নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৩ নভেম্বর৷৷ ত্রিপুরায় ধান বীজ ক্রয় এবং তা কৃষকদের মধ্যে বিতরণে কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তর যথেষ্ট আন্তরিকতার সাথে কাজ করেছে৷ তাই, কৃষকরা এখন দারুন উপকৃত হচ্ছেন৷
![](https://jagarantripura.com/wp-content/uploads/2019/11/DSC_9480-1024x681.jpg)
এ-বিষয়ে আজ মহাকরণে সাংবাদিক সম্মেলনে ত্রিপুরার কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তরের মন্ত্রী প্রণজিৎ সিংহ রায় বলেন, রাজ্যের খাদ্য শষ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে বিগত ১০ বছরের ও বেশি সময় ধরে একটু একটু করে হাইব্রিড ধান চাষের এলাকা বৃদ্ধির জন্যে কৃষি দপ্তর নিয়মিত উদ্যোগ চালিয়ে যাচ্ছে৷ তাঁর দাবি, জনসংখার তুলনায় চাষের জমি প্রতিদিনই কমে যাওয়ার জন্যে এই বিশেষ উদ্যোগ৷ এদিন তিনি বলেন, ভারত সরকারের কৃষি মন্ত্রকের বিজ্ঞাপিত ধানের যে সব হাইব্রিড জাত পুবর্োত্তর রাজ্যগুলির জন্য অনুমােদিত তার থেকে রাজ্যের কৃষি গবেষনাগারে ট্রায়ালের মাধ্যমে কিছু নির্বাচিত জাতের ধানের বিশেষ উপযোগী পাওয়ার পরে কৃষকের মাঠে প্রদর্শনী মূলক চাষ করে পরবর্তীসময়ে তা কৃষকদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে উন্নত প্রথায় চাষবাষের জন্য৷ দপ্তরের ক্রপ কাটিং এক্সপেরিমেন্ট গড় উৎপাদন ৫, ৪ মেট্রিক টনের উপরে প্রতি হেক্টরে, যেখানে হাই ইন্ডিং – জাতের (ঝ) ধানের উৎপাদন গড়ে ৪.০ মেট্রিক টন প্রতি হেক্টরে, জানান তিনি৷
মন্ত্রীর কথায়, কেন্দ্রীয় সরকারের আর্কেভিওয়াই এবং এনএফএসএম এর নীতি নির্দেশিকা অনুযায়ী এবং এর আর্থিক সহায়তায় এই বীজ ধান কিনে কৃষকদের সরবরাহ করা হয়েছে৷ তার উদ্দেশ্য, প্রকল্প গুলাের নীতি অনুযায়ী মাঠে চাষবাষ করা৷ তিনি জানান, বিগত আমন মরশুমে ত্রিপুরায় ২৫ হাজার হেক্টর এলাকায় (মােট আমন ধানের এলাকার ১৫ শতাংশ প্রায়) কৃষকের পছন্দ অনুযায়ী নির্বাচিত জাতের হাইব্রিড ধান চাষ করার জন্য সর্বমােট ১২৪.৬৪৫ মেট্রিক টনের মত বীজ ধান রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় কৃষি দপ্তরের স্টোর গুলাের মাধ্যমে বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে৷ সর্বমােট ১২৪.৬৪৫ মেট্রিক টন বীজ ধানের মধ্যে ঊনকোটি ও উত্তর ত্রিপুরা জেলার দুটি কৃষি মহকুমায় মােট ৩, ৭০৯ মেট্রিক টন (২.৯৬) বীজ ধান (০.২৫০ মেট্রিক টন কাঞ্চনপুর কৃষি মহকুমায় এবং ৩. ৪৫৯ মেট্রিক টন গৌরনগর কৃষি মহকুমার) বিভিন্ন কারণে অব্যবহত রয়ে গেছে৷ তিনি জানান, আগামী বরাে মরশুমে ওই ধান ব্যবহার করার জন্যে চাষীদের লিস্ট তৈরী করা হয়ে গেছে৷
মন্ত্রী বলেন, জাতীয় হিসাব তত্ত্বের নির্দেশিকা অনুযায়ী প্রতি মরশুমে এই জাতীয় ধান চাষের উৎপাদন-মাত্রা নির্ণয়ের জন্য ক্রপ কাট এক্সপেরিমেন্ট করা হয়৷ রাজ্যে আমন মরশুমে সর্বমােট ৬ হাজারেরও বেশী ক্রপ কাট এক্সপেরিমেন্ট করা হয়েছে (৬টি ক্রপ কাট এক্সপেরিমেন্ট প্রতি গ্রাম পঞ্চায়েতে) এবং বরো ৫ আউস মরশুমে ৮৯৬ টি করে ক্রপ কাট এক্সপেরিমেন্ট করা হয়েছে ( ১৬ টি ক্রপ কাট এক্সপেরিমেন্ট প্রতি ব্লকে)৷
এদিকে বীজ আলুর পচন সম্পর্কে মানুষের ভুল ধারণা সংশোধন করে দিয়েছেন কৃষি ও কৃষক কল্যাণ মন্ত্রী৷ তিনি বলেন, উদয়পুর বনদোয়ারস্থিত হিমঘরে বগাবাসা গ্রাম পঞ্চায়েতের ছয়জন চাষী মোট ৫ দশমিক ৭৫ মে টন বীজ আলু রেখেছিলেন৷ ঐ ঢমীরা হিমঘরে বীজ আলু রাখার আগে আলু শোধন করেননি৷ কিন্তু, হিমঘরে বীজ আলু রাখার ক্ষেত্রে বীজ শােধন করা অবশ্যই একটি করনীয় কাজ, দাবি করেন তিনি৷
মন্ত্রী জানান, ঐ চাষীরা হিমঘর থেকে তাদের রাখা বীজ আলু সম্পূর্ণ ভালাে অবস্থায় গ্রহন করেন ও নিজ বাড়িতে নিয়ে যান৷ বাড়ীতে নেওয়ার পর ঐ বীজ আলু পরবর্তী ৪৮ থেকে ৭২ ঘন্টা পর্যন্ত প্রয়ােজনীয় প্রক্রিয়াকরণ করেন নাই৷ তাঁর কথায়, নিয়ম অনুযায়ী হিমঘর থেকে বীজ আলু গ্রহন করার ২৪ ঘন্টার মধ্যে প্রক্রিয়াকরনের কাজ শুরু করতে হয়৷ যাতে বীজ আলু দীর্ঘ সময় হিমঘরে থাকার ফলে যদি কোন আলুতে পচন ধরে তা বাছাই করে সরিয়ে নেওয়া যায় এবং বাকী বীজ আলুকে ঘরের ছায়ায় ভালােভাবে শুকিয়ে স্বাভাবিক ঘরের তাপমাত্রায় এনে বীজের জন্য ক্ষেতে ব্যবহার করা যায়৷ মন্ত্রী দাবি করেন, বগাবাসার চাষীরা এই কাজটা না করার জন্যেই হয়ত তাদের বীজ আলুগুলাে নষ্ট হয়েছে৷ তবে, তাদের আলুচাযের জন্য দপ্তর ৫০০ কেজির মত টিপিএস টিউবারজেট বীজ আলুর ব্যবস্থা রেখেছে৷
প্রসঙ্গত, উদয়পুর বনদোয়ারস্থিত হিমঘরটি ২০১৬ সাল থেকে বিগত চার বছর৷ যাবৎ ভালােভাবে চলছে৷ এ বছর মােট ৫৮৬ মে. টন আলু কৃষকেরা রেখেছেন৷ তার মধ্যে৷ ৫০৫ মে. টন আলু কৃষকেরা এখন পর্যন্ত নিয়ে গেছেন এবং ঐ নির্দিষ্ট কয়েকজন কৃষক ছাড়া, অন্য কোন কৃষকদের কাছ থেকে আলু পচে যাওয়ার মত কোন অভিযােগ আসে নাই৷ তাই, কৃষি দপ্তরের উদয়পুর বনদোয়ারস্থিত হিমঘরের যথাযত ব্যবস্থাপনার ত্রুটির প্রশ্ণ তােলা যথার্ত নয় বলে দাবি করেন কৃষি ও কৃষক কালিয়া মন্ত্রী৷
কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তর জানিয়েছে, বিগত মরশুমে কৃষি দপ্তর পরিচালিত ১১টি হিমঘরে মােট ৪৫৩১ মে: টন আলু রাজ্যের চাষীরা রেখেছিলেন৷তার মধ্যে আনুমানিক ৪০০০ মে: টন আলু হিমঘর থেকে এখন পর্যন্ত নিয়ে গেছেন এবং তাতে কোন প্রকার পচনের কোন খবর নেই৷