আগরতলা, ১১ জানুয়ারি (হি.স.) : এবার ‘মেড ইন ত্রিপুরা’-র স্লোগান দিলেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব। রাজ্যে উৎপাদিত পণ্যসামগ্রীকে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারজাতকরণের জন্য ‘মেড ইন ত্রিপুরা’র উদ্যোগ শুরু করা হবে বলে জানালেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’-র অনুকরণে ত্রিপুরায়ও এই ধরনের ভাবনা বাস্তবায়নের আহ্বান রেখেছেন তিনি। তাঁর কথায়, সঠিক উপায়ে ত্রিপুরায় উৎপাদিত পণ্যের চাহিদা দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে বৃদ্ধি করে রাজ্যের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করা যাবে। শনিবার রাজধানীর প্রজ্ঞাভবনে প্রধানমন্ত্রী বনধন যোজনার উদ্বোধন করে এ কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী।
মুখ্যমন্ত্রী এদিন দাবি করেন, জনজাতি অংশের মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে কাজ করে চলেছে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার। সে-ক্ষেত্রে বনজ সম্পদকে কাজে লাগিয়ে দীর্ঘদিনের শোষণ থেকে জনজাতি মানুষকে মুক্তি দিতে প্রচেষ্টা জারি রেখেছে ত্রিপুরা সরকার।
তাঁর বক্তব্য, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় সরকার এখন পর্যন্ত যতগুলি প্রকল্প চালু করেছে সবগুলিতে সাফল্যের মুখ দেখেছে ত্রিপুরা। এ প্রসঙ্গে তিনি উজ্জ্বলা যোজনা, সৌভাগ্য যোজনা, আয়ুষ্মান ভারত যোজনার সাফল্যের তথ্য তুলে ধরেন। উজ্জ্বলা প্রকল্পে ৯০ শতাংশ সাফল্য পেয়েছে রাজ্য, সৌভাগ্য যোজনায় ১০০ শতাংশ সফল বলে তিনি দাবি করেন। তাঁর কথায়, রাজ্যে সাড়ে ৮ লক্ষ পরিবারকে আয়ুষ্মান কার্ড বিতরণ করা হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব বলেন, আত্মসহায়ক দলের মাধ্যমে পাহাড়ি অঞ্চলের জনগণের জীবনমান উন্নয়নে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে ১১টি প্রকল্প পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে নয়টি প্রকল্প ইতিমধ্যেই অনুমোদিত হয়েছে। এই প্রকল্পগুলির কাজ বাস্তবায়িত করতে কেন্দ্রীয় সরকার ১ কোটি ২১ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা দিতে সম্মত হয়েছে, জানান তিনি।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি উত্তরপূর্ব ভারতকে এক নতুন দিশায় নিয়ে যেতে চাইছেন। এই অঞ্চলের প্রত্যেকটি পাহাড়ি এলাকায় পাইপলাইনের মাধ্যমে প্রাকৃতিক গ্যাস পৌঁছে দিতে পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। তিনি বলেন, মা ত্রিপুরসুন্দরীর আশীর্বাদ নিয়ে দেশের মধ্যে ত্রিপুরাকে প্রথম সিএনজি রাজ্য করার পরিকল্পনা নিয়েছেন। চলতি বছরের মার্চ মাস থেকেই কাজ শুরু হবে বলে দাবি করেন তিনি।
এদিন বনধন প্রকল্পের মাধ্যমে মৌমাছি প্রতিপালনের দ্বারা স্বাবলম্বী হওয়ার আহ্বান রাখেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, মধু সংরক্ষণে নতুনত্ব নিয়ে আসা হচ্ছে। খাদি ও গ্রামোদ্যোগ পর্ষদের সহায়তায় ইতিমধ্যে ২,০০০ মধু চাষিকে মৌমাছি প্রতিপালনের সরঞ্জাম প্রদান করা হয়েছে। বনজ সম্পদ ধ্বংস না করে তাকে কাজে লাগিয়ে জনজাতিদের রোজগারের পথ তৈরি করার আহ্বান রাখেন তিনি। কীভাবে উন্নত প্রযুক্তিতে রাজ্যে উৎপাদিত আনারস, কাঁঠালের মতো ফলকে প্রক্রিয়াকরণ করে বাজারজাত করা যায়, সেই লক্ষ্যে সরকার কাজ করছে, সে কথাও তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ত্রিপুরা থেকে আগর সরাসরি দুবাই পাঠানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এতে আগর চাষিরা লাভবান হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। তাঁর কথায়, উত্তরপূর্ব ভারতকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া দেশগুলির প্রবেশদ্বার বানাতে চাইছেন প্রধানমন্ত্রী। সে-জন্যই উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হয়েছে। এ-বিষয়ে তিনি জোরাম থাঙ্গা এবং পিএ সাংমার নাম উল্লেখ করে কটাক্ষের সুরে বলেন, অতীতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা তাঁদের কাছে উত্তরপূর্ব ভারতের রাজ্য, রাজধানী কোথায় জানতে চাইতেন। অন্যদিকে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ত্রিপুরার আইপিএফটি দলের প্রধান এনসি দেববর্মার পরিবার সম্পর্কেও খোঁজ রাখেন।