ঐতিহাসিক টেস্টের আগে শিশির নিয়ে চিন্তায় বিরাট, ক্রিকেট জ্বরে কাঁপছে শহর

কলকাতা, ২১ নভেম্বর  (হি.স.) : রাত পোহালেই দেশের ক্রিকেট ইতিহাসে নজির গড়বে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড বিসিসিআই। আর তার সাক্ষী হয়ে থাকবে ক্রিকেটের নন্দনকানন ইডেন গার্ডেন্স। দেশের মাটিতে প্রথমবার গোলাপি বলে দিন-রাতে টেস্টে নামছে ভারত ও বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। শীতের আমেজ গায়ে মাখার আগেই ক্রিকেট জ্বরে কাঁপচ্ছে তিলোতমা৷

ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডেরসভাপতির চেয়ার বসার পরই ভারতের মাটিতে প্রথম দিন-রাতের টেস্ট খেলার সিদ্ধান্ত নেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়৷ ইডেনের গোলাপি টেস্টে সৌরভের মুকুটে আরও একটি পালক যোগ করল বলে মনে করেন প্রাক্তন ভারতীয় ওপেনার দিলীপ বেঙ্গসরকর৷ গোলাপি বলের টেস্ট ম্যাচ মানুষের মধ্যে কেমন সাড়া ফেলেছে, সেটা বুঝতে অসুবিধা হয়নি। টিকিটের জন্য হাহাকার। টেস্ট শুরুর আগে চারদিনের টিকিট শেষ।

সৌরভ মনে করতে পারছেন না। একই অবস্থা বিরাটেরও। বৃহস্পতিবার সকালে ইডেনে পা দিয়ে প্র‌্যাকটিসের আগে মিডিয়ার সামনে এলেন। বললেন, “ভাবতেই পারছি না দেশের মাঠে টেস্ট ম্যাচ নিয়ে মানুষ এভাবে ঝাঁপাচ্ছে। একদিনের বা টি ২০তে এ ছবি দেখেছি। কিন্তু টেস্টে সাম্প্রতিককালে টিকিট নিয়ে হাহাকার চোখে পড়েনি। মনে হচ্ছে, ভারত-পাকিস্তান ম্যাচকে হারিয়ে দিয়েছে গোলাপি বলের টেস্ট ম্যাচ।”

ভারত অধিনায়ক মাস খানেক আগেও গোলাপি বলের টেস্ট ম্যাচ খেলতে রাজি ছিলেন না। সৌরভ বোর্ড সভাপতি হয়ে চেয়ারে বসার পর সব বদলেছে। তিনি রাজি করান বিরাটকে। আসলে কলকাতায় না এলে বিরাট গোলাপি বলের টেস্ট ম্যাচ নিয়ে মানুষের উত্তেজনা বুঝতে পারতেন না। বলছেন, “প্রায় ৭০ হাজার মানুষের সামনে খেলব। ইদানীং দেশের মাঠে টেস্ট ক্রিকেটে এমনটা হয় কোথায়? এখানে টিকিটের হাহাকার দেখে বুঝতে পারছি মাঠের চেহারা কেমন হবে। ভাল লাগছে, ঐতিহাসিক ম্যাচে আমরা খেলতে নামছি। এটা একটা ল্যান্ডমার্ক বলতে পারেন।”

শুরুতে এ সব বললেও বিরাটের মুখে অন্য কথাও শোনা যাচ্ছে। বলছেন, “গোলাপি বলে মেতে উঠে আমরা যেন লাল বলের ক্রিকেটকে ভুলে না যাই। ওটাই কিন্তু আসল ক্রিকেট। লাল বলে খেলতে আলাদা উত্তেজনা খুঁজে পাই। গোলাপি বল টেস্টের ভবিষ্যৎ, সেটা মানি না।” গোলাপি বল প্রথম খেলতে নামছেন বলে কি বিরাট কিছুটা ব্যাকফুটে? হতে পারে। যে কোনও জিনিস শুরু করার সময় নানা অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়।

পরে ঠিকও হয়ে যায়। ক’দিন আগে ক্রিকেটাররা বলছিলেন, এই বলে খেলতে অনেক ঝামেলা। বিরাট সেই কথার রেশ ধরে বললেন, ”ব্যাটিং নিয়ে সমস্যা হবে না। মানিয়ে নিতে পারব। অসুবিধা ফিল্ডিং করার সময়। বুধবার বিকেলে স্লিপ ক্যাচ নেওয়ার সময় মনে হল, আমরা হকি বল ধরছি। লাল বা সাদা বলের ক্ষেত্রে যা হয় না। আরও বেশি সমস্যা উঁচু ক্যাচ ধরার সময়। অন্য বলের থেকে বেশি গতিতে নিচে নেমে আসে গোলাপি বল। তাই লাইন ধরা কঠিন। তার উপর গ্যালারি ভর্তি মানুষের চিৎকারে ফোকাসে গরমিল হলে ক্যাচ হাতছাড়া। এটই সমস্যার। তবে এই বলে খেলা আমাদের সবার কাছে আলাদ চ্যালেঞ্জ। এখন অপেক্ষা, এই চ্যালেঞ্জ কীভাবে আমরা নিচ্ছি।”

এবার সুবিধার কথাও শোনালেন ভারত অধিনায়ক। বলছিলেন, পেসাররা এই মাঠে ভাল পারফর্ম করবে। ওদের চার্জ করবে গ্যালারি ভরতি মানুষ। মাঠ ফাঁকা থাকলে কারই বা খেলতে ভাল লাগে। এখানে পুরো উলটো ছবি। তাই ওদের কথাই বললাম।” ভারতীয় দল গোলাপি বলের বিরোধী ছিল না। সময় চাইছিল। বিরাট বলছিলেন,“ বিদেশের মাঠে খেলার আগে দেশে খেলে নিতে চেয়েছিলাম। তারও আগে প্র‌্যাকটিস পেলে ভাল হয়। কোনও সিরিজে দুটো টেস্টের পর গোলাপি টেস্ট রাখলে ভাল। মাথায় রাখতে হবে, তার আগে যেন একটা প্র‌্যাকটিস ম্যাচ খেলতে পারি। এমন হলে সবারই সুবিধা।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *