নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৩ নভেম্বর৷৷ ড্রাগসের নেশা এইডস ছড়ানোর অন্যতম মাধ্যম৷ তাই ড্রাগস ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে৷ সে-ক্ষেত্রে মহিলাদের সচেতন করতে হবে৷ বুধবার ত্রিপুরা স্টেট এইডস কন্েন্টাল সোসাইটির সাধারণ সভায় এ-কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব৷
![](https://jagarantripura.com/wp-content/uploads/2019/11/4545454-1024x682.jpg)
আজ ত্রিপুরা স্টেট এইডস কন্েন্টাল সোসাইটির ১৭তম সাধারণসভা মহাকরণের ২ নং কনফারেন্স হলে অনুষ্ঠিত হয়েছে৷ সভায় সভাপতিত্ব করেন সোসাইটির চেয়ারম্যান তথা মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব৷ তিনি স্টেট এইডস কন্েন্টাল সোসাইটির বিভিন্ন কাজের অগ্রগতির বিষয়ে পর্যালোচনা করেন এবং রাজ্যে এইডস আক্রান্তের সংখ্যা কমিয়ে আনার উদ্দেশ্যে সোসাইটি কি কি পদক্ষেপ নিয়েছে সে বিষয়ে খোঁজখবর নেন৷
সভায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ত্রিপুরায় ইনজেকশনের মাধ্যমে ড্রাগস নেওয়াই এইডস আক্রান্ত হওয়ার অন্যতম কারণ৷ এক্ষেত্রে যারা ড্রাগস ব্যবসায়ের সঙ্গে যুক্ত তাদেরকে চিহিণত করতে হবে এবং তাদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নিতে হবে৷ কারণ তাদের মাধ্যমেই নেশা জাতীয় ড্রাগস রাজ্যের যুবক-যুবতীদের মধ্যে পৌঁছে যাচ্ছে, উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন তিনি৷ তাঁর মতে, ড্রাগস ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে৷ এ-ক্ষেত্রে মহিলাদের আরও বেশি করে সচেতন করে তুলতে হবে৷
মুখ্যমন্ত্রী এদিন বলেন, দেশের স্বরাষ্ট্রমী অমিত শাহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে ড্রাগমুক্ত করার আহ্বান জানিয়েছেন৷ আমাদের রাজ্যকেও ড্রাগমুক্ত করতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের পূর্ণ সহযোগিতা পাওয়া যাবে বলে মুখ্যমন্ত্রী সভায় অভিমত ব্যক্ত করেন৷ তিনি জানান, ত্রিপুরায় ড্রাগ পাচার রোধ করতে কেন্দ্রীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে৷ তাঁর দাবি, ত্রিপুরাকে ড্রাগমুক্ত করা একা পুলিশের পক্ষে সম্ভব নয়৷ সমাজের সকলকেই একাজে এগিয়ে আসতে হবে৷ তবেই সাফল্য আসবে৷
সভায় স্টেট এইডস কন্েন্টাল সোসাইটির সহকারী প্রকল্প অধিকর্তা ডা. সঞ্জয় রুদ্রপাল জানান, এইডস রোগকে নিয়ন্ত্রণ করার লক্ষ্যে দেশের প্রতিটি রাজ্যেই ১টি করে স্টেট এইডস কন্েন্টাল সোসাইটি রয়েছে৷ ২০৩০ সালের মধ্যে এইডস রোগকে নির্মূল করার লক্ষ্যে ন্যাশনাল এইডস কন্েন্টাল প্রোগ্রামের মাধ্যমে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে৷ এক্ষেত্রে জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির উপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে৷ রাজ্যের বিভিন্ন ট্রাক সিণ্ডিকেটগুলিতে ইতিমধ্যেই সচেতনতামূলক প্রচার অভিযান সংগঠিত করা হয়েছে৷ ডা. রুদ্রপাল আরও জানান, এইচ আই ভি আক্রান্তদের রক্ত পরীক্ষা এবং যথাযথ কাউন্সেলিং করার উদ্দেশ্যে রাজ্যে বর্তমানে ২৪টি ইন্টিগ্রেটেড কাউন্সেলিং এণ্ড টেস্টিং সেন্টার (আই সি টি সি) এবং ১৩২টি ফ্যাসিলিটি ইন্টিগ্রেটেড কাউন্সেলিং এণ্ড টেস্টিং সেন্টার (এফ আই সি টি সি) রয়েছে৷ এইচ আই ভি আক্রান্তদের থ্যারাপির মাধ্যমে চিকিৎসা প্রদানের লক্ষ্যে রাজ্যে বর্তমানে ৪টি ওপিয়ড সাবস্টিটিউট থ্যারাপি (ও এস ডি) সেন্টার রয়েছে৷ এছাড়াও জনগণের মধ্যে এইডস বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে রাজ্যে ২৯টি রেড রিবন ক্লাব রয়েছে৷
সভায় এছাড়াও এইচ আই ভি আক্রান্ত শিশুদের জন্য হোম স্থাপন, ১ ডিসেম্বর বিশ্ব এইডস দিবস পালন, ড্রাগ আসক্ত রোগীদের জন্য পুনর্বাসন কেন্দ্র স্থাপন, আরও একটি মোবাইল আই সি টি সি ভ্যান চালু ইত্যাদি বিষয়ে প্রস্তাব রাখা হয়েছে৷ এরমধ্যে এইচ আই ভি আক্রান্ত শিশুদের হোম স্থাপন ও ড্রাগ আসক্ত রোগীদের পুনর্বাসন কেন্দ্র স্থাপনের বিষয়ে সভায় উপস্থিত সমাজকল্যাণ ও সমাজশিক্ষা দপ্তরের মন্ত্রী সান্তনা চাকমাকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী৷
এছাড়াও এ বছর ১ ডিসেম্বর বিশ্ব এইডস দিবসের রাজ্যভিত্তিক অনুষ্ঠানটি উত্তর ত্রিপুরা জেলার কাঞ্চনপুরে আয়োজন করার পরামর্শ দেন মুখ্যমন্ত্রী৷ এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ত্রিপুরার মধ্যে এইডস আক্রান্তের সংখ্যা বেশি উত্তর ত্রিপুরায়৷ রাজ্যভিত্তিক অনুষ্ঠানটি আয়োজন করার এক সপ্তাহ আগে থেকেই জনগণকে সচেতন করার লক্ষ্যে ইলেকট্রনিক মিডিয়া, প্রিন্ট মিডিয়া, সোস্যাল মিডিয়া ইত্যাদির মাধ্যমে ব্যাপক প্রচার অভিযানের উদ্যোগ নিতে হবে৷ তবেই অনুষ্ঠান আয়োজন সার্থক হবে৷