ধর্ষকদের শাস্তির দাবিতে ফের উত্তাল দিল্লির রাজপথ

নয়াদিল্লি, ৭ ডিসেম্বর (হি.স.) :  ধর্ষকদের দ্রুত শাস্তির দাবিতে ফের সাধারণ মানুষের বিক্ষোভ দিল্লির রাজপথে | পর পর ধর্ষন | উন্নাওয়ের নির্যাতিতার মৃত্যুতে যা ধৈর্য্যের বাধ ভেঙে দেয়| মহিলা নিরাপত্তা দিতে সরকারি ব্যর্থতাকে দায়ী করে মানুষের প্রতিবাদের ঢল নামল রাজধানী দিল্লিতে । শনিবার বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে দিল্লির রাজপথ । পুলিশের ব্যারিকেড ভাঙল বিক্ষোভকারীরা। বিক্ষোভকারীদের হঠাতে জলকামান ছোঁড়ে পুলিশ । অন্যদিকে, দিল্লির রাজঘাট থেকে মোমবাতি মিছিল করে ইন্ডিয়া গেট পর্যন্ত পৌঁছান কলেজ পড়ুয়া থেকে বৃদ্ধারাও। হাতে জাতীয় পতাকা নিয়ে মিছিলে হাঁটতে দেখা যায় অনেককেই।

হায়দরাবাদ, উন্নাও সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নিত্য ঘটে চলেছে ধর্ষণের ঘটনা | দেশ দুড়ে একের পর ক্রমবর্দ্ধমান ধর্ষণ ও মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধের প্রতিবাদে ফের রাজপথে মানুষ | ২০১২-র দিল্লি নির্ভয়া কাণ্ডে দাবি ছিল, ধর্ষকদের শাস্তি চাই। ২০১৯-এ ফের রাজপথে মানুষের বিক্ষোভের দাবিও একই, ধর্ষকদের শাস্তি চাই। উন্নাওয়ের নির্যাতিতার শরীরের ৯০ শতাংশই পুড়ে গিয়েছিল। তড়িঘড়ি চিকিত্সার জন্য তাঁকে বিমানে করে দিল্লির সফদরজঙ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছিল। কিন্তু শেষপর্যন্ত বাঁচানো গেল না তাঁকে। গতকাল রাতেই মারা যান তিনি। এই ঘটনার কয়েক ঘন্টা পরেই প্রতিবাদে উত্তাল উত্তরপ্রদেশ থেকে শুরু করে রাজধানী দিল্লি। উন্নাওয়ের নির্যাতিতার মৃত্যুতে নাগরিকদের ক্ষোভ, মহিলা নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ সরকার। তেলঙ্গানা-উন্নাওয়ের পরপর গণধর্ষণ-খুনের ঘটনার প্রতিবাদে দিল্লির রাজপথে স্বতঃফুর্ত প্রতিবাদে সামিল হয়েছেন নাগরিকরা। শনিবার বিকালে দিল্লির ইন্ডিয়া গেটের কাছে মিছিল আটকে দেয় পুলিশ। তবে ব্যারিকেড ভেঙে এগনোর চেষ্টা করেন বিক্ষোভকারীরা। এরপরই বিক্ষোভকারীদের হটাতে জলকামান ব্যবহার করে পুলিশ।  পুলিশি তাণ্ডবে জখম হন বেশ কয়েকজন। কিন্তু পুলিশের লাঠির কাছে না দমে মোদী–যোগীর বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়ে প্রতিবাদ চালিয়ে যাচ্ছেন আন্দোলকারীরা। তাঁদের অভিযোগ, সরকার বদল হলেও কেন মেয়েদের নিরাপত্তা মিলছে না। ধর্ষকরা কেন শাস্তি পাচ্ছে না। ধর্ষকদের মৃত্যুদণ্ডের দাবি জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। দিল্লি পুলিশের জনসংযোগ অফিসার এম এস রনধাওয়া পুলিশি তাণ্ডবের সাফাইয়ে বলেন, বিক্ষোভকারীরা যেহেতু মশাল জ্বালিয়েছিল তাই অগ্নিকাণ্ড এড়াতেই জলকামান দেগেছিল পুলিস।

অন্যদিকে, আজ দিল্লির রাজঘাট থেকে মোমবাতি মিছিল করে ইন্ডিয়া গেট পর্যন্ত পৌঁছান কলেজ পড়ুয়া থেকে বৃদ্ধারাও। হাতে জাতীয় পতাকা নিয়ে মিছিলে হাঁটতে দেখা যায় অনেককেই।

শনিবারের অগ্নিগর্ভ রাজধানীর ছবিটা ফিরিয়ে আনল সাত বছর আগে নির্ভয়াকাণ্ডের স্মৃতি। ২০১২–র ১৬ ডিসেম্বর হোয়াইটলাইনারের বাসে গণধর্ষিতা হয় ২৩ বছরের প্যারামেডিক্যাল ছাত্রী নির্ভয়া। তারপর তাঁর প্রতি ন্যায়বিচারের দাবিতে ডিসেম্বর–জানুয়ারিতে দিল্লির কনকনে ঠান্ডায় রাস্তায় বসে বিক্ষোভ দেখিয়েছিল সারা দেশ। ২০১৯ এরপর ফের গত কয়েকদিন ধরে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যেভাবে গণধর্ষনের ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে যা সাধারণ মানুষের মনে আলোড়ন তৈরি করেছে | যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য গত ২৭ নভেম্বরের ঘটনা | ওই দিন তেলঙ্গানার সামশাবাদের টোন্ডুপল্লি টোল প্লাজার কাছে ২৬ বছরের পশু চিকিৎসককে চার মদ্যপ দুষ্কৃতী গণধর্ষণের পর শ্বাসরোধ করে খুন করে। তারপর পেট্রোল ঢেলে তাঁর দেহ পুড়িয়ে দেয় শাদনগরের ছট্টনপল্লি সেতুর কাছে। ওই ঘটনায় ফের দেশে গণধর্ষণের বিরোধিতায় বিক্ষোভ শুরু হয়। ধর্ষকদের প্রতি কড়া আইন পরিবর্তনের দাবি জানাতে থাকেন সকলে। সংসদের শীতকালীন অধিবেশনও এই ঘটনায়  উত্তাল হতে শুরু করে।

এর মধ্যেই চলতি সপ্তাহের শুরুতেই উন্নাও–এর ২৩ বছরের গণধর্ষিতা যুবতীকে আদালতে সাক্ষ্য দিতে যাওয়ার সময় প্রথমে ছুরি চালিয়ে তারপর গায়ে পেট্রোল ঢেলে জ্বালিয়ে দেয় অভিযুক্ত ধর্ষকরাই। অভিযুক্তরা সম্প্রতি জামিন পেয়েছিল। গায়ে আগুন নিয়েই আর্তনাদ করতে করতে এক কিলোমিটার রাস্তা ছোটেন যুবতী। শরীরের ৯০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল তাঁর। শুক্রবার রাতে মৃত্যু হয় যুবতীর। আর সেই যুবতীর জন্য ন্যায়বিচার সহ দেশের সব মেয়েদের জন্য নিরাপত্তার দাবিতেই আবার উত্তাল হয়ে উঠেছে রাজধানীর রাজপথ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *