নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৮ ফেব্রুয়ারী৷৷ আজ বড়মুড়া ইকো পার্কে হর্নবিল পয়েন্টের উদ্বোধন করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব৷ পাশাপাশি পাঁচটি লগ হাটেরও উদ্বোধন করেছেন তিনি৷ নাগাল্যান্ডের বিখ্যাত হর্নবিল উৎসব ত্রিপুরায় পালনের মধ্য দিয়ে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সমস্ত রাজ্যের সংসৃকতির সাথে ত্রিপুরাবাসীর পরিচিতির এক ক্ষুদ্র প্রয়াস বলে মন্তব্য করেছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বন ও উপজাতি কল্যাণ মন্ত্রী মেবার কুমার জমাতিয়া, রাজ্য বিধানসভায় বিজেপি-র মুখ্য সচেতক কল্যাণী রায়, পিসিসিএফ ড় ডিকে শর্মা প্রমুখ৷
হর্নবিল হল এক অসাধারণ পাখি৷ তাদের বাঁকানো ঠোটের উপর একটি শিঙের মতো বেরিয়ে থাকা ঢাল থাকে যাকে কাস্ক বলা হয়৷ তারা অন্যান্য বন্য পাখির তুলনায় বৃহদাকার এবং মাংসল হয় তাদের বৃহৎ বাঁকানো ঠেঁট৷ তাদের চোখের পাশে উজ্জ্বল চামড়া এবং লম্বা চোখের পাতা থাকে৷ বেশিরভাগ হর্নবিলের গলায় থাকে ঝোলানো রঙিন চামড়ার ছোট থলি যার দ্বারা তারা ফল বা প্রিয় খাদ্য বহন করে৷ এই প্রজাতির পাখিরা সর্বভুক হয়৷ তারা ফল এবং ছোট প্রাণী আহার করে থাকে৷ হর্নবিল পাখির ৫৫টি প্রজাতি আছে৷ যার মধ্যে ভারতবর্ষে ৯টি প্রজাতির হর্নবিল পাখি দেখতে পাওয়া যায়৷ যার মধ্যে আবার ২টি আঞ্চলিক৷
হর্নবিলের ৯টি প্রজাতি হল গ্রেট হর্নবিল, মালাবার পাইড হর্নবিল, ইণ্ডিয়ান গ্রে হর্নবিল, মালাবার গ্রে হর্নবিল, ওরিয়েন্টাল পায়েড হর্নবিল, রুফাস নেকড হর্নবিল, রিডেডহর্নবিল, অস্টিন বাইন হর্নবিল এবং নারকনডাম হর্নবিল৷ উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সবর্োচ্চ বৈচিত্রমূলক ৫টি ভিন্ন প্রজাতির হর্নবিল দেখতে পাওয়া যায়৷ তাদের মধ্যে এক বিশাল সংখ্যক ওরিয়েন্টাল পাইড হর্নবিল সমগ্র উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ছড়িয়ে আছে৷ এই প্রজাতির হর্নবিল ত্রিপুরার বিভিন্ন প্রান্তে, বিশেষ করে বড়মুড়া পাহাড়ে দেখতে পাওয়া যায় যেখানে হর্নবিল উৎসব পালিত হচ্ছে৷
এদের প্রাকৃতিক বাসস্থান হল গ্রীষ্মমণ্ডল নিকটস্থ অঞ্চল বা ক্রান্তীয় অঞ্চল ঈষৎ আর্দ নিম্নভূমি বনাঞ্চল৷ ওরিয়েন্টাল পায়েড হর্নবিলের খাদ্য তালিকায় ফল, পোকামাকড়, খোলযুক্ত জলজ প্রাণী, ছোট সরীসৃপ, মাঝে মাঝে ছোট স্তন্যপায়ী জীব, পাখি এবং পাখির ডিম রয়েছে৷ অন্যান্য হর্নবিল প্রজাতির ন্যায় ওরিয়েন্টাল পাইড হর্নবিলও ফেব্রুয়ারি মাসে প্রজনন আরম্ভ করে৷ এই প্রক্রিয়া শুরু হয় বর্ষা ঋতু শুরুর সাথে সাথে বিভিন্ন এলাকায় যখন গাছে গাছে ফলের ফলন শুরু হয়৷
বড়মুড়া, খামতিংবাড়ি, নারায়ণবাড়ি এলাকায় স্থানীয় জনগোষ্ঠী এই পাখিগুলিকে সংরক্ষণ করে৷ ওরিয়েন্টাল পাইড হর্নবিলের সংখ্যা হ্রাস পাওয়ার অন্যতম কারণ হল পুরোনো গাছ ধংস৷ ফলে উপযুক্ত বাসস্থান এবং ফলযুক্ত গাছের অভাব পরিলক্ষিত হয়৷ হর্নবিলেরা এখন শিকারিদের শিকার হচ্ছে৷ (তাদের শিরস্ত্রান স্মারক হিসেবে এবং তাদের শরীরের চর্বি চিরাচরিত ঔষধ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে) এবং কিছু এলাকায় গৃহপালিত পাখি হিসেবে পালিত হয়ে থাকে৷ বর্তমানে সংরক্ষণের লক্ষ্যে বন্দি প্রজনন এবং পুনঃপ্রবর্তনের প্রচেষ্টা নেয়া হচ্ছে৷ অভিজ্ঞ কর্মীদের কারিগরি তত্ত্বাবধানে বন্দি প্রজনন প্রক্রিয়া সিপাহিজলা অভয়ারণ্যে বিরাট সাফল্য লাভ করেছে৷ একই ধরনের প্রচেষ্টা কৃত্রিম বাসস্থান তৈরির মাধ্যমে নেওয়া যেতে পারে (বিশেষ ডিজাইন সংবলিত গাছের লগ দ্বারা নির্মিত বনে তাদের প্রজননের প্রয়োজনীয়তা যাতে সম্পূর্ণতা লাভ করতে পারে তার জন্য বিকল্প প্রজনন কেন্দ্র হিসাবে)৷
হর্নবিল পাখি সম্পর্কে সচেতনতা তৈরিতে স্থানীয় সংসৃকতিকে আরো ঊধর্ে তুলে ধরা এবং স্থানীয় সম্প্রদায়গুলিকে আরও শক্তিশালী করার পাশাপাশি এই হর্নবিল উৎসব ইকো-ট্যুরিজমকে আরও বৃহৎ পরিসরে নিয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷ এই উৎসব ইকো ট্যুরিজমের সুুযোগ সম্প্রসারণের মাধ্যমে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জীবিকার সুুযোগ সুুবিধা বৃদ্ধি করবে৷ আতিথেয়তার ক্ষেত্রে এই সুুবিধাগুলি, বিশেষ করে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, প্রাকৃতিক সহায়তা, থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা, পরিবহণের সুুবিধা ইত্যাদির মতো পরিষেবা ইকো-ট্যুরিস্টদের যেমন আনন্দ দেবে এবং সারা জীবনের অভিজ্ঞতা দেবে তেমনি স্থানীয় সম্প্রদায়গুলির জীবিকা নির্বাহের জন্য বিরাট সুুযোগ করে দেবে৷ তবে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা এলাকাগুলিতে সফরের ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে যাতে এই এলাকাগুলি স্থানীয় সম্প্রদায়গুলির বসবাসের ক্ষেত্র সুুরক্ষিত থাকে, আবেদন করেন পিসিসিএফ ড় ডিকে শর্মা৷

