আগরতলা, ১৭ জানুয়ারি (হি.স.) : একই দেশে কেউ শরণার্থী হতে পারেন না। তাই, মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে ব্রু শরণার্থীদের ত্রিপুরায় পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে। শুধু তা-ই নয়, কাঞ্চনপুরে বসবাসকারী অ-উপজাতি উদ্বাস্তুদেরও পুনর্বাসন দেওয়া হবে। আজ ব্রু শরণার্থী এবং অ-উপজাতি উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসন নিয়ে এই প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব।
প্রসঙ্গত, মিজোরাম থেকে ত্রিপুরায় আগত রিয়াং শরণার্থীদের স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে গতকাল দিল্লিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের নেতৃত্বে যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে তাকে ঐতিহাসিক পদক্ষেপ বলে উল্লেখ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব৷ আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় মহাকরণের প্রেস কনফারেন্স হল-এ এক সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী এই চুক্তি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোকপাত করেন৷ ব্রু শরণার্থীদের সাথে কাঞ্চনপুরে বসবাসকারী অ-উপজাতি উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। সাংবাদিক সম্মেলনে উপমুখ্যমন্ত্রী জিষ্ণু দেববর্মা, রাজস্বমন্ত্রী নরেন্দ্রচন্দ্র দেববর্মা এবং আইনমন্ত্রী রতনলাল নাথ উপস্থিত ছিলেন৷ রাজ্যের ২৩ বছরের এক সমস্যার দীর্ঘস্থায়ী সমাধানের জন্য মুখ্যমন্ত্রী দেব প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্টমন্ত্রী অমিত শাহকে রাজ্যের জনগণের পক্ষে কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানান৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, পূর্বতন সরকার এই সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য কোনও উদ্যোগ নেয়নি৷ আগ্রহ থাকলে আগেই এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান হত৷
মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব বলেন, নতুন চুক্তির ফলে রাজ্যে আশ্রয় নেওয়া ৫,৪০০ রিয়াং পরিবারের ৩৪ হাজার উদ্বাস্তুদের স্থায়ী পুনর্বাসন হিসেবে কেন্দ্রীয় সরকার ৬০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে৷ প্রত্যেক পরিবার পিছু এককালীন চার লক্ষ টাকার ফিক্সড ডিপোজিট করা হবে, যা দু’বছর পর নগদে পাওয়া যাবে। তাঁর দাবি, এছাড়াও দু’বছর যাবৎ প্রতিটি পরিবারকে নিঃশুল্ক রেশনের ব্যবস্থা করার পাশাপাশি মাসিক ৫,০০০ টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে৷ শুধু তা-ই নয়, প্রত্যেকটি পরিবারের জন্য রাজ্য সরকারের তরফে দেড় গণ্ডা করে ভূমির উপর দেড় লক্ষ টাকা ব্যয় করে গৃহনির্মাণ করে দেওয়া হবে, বলেন তিনি৷
মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, রিয়াং শরণার্থীদের মধ্যে যারা মিজোরামে যেতে আগ্রহী তাদেরকেও মিজোরামে একই প্যাকেজে সুবিধা প্রদান করা হবে৷ এই প্যাকেজ কার্যকর করার জন্য প্রয়োজনীয় পদ্ধতি ও প্রক্রিয়া শুরু করা হবে৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যে জমির সঙ্কট রয়েছে৷ তদুপরি রিয়াং জনজাতিদের তাদের চিরাচরিত সংস্কৃতি ও প্রথা অনুযায়ী ক্লাস্টারভিত্তিতে রাজ্যে যেখানে যেখানে জায়গার সুবিধা রয়েছে সেখানেই তাদের বসতির ব্যবস্থা করা হবে৷ সেক্ষেত্রে রিয়াং অধ্যুষিত এলাকাকে প্রাধান্য দেওয়া হবে৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, একই দেশে কেউ শরণার্থী হতে পারে না৷ একে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা আবশ্যক এবং সেই কারণেই মানবিক সমাধানে কেন্দ্রীয় সরকার সদর্থক ভূমিকা নিয়েছে৷
এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কাঞ্চনপুরে অ-উপজাতি সম্প্রদায়ের যে সমস্ত পরিবার বাড়িঘর ছাড়া রয়েছেন তাদের বিষয়ে সরকার সহানুভূতিশীল৷ রাজ্য সরকার মনে করে জাতি-জনজাতি সম্প্রদায়ের পারস্পরিক সহাবস্থানের মাধ্যমেই রাজ্যের প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব৷ অ-উপজাতিদের উদ্বাস্তুদেরও পুনর্বাসনে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে আলোচনা হয়েছে। তাঁদেরও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে। কিছু কিছু দুষ্কৃতকারী যারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চাইছে তাদের বিরুদ্ধে সরকার শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবে৷