সমাজ গঠনে পুলিশের দায়িত্ব সবথেকে বেশি : ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী

আগরতলা, ৯ জানুয়ারি (হি. স.) : পুলিশ সপ্তাহ উদযাপনের মূল লক্ষ্য হচ্ছে জনসাধারণ ও পুলিশের মধ্যে আরও নিবিড় সংযোগ স্থাপন এবং পারস্পরিক সমন্বয়সাধন৷ সমাজের বিশিষ্টজন সহ জনজাতি সমাজের দলপতিদের সঙ্গে পুলিশের বিভিন্ন স্তরের আধিকারিকের নিবিড় সংযোগ থাকলে সমাজের প্রতি একটি সুুস্পষ্ট ধারণা পুলিশের মধ্যে সৃষ্টি করবে৷ এটা পুলিশের কাজের পক্ষে সহায়ক হবে৷ আজ অরুন্ধতীনগরস্থিত মনোরঞ্জন দেববর্মা স্মৃতি স্টেডিয়ামে পুলিশ সপ্তাহ-২০২০ উদযাপন উপলক্ষে প্যারেড ও কুচকাওয়াজের অভিবাদন গ্রহণ করে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব এ-কথা বলেন৷ প্যারেড ও কুচকাওয়াজে আরক্ষা প্রশাসনের মোট ৮টি প্ল্যাটুন অংশগ্রহণ করেছে৷ এরমধ্যে টি এস আর, ট্রাফিক পুলিশ, মহিলা পুলিশ, পশ্চিম ত্রিপুরা জেলা পুলিশ এবং হোমগার্ডের জওয়ানগণ রয়েছেন৷

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সমাজের আয়না হচ্ছে পুলিশ৷ তাই সমাজ গঠনে পুলিশের দায়িত্বও সবথেকে বেশি৷ তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের সময়কালের ১১ মাসের মধ্যে মহিলা সংক্রান্ত অপরাধে অপরাধীদের কঠোর শাস্তিও হয়েছে৷ পুলিশের সঠিক পদক্ষেপ, আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ এবং বিচার ব্যবস্থায় সঠিক সময়ে প্রমাণপত্র পেশ করার ফলেই তা সম্ভব হয়েছে৷ তিনি বলেন, রাজনৈতিক কোনও প্রকার হস্তক্ষেপ না থাকায় পুলিশের নিজস্ব বিচার বিবেচনা এখন প্রকাশ পাচ্ছে৷ তাদের কাজের মধ্যে সময়ানুবর্তিতা সৃষ্টি হয়েছে৷ বেড়েছে দায়বদ্ধতা৷

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সম্প্রতি এন ই সি বৈঠকে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে ড্রাগস মুক্ত করার সংকল্প নিয়েছেন৷ এই অভিযান শুরু হয় আমাদের রাজ্য থেকেই৷ ড্রাগস বিরোধী অভিযানের জন্য পূর্বে পুলিশকে সময়ে সময়ে সচেতন করতে হতো৷ বর্তমানে পুলিশ নিজে থেকেই রাজ্যের যুব সমাজকে ড্রাগস মুক্ত করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ অবলম্বন করছে৷ তিনি বলেন, গত ২০ মাসে বিভিন্ন অভিযোগে ৯৮৭টি মামলা নথিভুক্ত হয়েছে৷ ৪,৯৯২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ মহিলাদের উপর অপরাধের হার ১০ শতাংশ কমেছে৷ এই ক্ষেত্রে ত্রিপুরা পুলিশের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে বিট কনস্টেবলদের গ্রামে গ্রামে ঘুরতে দেখে মহিলাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস গড়ে উঠেছে৷ তিনি আরও বলেন, বর্তমান সময়ে রক্তদান, প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতো বিভিন্ন সামাজিক কর্মসূচিতেও ত্রিপুরা পুলিশ সহ আরক্ষা বাহিনীর জওয়ানদের স্বতস্ফূর্ত অংশগ্রহণ পরিলক্ষিত হচ্ছে৷ এই প্রচেষ্টাকে ধারাবাহিক রূপ দেওয়ার জন্য আহ্বান জানান মুখ্যমন্ত্রী৷ তিনি বলেন, জনগণের সঙ্গে পুলিশের নিবিড় সংযোগ আরও অটুট করার লক্ষ্যে রাজ্যের প্রত্যেকটি গ্রামে একজন করে গ্রামসেবক নেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে৷

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, পুলিশ কর্মীদের সুুষ্ঠ জীবনযাপনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সুুযোগ প্রদানের জন্য সরকার সচেষ্ট৷ সরকার তাদের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের উদ্যোগ নিচ্ছে৷ তিনি বলেন, রাজ্যে নতুন সরকার আসার পর থেকে পরিকাঠামো, স্বাস্থ্য, প্রশাসনিক ব্যবস্থা, স্বচ্ছ নিয়োগনীতি, ডিজিটালাইজেশন, ই-পিডিএস ইত্যাদি বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে৷ একই সঙ্গে রাজ্যের যুবাদের রোজগার সাধন, অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে সুুদৃঢ় করা সহ রাজ্যকে স্বনির্ভর করে গড়ে তুলতেও সরকার বদ্ধপরিকর৷ বর্তমানে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই কাজগুলি এখন একটা গতি নিয়ে এগিয়ে চলছে বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন৷

অনুষ্ঠানে রাজ্য পুলিশের ভারপ্রাপ্ত মহানির্দেশক রাজীব সিং রাজ্যের পুলিশ, টি এস আর, হোমগার্ড, এস পি ও কর্মীগণ যারা রাজ্যের শান্তি সম্পীতি বজায় রাখতে গিয়ে আত্মবলিদান দিয়েছেন তাদের মরণ করেন৷ তিনি বলেন, পুলিশ সপ্তাহ উদযাপনের মাধ্যমে বছরের সার্বিক কাজকর্মের পর্যালোচনার পাশাপাশি পুলিশ বাহিনীর আরও গুণগত উৎকর্ষতা বাড়ানোর উপরও জোর দিতে হবে৷ তিনি বলেন, এবছর পুলিশ সপ্তাহ উদযাপনের অঙ্গ হিসেবে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে৷ পুলিশ গ্যালারির উদ্বোধন, বসে আঁকো প্রতিযোগিতা, হস্ত শিল্প প্রদর্শনী, ফিট ইণ্ডিয়া-সুুস্থ ত্রিপুরা থিমের উপর ২১ কিলোমিটার আগরতলা হাফ ম্যারাথন দৌড় প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে৷ তিনি আরও বলেন, নিরাপত্তা রক্ষায় বিট পেট্রোলিং ব্যবস্থা পুনরায় চালু করে ২৬১টি মোটর সাইকেল দেওয়া হয়েছে৷ ইমার্জেন্সি রেসপন্স সাপোর্ট সিস্টেম যেটা পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, অ্যাম্বলেন্স পরিষেবা জরুরি ভিত্তিতে মানুষ পেতে পারেন তার জন্য ১১২ নম্বর ডায়াল পরিষেবা চালু করা হয়েছে৷ পুলিশের নতুন মুখ্য কার্যালয় গড়ে তোলার জন্য নিউ ক্যাপিটেল কমপ্লেক্স সংলগ্ন এলাকায় প্রয়োজনীয় জমির ব্যবস্থা করে দেওয়ায় তিনি মুখ্যমীকে ধন্যবাদ জানান৷

পুলিশ সপ্তাহ উদযাপনের অঙ্গ হিসেবে রাজ্য পুলিশের উল্লেখযোগ্য কাজের স্বীকৃতি হিসেবে এবং নেশা বিরোধী অভিযান ও অপরাধ দমনে অসামান্য কৃতিত্বের জন্য পুলিশ ম্যান অব দ্য ইয়ার-২০১৯ প্রদান করা হয় সিপাহীজলা জেলার ভারপ্রাপ্ত অতিরিক্ত পুলিশ সুুপার জ্যোতিমান দাস চৌধুরীকে৷ শ্রেষ্ঠ থানা-২০১৯-এর সম্মান অর্জন করেছে খোয়াই থানা৷ শ্রেষ্ঠ টি এস আর ব্যাটেলিয়ন-২০১৯-এর স্বীকৃতি পেয়েছে টি এস আর-এর পঞ্চম বাহিনী৷ মহিলা সংক্রান্ত অপরাধের মামলায় উল্লেখযোগ্য তদন্ত কাজের জন্য শ্রেষ্ঠ তদন্তকারী পুলিশ আধিকারিক হিসেবে সম্মান লাভ করেন সাব-ইন্সপেক্টর রুবিবালা বৈদ্য (সিংহ)৷ এছাড়াও ত্রিপুরা পুলিশের শ্রেষ্ঠ মিনিস্ট্রিয়াল স্টাফ-২০১৯-এর পুরস্কার পেয়েছেন চয়ন দেব৷ সম্মান প্রাপকদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব৷ অনুষ্ঠানে এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ত্রিপুরা মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন বর্ণালী গোস্বামী সহ পুলিশ প্রশাসনের উচ্চপদস্থ আধিকারিকগণ৷ পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে মনোরঞ্জন দেববর্মা মতি স্টেডিয়ামে ত্রিপুরা পুলিশের উদ্যোগে রক্তদান শিবিরের আয়োজন করা হয়৷ অনুষ্ঠান শেষে মুখ্যমন্ত্রী সহ অতিথিগণ রক্তদান শিবির পরিদর্শন করেন৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *