বিফল হওয়া মানেই সাফল্যের দিকে একধাপ এগিয়ে যাওয়া : নরেন্দ্র মোদী

নয়াদিল্লি, ২০ জানুয়ারি (হি.স.): বিফল হওয়া মানেই সাফল্যের দিকে একধাপ এগিয়ে যাওয়া| পরীক্ষার অঙ্কে জীবন চলে না, পরীক্ষার নম্বর দিয়ে সব কিছু নির্ধারিত হয় না| নম্বর ভালো না হলে জীবন শেষ হয়ে গেল এমনটা কখনই নয়| সোমবার দিল্লির তালকোটরা স্টেডিয়ামে ‘পরীক্ষা পে চর্চা ২০২০’ অনুষ্ঠানে পড়ুয়াদের মুখোমুখি হয়ে এমনই মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী| পরীক্ষার ভয়-চিন্তা দূর করতে ছাত্র-ছাত্রীদের পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী| উত্তরও দিয়েছেন পড়ুয়াদের বিভিন্ন প্রশ্নের| ‘পরীক্ষা পে চর্চা ২০২০’ অনুষ্ঠানের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ২০২০ মানে নতুন দশক শুরু হল| এই দশকের জন্য পড়ুয়াদের বিশেষ শুভকামনা জানান প্রধানমন্ত্রী| তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী হিসেবে, বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠানে আমি অংশগ্রহণ করতে হয়| প্রতিটি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের মাধ্যমে নতুন নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন করি| যদি কেউ আমাকে জিজ্ঞাসা করেন, কোনও অনুষ্ঠান সবচেয়ে বেশি আপনার হৃদয় স্পর্শ করে, আমি বলব এই অনুষ্ঠান| আমি হ্যাকাথনেও অংশ নিতে অত্যন্ত পছন্দ করি| তাঁরা যুব-ভারতের শক্তি এবং প্রতিভা তুলে ধরে|’ প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘নবম শ্রেণিতে উঠলেই মাথায় চিন্তার ভার চেপে বসে| আমরা বিফলতার মধ্যেও সাফল্যের শিক্ষা পেতে পারি| বিফল হওয়া মানেই সাফল্যের দিকে একধাপ এগিয়ে যাওয়া|….জীবনের সাফল্যের মাপকাঠি পরীক্ষার নম্বর হয়ে গিয়েছে| কিন্তু, পৃথিবী অনেক বদলে গিয়েছে| পরীক্ষার অঙ্কে জীবন চলে না| পরীক্ষার নম্বর দিয়ে সব কিছু নির্ধারিত হয় না| নম্বর ভালো না হলে জীবন শেষ হয়ে গেল এমনটা নয়|’

‘পরীক্ষা পে চর্চা ২০২০’ অনুষ্ঠানে চন্দ্রযান-২ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘কিছু মানুষ আমাকে বলেছিলেন ‘কোনও নিশ্চয়তা নেই, ব্যর্থ হলে কী হবে’, তাই ইসরো-তে না যাওয়ার জন্য বলেছিলেন| আমি তাঁদের বলেছিল, সেই কারণেই আমি সেখানে যাব| বাকিটা কী হয়েছে আপনারা টিভিতে দেখেছেন|’ ক্রিকেট প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘২০০১ সালে ভারত-অস্ট্রেলিয়া টেস্ট সিরিজের কথা মনে আছে? ব্যর্থতার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিল আমাদের ক্রিকেট দল, মেজাজও দুর্দান্ত ছিল না| কিন্তু, রাহুল দ্রাবিড় এবং ভি ভি এস লক্ষ্মণ কীভাবে ম্যাচটি ঘুরিয়ে দিয়েছিলেন, তা আমরা কখনই ভুলতে পারি না| এটাই ইতিবাচক চিন্তাভাবনা এবং প্রেরণার শক্তি|’

ছাত্র-ছাত্রীদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী এদিন বলেছেন, ‘ভালো নম্বর পাওয়াটাই সব নয়| পরীক্ষাই জীবনের সব, এই ধারণা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে|’ এক ছাত্রী প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন করেন, পড়াশোনা ও কো-কারিকুলার অ্যাক্টিভিটির মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা সম্ভব কীভাবে? উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘পড়াশোনার পাশাপাশি খেলা ও অন্যান্য কাজকর্মেও যুক্ত থাকতে হবে| কো-কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিজ না করলে ব্যক্তি রোবট হয়ে যায়| এ জন্য টাইম ম্যানেজমেন্ট করতে হবে| এখন প্রচুর প্রযুক্তি রয়েছে| আশা করব যুব সম্প্রদায় সদ্ব্যাবহার করবে|’ প্রধানমন্ত্রীর কথায়, ‘অভিভাবকদের ক্ষেত্রে শিশুদের নানারকম ট্রেনিং দেওয়া এখন ফ্যাশন| তখন পড়াশোনার মতো এসব নিয়েও চাপ দিতে শুরু করে| শিশুদের পক্ষে এটা কঠিন হয়ে যায়| সন্তানরা কীসে আগ্রহী সেটা বোঝাটা জরুরি|’ স্মার্টফোনের অপব্যবহারের প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রীর বার্তা, ‘স্মার্টফোন আমাদের অনেকখানি সময় চুরি করে নেয়| তার থেকে আমাদের বাঁচতে হবে| নতুন প্রযুক্তিকে গ্রহণ করতে হবে, কিন্তু দাসত্ব হওয়া চলবে না| প্রযুক্তি মানুষের সঙ্গে দূরত্ব বাড়িয়ে দিয়েছে| আমরা এখন পরস্পরের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাত্ কথাবার্তা কমিয়ে দিয়েছি|’

অরুণাচল প্রদেশের এক ছাত্রী প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন করেন নাগরিক কর্তব্য নিয়ে| উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘ভারতের উত্তর-পূর্ব অত্যন্ত সুন্দর জায়গা| ভারতের মধ্যে অরুণাচল প্রদেশই একমাত্র রাজ্য যেখানে, ‘জয় হিন্দ’ বলে মানুষ একে-অপরকে শুভেচ্ছা জানান| এটি বিরল| আপনাদের উত্তর-পূর্বে যাওয়া উচিত| অধিকার এবং কর্তব্য কখনই আলাদা নয়| আমাদের কর্তব্যেই সবার অধিকার নিহিত আছে| এত বড় দেশে রাষ্ট্রেরও কিছু কর্তব্য রয়েছে| দেশের অর্থনীতির উন্নতি হলে উপকার হবে আজকের ছাত্রদেরও|’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *