বিশ্বজুড়ে ৩০০ কোটি মানুষকে লকডাউনে পাঠিয়েছে করোনাভাইরাস

নয়াদিল্লি, ২৬ মার্চ (হি.স.): অতিমহামারী করোনাভাইরাস লকডাউনে পাঠিয়েছে এক তৃতীয়াংশের বেশি মানুষকে । তিন মাস আগে চিনের হুবেই প্রদেশের উহান থেকে ভাইরাসটি ছড়াতে শুরু করেছিল কভিড-১৯ । এরই মধ্যে কভিড-১৯ এ আক্রান্তের সংখ্যা সাড়ে চার লাখ পেরিয়ে গেছে। মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ২১ হাজার।

চারদিকে আতঙ্ক ছড়ানো এ পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রসঙ্ঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, একটি সমন্বিত বৈশ্বিক প্রচেষ্টাই শুধু পারে প্রাণঘাতী এ ভাইরাসের প্রকোপ থামাতে পারে।সেইমত   করোনাভাইরাস মোকাবিলায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেওয়া কঠোর ও আগ্রাসী পদক্ষেপের কারণে পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশের বেশি মানুষ এখন লকডাউনে আছেন।যার ফলে এসব এলাকার মানুষের চলাচল যেমন সীমিত হয়েছে। তেমনি রাশ পড়েছে দৈনন্দিন জীবনব্যবস্থায়।
ইতালির পর স্পেনেও কভিড-১৯ এ মৃত্যুর সংখ্যা চিনকে ছাড়িয়েছে। ইউরোপের মধ্যে ফ্রান্সে মৃতের সংখ্যা হাজারের ঘর অতিক্রম করে দেড় হাজারের দিকে ছুটছে। আক্রান্তের সংখ্যায় তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, মৃত্যুর সংখ্যায় হাজারের ঘর ছাড়ানো আরেকটি দেশ হয়ে দাঁড়িয়েছে তারা।
আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের খবর অনুযায়ী বিশ্বের অন্তত ৮২টি দেশ সম্পূর্ণ কিংবা আংশিক লকডাউন ঘোষণা করেছে।যার ফলে প্রায় তিনশ কোটি মানুষ ঘরেই আটকে থাকতে বাধ্য হচ্ছে ।  এর মধ্যে আমাদের দেশ  ভারতেরই ১৩০ কোটি মানুষ গৃহবন্দি । ২৪ মার্চ ২১ দিনের জন্য লকডাউনের ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ।

বুধবার কভিড-১৯ এ আক্রান্ত আরও দুই রোগীর মৃত্যুর পর  রাশিয়াও লকডাউনের পথ ধরতে যাচ্ছে বলে অনুমান করা হচ্ছে। দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আগামী সপ্তাহের সব কার্যদিবসে সরকারি ছুটি ঘোষণা করেছেন, সংবিধান সংশোধনের গণভোট স্থগিত করেছেন। মানুষজনকে কর্তৃপক্ষের দেওয়া নির্দেশ মেনে চলারও অনুরোধ করেছেন তিনি।

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বাড়তে থাকায় বিপাকে মার্কিন  যুক্তরাষ্ট্র । সবচেয়ে বড় অঙ্গরাজ্য ক্যালিফোর্নিয়াসহ দেশটির ১৬ কোটিরও বেশি মানুষকে ঘরবন্দি থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
যুক্তরাজ্যেও আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বাড়ছে। বুধবার ব্রিটিশ সিংহাসনের উত্তরাধিকার প্রিন্স চার্লসের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। অবশ্য তার সংক্রমণ মৃদু বলে কর্মকর্তারা আশ্বস্ত করেছেন।

স্পেনে একদিনে ৭৩৮ জনের মৃত্যুর পর দেশটিতে করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা তিন হাজার ৪০০ অতিক্রম করেছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় চিকিৎসা উপকরণ কিনতে দেশটি বেইজিংয়ের সঙ্গে ৪৬ কোটি ৭০ লাখ ডলারের একটি চুক্তিও করেছে।

ইতালিতে মোট মৃত্যুর সংখ্যা শেষ খবর পর্যন্ত দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৫০৩ জনে। ফ্রান্স করোনাভাইরাসে বুধবার নতুন আরও ২৩১ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে। দেশটিতে মোট মৃতের সংখ্যা এক হাজার ৩০০ পেরিয়েছে। সংক্রমণ ঠেকাতে প্যারিসে মেট্রো ও রেল চলাচল সীমিত করা হয়েছে।
করোনাভাইরাস মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকাতেও ছড়িয়ে পড়ছে। ইরানে মৃতের সংখ্যা দুই হাজার পেরিয়েছে। আফ্রিকার মালি তাদের দেশে প্রথম কভিড-১৯ রোগীর সন্ধান পাওয়ার কথা জানিয়েছে। সংক্রমণ রুখতে মহাদেশটির বেশ কয়েকটি দেশ জরুরি অবস্থা জারি করেছে।

চলতি বছরের অলিম্পিক স্থগিত রাখা জাপানের রাজধানী টোকিওর গভর্নর করোনাভাইরাসের বিস্ফোরণ ঠেকাতে বাসিন্দাদের সপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে ঘরেই থাকার অনুরোধ জানিয়েছেন।
আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় আড়াই হাজার ও মৃত্যুর সংখ্যা পাঁচ জনে দাঁড়ানোর পর ইসরায়েলেও নাগরিকদের চলাচলের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে জেরুজালেমের চার্চ অব হোলি সেপুলক্রে।

করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্বজুড়ে যে অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতি হতে যাচ্ছে, তা এক দশক আগের মন্দার চেয়েও ভয়াবহ হবে বলে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন।

সংকট মোকাবেলায় বিশ্ব কী পদক্ষেপ নেবে, তা ঠিক করতে বৃহস্পতিবার জি-২০ দেশগুলো ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এক জরুরি বৈঠকে বসতে যাচ্ছে। বৈঠক করতে যাচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়নে থাকা ২৭ দেশও।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *