লখনউ, ২১ জানুয়ারি (হি.স.) : সিএএ নিয়ে কংগ্রেস সহ বিরোধী দলগুলির নিন্দায় মুখর হলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সিএএ কোনও ভাবেই প্রত্যাহার করা হবে না বলে জানিয়েছেন তিনি। রাম মন্দির ইস্যুতেও কংগ্রেসের নিন্দায় মুখর হন তিনি।
অমিত শাহ জানিয়েছেন, রাহুল গান্ধী এবং ইমরান খান একই ভাষায় কথা বলছেন। কিন্তু তা সত্বেও নরেন্দ্র মোদী সিএএ নিয়ে এসেছে। যাদের কাছে থাকার ঘর নেই, খাবার নেই। সেই সকল মানুষকে সম্মানিত করার কাজ করেছেন তিনি।
বিরোধী দলগুলির বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানোর অভিযোগ তুলেছেন অমিত শাহ। তিনি জানিয়েছেন, ‘আমরা বিরোধিতাকে ভয় পাই না। আমাদের জন্ম ও লালন-পালন বিরোধের মধ্যে দিয়ে হয়েছে। যারা বিরোধিতা করে চলেছেন করুন সিএএ প্রত্যাহারের কোনও প্রশ্নই ওঠে না। ৮৮৬৬২৮৮৬৬২ নম্বরে ফোন করে মোদীজিকে সমর্থন করার আহ্বান করেন তিনি।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জানিয়েছেন, সিএএ নিয়ে বিরোধী দলগুলি অপপ্রচার চালিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি করছে। সেই কারণেই বিজেপি জন জাগরণ কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। দেশের বিভাজনকামী শক্তির বিরুদ্ধে এই প্রচারাভিযান চলবে। সিএএ নিয়ে এসেছেন নরেন্দ্র মোদী। রাহুল গান্ধী, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, মায়াবতী, অখিলেশ, কেজরিওয়াল প্রত্যেকেই এই আইনের বিরুদ্ধে গিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে। এমনকি দাঙ্গাতেও মদত দেওয়া হচ্ছে।
তিনি জানিয়েছেন, সিএএ-র জন্য সংখ্যালঘুরা নাগরিকত্ব হারাবেন না। যদিও কোথাও নাগরিকত্ব হারানোর কথা বলা থাকে, তবে তা প্রমাণ করে দেখানো হোক। বিষয়টি নিয়ে অযথা বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে বিরোধী দলগুলি। বিষয়টি নিয়ে বিরোধীদের জনসমক্ষে আলোচনা করার চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন তিনি।
পাশাপাশি তিনি আরও জানিয়েছেন, কংগ্রেসের পাপের জন্য ধর্মের নামে দেশভাগ হয়েছিল। ১৯৪৭ সালের ১৬ জুলাই প্রস্তাব পাশ করিয়ে ধর্মের নামে দেশকে ভাগ করার সম্মতি দিয়েছিল কংগ্রেস। পাকিস্তান, আফগানিস্তান, বাংলাদেশ থেকে ধর্মের কারণে নিপীড়িত হয়েই ভারতে এসেছিল বহু শরণার্থী। তাদের নাগরিকত্ব দেওয়ার জন্য এই বিল আনা হয়েছে।
সিএএ নিয়ে অযথা রাজনীতি করা দলের নেতাদের কটাক্ষ উদ্বাস্তুদের দুঃখের জীবনের কথা তুলে ধরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জানিয়েছেন, যে ব্যক্তির কয়েক হেক্টর জমি ছিল সেই এখন নিজের পরিবারের সঙ্গে ঝুপড়িতে বসবাস করছে। ভিক্ষা করে সংসার টানতে হচ্ছে। পাকিস্তান, বাংলাদেশ, আফগানিস্তানে বসবাসকারি সংখ্যালঘুরা কোথায় গেল বলে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। তাঁর দাবি সে সকল দেশে ধর্মের নামে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় মানুষদের হত্যা করা হয়েছে। জোর করে ধর্ম পরিবর্তন করানো হয়েছে। সেই থেকে উদ্বাস্তুদের ঢল নামতে শুরু করেছে। প্রধানমন্ত্রী সেই সকল বঞ্চিত মানুষদের জীবন পুনরায় শুরু করার সুযোগ করে দিয়েছেন।
অমিত শাহ জানিয়েছেন, দেখতে পেয়েও যারা দেখতে পায়নি। কান থাকতেও যারা শুনতে পায়নি, তারা উদ্বাস্তুদের যন্ত্রণা কোনওদিনই বুঝবে না। পাকিস্তান, আফগানিস্তানের পাশাপাশি কাশ্মীরেও ধর্মের নামে মানুষকে যখন নিপীড়ন করা হচ্ছিল তখন এইসব স্বার্থপর নেতারা দেখতে পায়নি। যার যা ইচ্ছে করে নিক। সিএএ প্রত্যাহার করা হবে না।
মহাত্মা গান্ধী ১৯৪৭ সালে বলেছিলেন যে, পাকিস্তানে বসবাসকারি হিন্দু, শিখ ভারতে আসতে পারেন। তাঁদের নাগরিকত্ব, গৌরব দেওয়াটা ভারত সরকারের কর্তব্য হওয়া উচিত। একই কথা ভারতের দুই প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু এবং ইন্দিরা গান্ধীও বলেছিলেন। কিন্তু এখন এই সব কথা শুনতে চাইছে না কংগ্রেস। নাগরিকত্ব দেওয়া উদ্যোগ নেওয়া শুরু হওয়ার পর থেকে কংগ্রেস এর বিরোধিতা করে চলেছে। উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্ব দেওয়া হলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অসুবিধা কোথায়?
রাজস্থানে গত বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস নিজেদের ইস্তেহারে জানিয়েছিল যে পাকিস্তান থেকে আগত হিন্দু, শিখদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। এই প্রসঙ্গ উত্থাপন করে অমিত শাহ বলেন, ‘আপনারা করলে সঠিক, আর মোদী করলে আপনারা বিরোধিতা করেন?’
অমিত শাহ জানিয়েছেন, দুই বছর আগে জেএনইউ-তে দেশবিরোধী স্লোগান তোলা হয়েছিল। ভারত মাতার এক হাজার টুকরো করার আহ্বান যারা করে, তাদের জেলে পাঠানো উচিত। অন্যদিকে রাহুল এন্ড কোম্পানি বলছে এটা স্বাধীনতার অধিকারের জন্য করা হচ্ছে। ভারত মায়ের বিরুদ্ধে কিছু বললে তাদের জেলে পোড়া হবে।
তিনি জানিয়েছেন জওহরলাল নেহেরু যে ভুল করেছিলেন ৫ আগস্ট ২০১৯ সালে তা সংশোধন করেন নরেন্দ্র মোদী। ৩৭০ ধারা বিলুপ্তির পর সন্ত্রাসবাদ শেষ হতে চলেছে কাশ্মীরে। তিন তালাকও দূর মোদী সরকার করেছে। বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার এয়ারস্ট্রাইক এবং সার্জিক্যাল স্ট্রাইক করেছে। কংগ্রেস সেটিরও বিরোধিতা করেছে।
এদিন মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দেশের হিতের জন্য বড় বড় সিদ্ধান্ত নিয়ে চলেছেন। এর বিরুদ্ধে কুৎসিত পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। দেশবাসী কেন্দ্রের পাশে রয়েছে। শত্রুদের ভাষায় কথা বলছে কংগ্রেস এবং সপা।