নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৯ নভেম্বর৷৷ ত্রিপুরা ও অসমে এটিএম হ্যাক-এর সাথে যুক্ত চারজনকে কলকাতা পুলিশের সাইবার সেল গ্রেফতার করেছে৷ মঙ্গলবার সকালে তাদের উত্তর চবিবশ পরগনা জেলার বেলঘরিয়া এলাকা থেকে জালে তুলেছে পুলিশ৷ তাদের তুরস্কের দুজন হাকান জাবুরকান ও ফেত্তাহ আলদেমির এবং বাকি দুজনকে বাংলাদেশি মহম্মদ হান্নান ও মহম্মদ রাফিকুল ইসলাম বলে শনাক্ত করা হয়েছে৷ ইতিমধ্যে ত্রিপুরা পুলিশের চার এবং অসম পুলিশের পৃথক পৃথক দল কলকাতার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়েছে৷ পুলিশ সূত্রে খবর, হ্যাকারদের বিরাট একটি চক্র রয়েছে৷ তারা, ত্রিপুরা, অসম, পশ্চিমবঙ্গ, দিল্লি, মুম্বাই এবং দক্ষিণ ভারতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে৷
![](https://jagarantripura.com/wp-content/uploads/2018/11/15001500-5b429a6785f04b90b0ab3322dd799463-handcuffs-920c.jpg)
প্রসঙ্গত, ত্রিপুরায় গত কয়েকদিনে স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার গ্রাহকদের প্রায় ৭০ লক্ষাধিক টাকা লুটে নিয়ে গেছে হ্যাকাররা৷ পশ্চিম আগরতলা থানায় মোট ২৮টি মামলা হয়েছে ব্যাঙ্ক প্রতারণার৷ এই ঘটনায় গতকাল দিনভর স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার বিভিন্ন শাখায় গ্রাহকরা এটিএম ব্লক করার জন্য হাজির হন৷ পুলিশ এই জালিয়াতির ঘটনায় চারটি এটিএম চিহ্ণিত করতে পেরেছে৷ গত ৩ নভেম্বর বটতলা, ইন্দ্রনগর, কামান চৌমুহনি স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার এটিএম কাউন্টার এবং পোস্ট অফিস চৌমুহানিস্থিত ত্রিপুরা স্টেট কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কের এটিএম থেকে যাঁরা টাকা তুলেছেন তাঁদের এটিএম হ্যাক হয়েছে৷
ব্যাঙ্ক গ্রাহকদের আশ্বস্ত করে সদর এসডিপিও ধ্রুব নাথ জানিয়েছেন, প্রত্যেকের টাকা ব্যাঙ্ক ফেরত দেবে৷ কারণ, সমস্ত ঘটনায় ওটিপি দেওয়ার মতো কোনও কিছু হয়নি৷ এক্ষেত্রে হ্যাকাররা এটিএম-এ স্ক্যানার লাগিয়ে টাকা হাতিয়েছে৷ তাঁর দাবি, আরবিআই-এর নির্দেশিকা মোতাবেক ওটিপি না দিলে প্রতারণার সমস্ত ঘটনায় আমানতকারীর টাকা ব্যাঙ্ক ফেরত দিতে বাধ্য৷ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার রিজিওনাল ম্যানেজার দিব্যেন্দু চৌধুরী জানিয়েছেন, এ-ধরনের ঘটনায় ব্যাঙ্কের নির্দিষ্ট পদ্ধতি রয়েছে৷ সেই মোতাবেক আবেদন জানালে গ্রাহকদের খোয়া যাওয়া টাকা ফেরত দেওয়া হবে৷ দুঃশ্চিন্তার কোনও কারণ নেই, অভয় দিয়ে বলেন তিনি৷
এদিকে সদর এসডিপিও ধ্রুব নাথ জানিয়েছিলেন, এটিএম হ্যাক করে ব্যাঙ্ক জালিয়াতির সাথে তুরস্কের দুই বাসিন্দার যুক্ত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে৷ অন্যদিকে, অসমেও ব্যাঙ্ক জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে৷ ওই দুই হ্যাকার অসমেও এটিএম হ্যাক করেছে৷ অসম পুলিশের ক্রাইম ব্রাঞ্চ গতকাল দুই তুর্কি হাকান জানবুরকান ও ফেতেহ আলদেমিরের নামে লুকআউট নোটিশ জারি করেছিল৷
স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার রিজিওনাল ম্যানেজার দিব্যেন্দু চৌধুরী জানিয়েছেন, যে এটিএম কাউন্টার হ্যাক হয়েছে সেই কাউন্টারে যাঁরা গেছেন তাঁদের সকলের এটিএম আপাতত ব্লক করে দেওয়া হয়েছে৷ এছাড়া কয়েকটি সন্দেহজনক এটিএম কাউন্টারে যাঁরা গেছেন তাঁদের এটিএমও ব্লক করে দেওয়া হয়েছে৷ তাঁর দাবি, নিরাপত্তার জন্যই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷ সাথে তিনি যোগ করেন, রাজ্যের সমস্ত এটিএম কাউন্টারে বিশেষ নজরদারি চালানো হচ্ছে৷ সেক্ষেত্রে এটিএম হ্যাক হওয়ার নতুন কোনও ঘটনা ঘটেনি৷ এ-বিষয়ে স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার রিজিওনাল ম্যানেজার দিব্যেন্দু চৌধুরী আশ্বস্ত করেছেন, কারোর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে টাকা চুরি করা হলে ব্যাঙ্কের নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে আবেদন জানালে সেই টাকা ফেরত দেওয়া হবে৷
সদর এসডিপিও ধ্রুব নাথ জানিয়েছেন, দুই তুর্কি হাকান জাবুরকান ও ফেত্তাহ আলদেমির এবং দুই বাংলাদেশি মহম্মদ হান্নান ও মহম্মদ রাফিকুল ইসলামকে এটিএম হ্যাকিং-এর বেলঘরিয়ায় গ্রেফতার করা হয়েছে৷ আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তাদের আগরতলায় নিয়ে আসা হবে৷ অন্যদিকে, হ্যাকার ধরা পড়ার খবর পেয়ে অসম পুলিশের একটি দলও কলকাতা পৌঁছেছে বলে জানা গেছে৷
অসম পুলিশের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি জানান, এই চক্রটি গুয়াহাটির তিনটি এটিএম হ্যাক করেছিল৷ ইতিমধ্যে চারজনকে অসম পুলিশ গ্রেফতারও করেছে৷ পরবর্তীতে হাকান জাবুরকান ও ফেত্তাহ আলদেমির ফটো জারি করে তাদের বিরুদ্ধে লুকআউট নোটিশও জারি করেছিল অসম পুলিশ৷ ফেত্তাহ আলদেমির বিরদ্ধে বিভিন্ন থানায় ৪৬টি মামলা রুজু নথিভুক্ত রয়েছে৷ হাকানের কাছ থেকে যে পাসপোর্ট ও ভিসা বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে তার নম্বর যথাক্রমে ইউ-২০৪৩৪২৪৯ ও ভিকে-৫৮০১৮৯১, ফেত্তাহের কাছ থেকে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে যথাক্রমে ইউ-১০২৬৬১৮৭ এবং ভিএল-০১৪৬৮০৮ নম্বরের ভিসা৷
পুলিশ সূত্রের খবর, ওই হ্যাকারদের বিরাট একটি চক্র গোটা ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ছড়িয়ে রয়েছে৷ তারাই ত্রিপুরা, অসম, দিল্লি, মুম্বাই এবং দক্ষিণ ভারতে এটিএম হ্যাক করছে৷
সম্প্রতি তাদের কয়েকজনকে দিল্লী থেকে পুলিশ জালে তুলেছিল৷ সূত্রের খবর, তুর্কির ওই দুই হ্যাকার আগরতলায় সমস্ত কাজ সেরে গত ১৪ নভেম্বর এয়ার ইন্ডিয়ার সকাল ১১টার বিমানে কলকাতা গেছে৷ তারা কলকাতায় বসে এটিএম হ্যাক করে মানুষের টাকা লুটেছে৷ এখন তাদের জিজ্ঞাসাবাদে ওই চক্রের সাথে আর কারা যুক্ত তাদের সন্ধান মিলবে বলে পুলিশ আশা করছে৷ তবে বাংলাদেশিরাও ওই চক্রের সাথে যুক্ত থাকায় পুলিশের চিন্তা বাড়িয়েছে৷