ওয়েট ল্যান্ড ও গ্রিভেন্স কমিটির প্রতিনিধি দলের রুদ্রসাগর পরিদর্শন

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৫ নভেম্বর৷৷ রুদ্রসাগরে জলস্ফীতিকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে ত্রিপুরা সরকারের ওয়েট ল্যান্ড গ্রিভেন্স কমিটির প্রতিনিধিদল সোমবার রুদ্রসাগর এলাকা পরিদর্শন করেছে৷ ওয়েট ল্যান্ড গ্রিভেন্স কমিটির চেয়ারম্যান মুখ্য বন সংরক্ষক অমিত শুক্লার নেতৃত্বে প্রতিনিধিদল আজ বিকেলে রাধামাধবপুর, কেমতলি, বৈদ্যরমুড়া, বংশীদ্বীপ, রাজেন্দ্রনগর, চন্দনমুড়া প্রভৃতি এলাকা পরিদর্শন করেন৷ বিধায়ক সুভাষচন্দ্র দাস, মেলাঘর পুর পরিষদের চেয়ারপার্সন উত্তম দাস, রুদ্রসাগর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি পবিত্র দাস, সম্পাদক পরমেশ্বর দাস, সিপাহিজলার জেলাশাসক সিকে জমাতিয়া, সোনামুড়া মহকুমার অতিরিক্ত মহকুমা ম্যাজিস্ট্রেট অসিত দাস-সহ জলসম্পদ, কৃষি, মৎস্য, বন প্রভৃতি বিভিন্ন দফতরের প্রতিনিধিগণও গ্রিভেন্স কমিটির সঙ্গে ছিলেন৷


উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রুদ্রসাগর এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের অভিযোগ সম্পর্কে তাঁরা বিস্তারিত অবহিত হন৷ প্রতিনিধি দলটি বটতলিতে স্লইসগেট পর্যবেক্ষণ করে সম্যক ধারণা নেন৷ এর আগে মেলাঘর পুর পরিষদের কনফারেন্স হল-এ অনুষ্ঠিত বৈঠকে সংশ্লিষ্ট এলাকার জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে বাস্তব পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত হন এবং অভাব অভিযোগ শোনেন৷ গ্রিভেন্স কমিটি খুব শীঘই রাজ্য সরকারের কাছে এ বিষয়ে রিপোর্ট পেশ করবে৷


এছাড়া আজ সকালে রুদ্রসাগর ও তার আশপাশ এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণে সিপাহিজলার জেলাশাসকের নেতত্বে মেলাঘর পুর পরিষদের কনফারেন্স হল-এ এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়৷ বিধায়ক সুভাষচন্দ্র দাস, মেলাঘর পুর পরিষদের চেয়ারপার্সন উত্তম দাস, সোনামুড়ার মহকুমাশাসক সুব্রত মজমদার, রুদ্রসাগর উদ্বাস্ত মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি ও সম্পাদক, সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েতের প্রধানগণ এবং সংশ্লিষ্ট দফতরের আধিকারিকগণ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন৷ রুদ্রসাগর এলাকায় উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কৃষক ও মৎস্যচাষীদের সামগ্রিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরুপণে পঞ্চায়েত ভিত্তিক একটি করে টিম গঠন করা হয়৷ ৩০ নভেম্বরের মধ্যে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরুপণ করে রাজ্য সরকারের কাছে রিপোর্ট দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে৷


প্রসঙ্গত, মেলাঘরের রুদিজলায় জলস্তর বাড়ার ফলে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে প্রায় দু-হাজার পরিবার৷ চাষাবাদের ওপরই ওই পরিবারগুলি নির্ভরশীল৷ রামসা প্রকল্পের অধীনে এই রুদিজলাকে নিয়ে আসায় সমস্যায় পড়তে হচ্ছে তাদের৷ ১৯৭১ সালে ইরানে আন্তর্জাতিক স্তরে একটি কনভেনশন হয়৷ সেখানে ভারতও প্রতিনিধিত্ব করেছিল৷ মূলত ওয়েটল্যান্ড তথা জলাভূমি নিয়ে এই কনভেনশন হয়৷ কীভাবে ওই জলাভূমিকে রক্ষা করা যায় তার জন্য কিছু গাইডলাইনও রয়েছে৷ ১৯৭১ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ভারত ওই কনভেনশনে চুক্তি স্বাক্ষর করে৷ ১৯৭৫ সালের ২১ ডিসেম্বর দেশে এই চুক্তি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া শুরু হয়৷ তাতে দেশের প্রায় পঞ্চাশটি জলাশয় চিহিণত করা হয়৷ পরবর্তী সময়ে ত্রিপুরার রুদিজলা সহ দেশে ৮৭টি জলাশয় চিহিণত হয়৷ সেই মোতাবেক ১৯৯৫ সালে রুদিজলা সংরক্ষিত এলাকা হিসেবে চিহিণত হয়৷ তখন থেকে রামসা প্রকল্পের আওতায় চলে আসে এই রুদিজলা৷


রামসার অধীনে রুদিজলাকে সংরক্ষিত করা ও সংরক্ষণ-সহ পরিকাঠামো উন্নয়ন নিয়ে পূর্বতন বামফ্রন্ট সরকার তেমন কোনও উদ্যোগ গ্রহণ করেনি৷ বিজেপি জোট সরকার রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর রামসা প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়৷ এরই মধ্যে জনৈক ব্যক্তি হাইকোর্টে একটি পিটিশন দাখিল করেছিল৷ তখন হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল রুদিজলার জলস্তর ১১ মিটার করার জন্য৷ কিন্তু তাও কার্যকর হয়নি৷ শেষে রাজ্য সরকারকে হাইকোর্ট নির্দেশ দেয় যাতে একটি সুবিধাজনক জলস্তর সৃষ্টি করে৷ তাই রাজ্য সরকার ১০ মিটার জলস্তর করে৷ তাতে সমস্যার সৃষ্টি হয়৷ বিস্তীর্ণ এলাকার কৃষিজমিতে জল জমে যায়৷ চাষাবাদ করা সম্ভব হচ্ছে না৷ তাই কৃষকদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়৷ গত কদিন ধরেই কৃষকরা আন্দোলন করে আসছেন৷ শনিবার পথ অবরোধ আন্দোলনে নেমে পড়েছিলেন কৃষকরা৷


বুধবার সকালে রুদিজলার কৃষকদের ক্ষোভ প্রশমিত হতে পারে৷ রবিবার রুদিজলা এলাকা পরিদর্শন করে এলাকাবাসীকে এমনই আশার আলো দেখিয়েছেন আইনমন্ত্রী রতনলাল নাথ৷ তাঁর আশ্বাস, কৃষকদের চাষাবাদ বন্ধ হয়ে যাক এমন কোনও পথে এগোবে না ত্রিপুরা সরকার৷ প্রয়োজনে রুদিজলাকে নিয়ে যে রামসা প্রকল্প রয়েছে তা প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *