রাঁচি, ৩ ডিসেম্বর (হি.স.): ঝাড়খণ্ড বিধানসভা নির্বাচনের প্রথম দফায় যেভাবে গণতন্ত্রের প্রতি আস্থা প্রকাশ্যে এসেছে| যেভাবে বিজেপি সরকার নকশালবাদের কোমর ভেঙেছে| এর ফলে ভয়ের পরিবেশ উধাও হয়েছে এবং উন্নয়নের পরিবেশ তৈরি হয়েছে| মঙ্গলবার ঝাড়খণ্ড বিধানসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় দফার প্রচারে খুন্তির জনসভা থেকে এমনই মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী| প্রধানমন্ত্রীর কথায়, গত ৩০ নভেম্বর প্রথম দফার ভোটের দিন নির্বাচনী পরিবেশকে নষ্ট করার যথাসাধ্য চেষ্টা করেছিল নেতিবাচক মনোভাবাপন্ন মানুষেরা, কিন্তু আপনাদের উত্সাহ প্রশংসনীয় ছিল| প্রথম দফার ভোটে বিজেপি সরকার ও পদ্ম ফুলের প্রতি আস্থা প্রকাশ্যে এসেছে|
মঙ্গলবার খুন্তি বিধানসভা আসনের বিজেপি প্রার্থী তথা গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী নীলকণ্ঠ সিং মুণ্ডার সমর্থনে জনসভা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী| জনসভায় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আমি আজ ভগবান বিরসা মুন্ডার ভূমিতে এসেছি, এ জন্য প্রথমেই তাঁকে প্রণাম জানাচ্ছি| এরপর পুন্যতিথিতে পরমবীর আলবার্ট এক্কাকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেছেন প্রধামমন্ত্রী| বক্তব্যের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ঝাড়খণ্ডের উন্নয়ন যদি কোনও দল করতে পারে, তাহলে সেই দল হল শুধুমাত্র বিজেপি| বিজেপি সরকার ও পদ্ম ফুলের প্রতি যথেষ্ট আস্থা ও বিশ্বাস রয়েছে ঝাড়খণ্ডের জনগণের| প্রধানমন্ত্রীর কথায়, বিজেপির উপর যথেষ্ট ভরসা রয়েছে ঝাড়খণ্ডের জনগণের এবং প্রত্যেকেই পদ্ম ফুলের প্রতি আস্থা রেখেছেন| এর দু’টি বড় কারণ রয়েছে, একটি হল-গণতন্ত্রকে আরও শক্তিশালী করা এবং দেশ গঠনের প্রতি গভীর আস্থা রয়েছে ঝাড়খণ্ডের জনগণের| দ্বিতীয়ত, বিজেপি সরকার যেভাবে নকশালবাদকে দমন করেছে, এর ফলে ঝাড়খণ্ডে উন্নয়নের পরিবেশ তৈরি হয়েছে|
ভোটারদের প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, প্রথম দফায় অত্যন্ত উত্সাহের সঙ্গে ভোট দেওয়ার জন্য, প্রথম দফার ভোটারদের অভিনন্দন জানাই| যদিও, গত ৩০ নভেম্বর প্রথম দফা ভোট-পর্বের পরিবেশ নষ্ট করার চেষ্টা করেছিল নেতিবাচক মনোভাবাপন্ন মানুষজন| ঝাড়খণ্ডের জনগণ সেই প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করেছেন| ডাবল ইঞ্জিন সরকারের সুবিধা সম্পর্কে অবহিত করেছেন প্রধানমন্ত্রী| মোদী বলেছেন, ‘আদিবাসী শিল্প সংস্কৃতিকে সাজানোর জন্য অসংখ্য সংগ্রহশালা তৈরি করা হচ্ছে গোটা দেশে| উপজাতীয় অঞ্চলেও জলের পাইপ পৌঁছে যাচ্ছে, কংগ্রেস-জেএমএম সরকার যে বিষয়ে উদাসীন ছিল| এখন দরিদ্র, অনগ্রসর, ও উপজাতি পরিবারগুলিও তাঁদের নিজস্ব বাড়ি পাচ্ছে| কংগ্রেস-জেএমএম সরকার যাদের বস্তিতে থাকতে বাধ্য করেছিল|
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেছেন, আগামী বছরগুলিতে বিজেপি সরকারের প্রচেষ্টা হবে, প্রতিটি বাড়ির একজন মহিলা দেশের উন্নয়নে প্রত্যক্ষ অংশীদার হবেন| এখন ঘরে ঘরে শৌচালয় তৈরি হয়েছে| ঝাড়খণ্ডের বোনেরাই দ্রুততার সঙ্গে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সুবিধা পেয়েছেন| উজ্জ্বলা যোজনায় দ্বিগুণ সুবিধা দেওয়া হয়েছে| এর ফলে আপনাদের স্বাস্থ্যের উন্নতি হবে| ঝাড়খণ্ডে প্রথম দফার ভোট-পর্ব উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, প্রথম দফার ভোটদানের পর এটা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে যে, ঝাড়খণ্ডের উন্নয়নের জন্য বিজেপির প্রত্যাবর্তন আবশ্যিক এবং এখানকার জনগণও বলছেন ঝাড়খণ্ড ডেকেছে, আবারও বিজেপি|
খুন্তির জনসভা থেকে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, একজন রাজপুত্র অযোধ্যা থেকে চলে যান এবং ১৪ বছরের ‘বনবাস’ শেষে, ফিরে আসার পর তিনি ‘মর্যাদা পুরুষোত্তম রাম’ হয়ে ওঠেন, কারণ রাজপুত্র সেই সমস্ত বছরগুলি আদিবাসীদের সঙ্গে কাটিয়েছিলেন| প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এখন সেই সমস্ত অঞ্চলেও বিদ্যুতের তার পৌঁছে গিয়েছে, যে সমস্ত গ্রামে অসম্ভব ছিল| বিরোধী দলের নেতারা আগে যেখানে উঁকিও দিত না, সেই অঞ্চলগুলিও রাস্তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে| ঝাড়খণ্ডের প্রতিটি ব্যক্তিই কেন্দ্রীয় ও ঝাড়খণ্ড সরকারের কোনও না কোনও প্রকল্প থেকে সরাসরি উপকৃত হয়েছেন|
ঝাড়খণ্ডের বাল্যকাল কেটে গেছে, এখন সজাগ থাকুন
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, অটলজি পৃথক ঝাড়খণ্ড তৈরি করেছিলেন। এটি ভগবান বিরসাকে দেওয়া সঠিক শ্রদ্ধাঞ্জলি। এটি ছিল অটলজির বিজেপি সরকার, যা স্বাধীনতার পরে প্রথমবারের মতো উপজাতি মন্ত্রক গঠন করেছিল। এখন ঝাড়খন্ডের বয়স ১৯ বছর । এখন সে তরুন । এবার আপনারা সবাই সচেতন হোন। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়। যেমন বাড়িতে বাবা-মা সন্তানের বয়স ১৯ বছর হয়ে গেলে তাদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে চিন্তা করেন। ঠিক তেমনই ঝাড়খণ্ডেরও শৈশবের বয়স আর নেই। এই পরিস্থিতিতে ঝাড়খণ্ডের নাগরিকের মতো আমাদেরও কিছু দায়িত্ব রয়েছে। ঝাড়খণ্ডের বয়স ১৯ থেকে ২৫ বছর হওয়ার আগেই এটি এতটাই সমৃদ্ধ এবং শক্তিশালী হওয়া উচিত যাতে আর পিছনে ফিরে তাকাতে না হয়। সুতরাং, আসন্ন পাঁচ বছর ঝাড়খণ্ডের ১৯ বছর বয়সের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং একটি সুযোগও নষ্ট করবেন না, আমি সবসময় আপনার জন্য প্রস্তুত।শুধু আমাকে সমর্থন করুন। আমরা রেকর্ড বাজেট পেশ করেছি। বিজেপি সরকার প্রথমবারের মতো জেলা ডিস্ট্রিক মিনরেল ফান্ডের ব্যবস্থা করেছে। এতে পাঁচ হাজার কোটি টাকা দিয়েছে। এবার এখান থেকে উৎপন্ন খনিজগুলির একটি অংশ জনস্বার্থে দিতে হবে। রাজ্য সরকার ৬০০ হাজার ইজারা দিয়েছে। বাকি ৩০-৪০ হাজার ইজারা সরকার গঠনের পরে দেওয়া হবে। কংগ্রেসের নজর রয়েছে এখাকার খনিজসম্পদের উপর । তারা ক্ষমতায় আসার জন্য ভয় এবং বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। ৭০ বছরের কংগ্রেস সরকার বিকাশের কথা ভাবেনি, বিজেপি সরকার তা নিয়ে ভেবেছে।আদিবাসী স্বার্থের জন্য আমরা অঙ্গিকারবদ্ধ। জল, বন, জমির উপর আমরা কোনও প্রভাব পড়তে দেব না। প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, কংগ্রেস ও তাদের বন্ধুদের থেকে সাবধান থাকুন। তাদের অতীত ও তাদের শোষণগুলি মনে রাখবেন, তাদের চোখ এখানের প্রাকৃতিক সম্পদের উপর রয়েছে। এরা সবকিছু লুট করবে।তাই তারা ভয় ও বিভ্রান্তির পরিবেশ তৈরি করছে।
প্রথম পর্যায়ে ভোটগ্রহণ থেকে তিনটি বিষয় পরিষ্কার
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেন, প্রথম পর্বের ভোটগ্রহণ তিনটি বিষয় পরিষ্কার করেছে। প্রথমত, গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে এবং দেশগঠনে অবদান রাখার ক্ষেত্রে ঝাড়খণ্ডবাসীদের বিশ্বাস অভূতপূর্ব। দ্বিতীয়ত, বিজেপি সরকার মাওবাদীদের কোমর ভেঙে দিয়েছে । সরকারের তৎতায় তাদের কার্যকলাপ সীমিত করতে বাধ্য হয়েছে মাওবাদীরা । এতে ভয়ের পরিবেশ কমেছে। উন্নয়নের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। তৃতীয়ত, এটি স্পষ্ট হয়ে গেছে যে ঝাড়খণ্ডের জনগণ বিজেপি সরকারের প্রতি আস্থা অনুভূতি জেগে উঠেছে । যদি কোনও দল ঝাড়খণ্ডকে উন্নত করতে পারে তবে কেবল এবং কেবল বিজেপিই তা করতে পারে। আমি এটা অনুভব করতে পারছি । প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রথম পর্যায়ের নির্বাচনে ভোটগ্রহণের পরিবেশ নষ্ট করার চেষ্টা করা হয়েছিল কিন্তু লোকেরা এই উদ্দেশ্যকে ব্যর্থ করে দিয়েছে।
এখানকার লোকেরা বলছে “ঝাড়খণ্ড পুকারা ভাজপা দোবারা”
ঝাড়খণ্ডের লোকেরা রাজ্যের উন্নয়নের গতি বজায় রাখতে দিল্লি এবং রাঁচিতে ডাবল ইঞ্জিনের সরকার চাইছেন । কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় আমাদের সঙ্গীঅর্জুন মুন্ডা ঠিক বলেছেন যে, দিল্লি রাজ্যের গ্রামগুলিকে উন্নত করার ব্যবস্থা করেছে এবং রাজ্য সরকার এটিকে দায়িত্বের সঙ্গে পালন করেছে | এখানকার লোকেরা বলছেন-“ঝাড়খণ্ড পুকারা ভাজপা দোবারা” |
কংগ্রেসের এবং জেএমএম-এর রাজনীতি প্রতারণা এবং স্বার্থপরতার রাজনীতি
আপনাদের আশেপাশের রাজ্য যেখানে বিজেপি সরকার নেই সেখানকার পরিস্থিতি দেখুন । কৃষক, পশ্চাৎপদ, আদিবাসীদের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে কংগ্রেস সরকার গঠন করে নিচ্ছে কিন্তু পরে প্রতিশ্রুতি পূরণ করা থেকে পালিয়ে যাচ্ছে। মানুষকে রাস্তায় নামতে হচ্ছে । ঝাড়খণ্ড জানে যে, কংগ্রেসের এবং জেএমএম-এর রাজনীতি প্রতারণা এবং স্বার্থপরতার রাজনীতি |
ভগবান বিরসা মুন্ডাকে স্মরণ প্রধানমন্ত্রীর
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কয়েকদিন আগেই গোটা দেশ বিরসা মুন্ডার জন্মজয়ন্তী পালন করেছে। এদিনের জনসভা দাঁড়িয়ে বিরসা মুন্ডাকে স্মরণ করে তিনি জানিয়েছেন যে এই ৩রা ডিসেম্বর পরমবীর চক্র বিজেতা এলবরাট এক্কার বীরগতি হয়েছিল।
রাম-মন্দির সমস্যা জিইয়ে রেখেছিল কংগ্রেস
অযোধ্যায় রাম মন্দির নির্মাণ প্রসঙ্গে কংগ্রেসের নিন্দায় মুখর হয়ে তিনি জানিয়েছেন, মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে কয়েকটি রাজ্যে ক্ষমতায় এসেছে কংগ্রেস। এখন সেই প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থ শতাব্দী প্রাচীন দলটি। এদের বিরুদ্ধে বীতশ্রদ্ধ হয়ে মানুষ এখন রাজপথে নেমে এসেছে। স্বার্থের জন্য জোট বেঁধেছে কংগ্রেস-জেএমএম। অন্যদিকে, বিজেপি কোনও প্রকারের স্বার্থ ছাড়াই কাজ করে চলেছে। ৩৭০ ধারা বিলুপ্ত করা হয়েছে। অযোধ্যার সমস্য যা কংগ্রেস ঝুলিয়ে রেখেছিল, তা সমাধান করা হয়েছে।
আদিবাসীদের সঙ্গে থেকে রাজকুমার রাম ভগবান রাম হয়ে উঠেছিলেন
আদিবাসীদের সঙ্গে ভগবান শ্রীরামের সম্পর্ক তুলে ধরে তিনি বলেন ১৪ বছরের বনবাসে আদিবাসীদের সঙ্গে শ্রীরাম। তাই তিনি অযোধ্যায় ফিরে গিয়ে মর্যাদা পুরুষোত্তম হয়ে উঠতে পেরেছিলেন। আদিবাসী তাঁকে সংস্কারী করে তুলেছিল।