটি থেকে এসেছেন তারা অতিসত্বর নিকটবর্তী স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যোগাযোগ করুন৷ মুখ্যমন্ত্রীর আরও আবেদন, অযথা আতঙ্কিত হবেন না৷ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার সমস্ত ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ বাড়িতে থাকুন ও সুস্থ থাকুন৷
এদিকে, পশ্চিম ত্রিপুরা জেলা শাসক ইতিমধ্যে ওই মহিলার সংস্পর্শে যারাই এসেছেন তাদের যোগাযোগ করার জন্য একটি টিম গঠন করেছেন৷ একই ভাবে অন্যান্য জেলাতেও ওই টিম গঠন করা হয়েছে৷ তবে, ওই মহিলা ত্রিপুরায় আসার পর ৩১ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত কোথায় চিকিৎসা করেছেন তা খোঁজে বের করাও ভীষণ জরুরী হয়ে পড়েছে৷