বাইদ্যাদীঘি সংঘর্ষ কান্ডে গ্রেপ্তার পাঁচ, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ১৪৪ ধারা

নিজস্ব প্রতিনিধি, চড়িলাম, ৩১ অক্টোবর৷৷ বিজেপিতে গোষ্ঠী কোন্দলের জেরে গোলাঘাটি বিধানসভা কেন্দ্রের অধীন বাইদ্যাদীঘি এলাকায় তীব্র উত্তেজনা দেখা দিয়েছে৷ বুধবার রাতে উত্তেজিত বিজেপি কর্মীরা বাইদ্যাদীঘি বাজারে দুটি দোকান ও একটি ট্রিপার গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন৷ দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষে অন্তত ছয়জন আহত হয়েছেন৷ পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এলাকায় বিশাল পুলিশ ও টিএসআর বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে৷ বৃহস্পতিবার সকালে এলাকায় ৪৮ ঘণ্টার জন্য ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে৷ এ ঘটনায় পুলিশ পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে৷ তাদের মধ্যে তিনজনকে আজ আদালত জেল হেফাজতে পাঠিয়েছে৷ ঘটনাকে কংগ্রেস ও সিপিএমের ষড়যন্ত্র বলে অভিযোগ করেছে বিজেপি৷ এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে যাঁরা পরিবেশ বিষিয়ে তুলতে চাইছেন তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন গোলাঘাটি কেন্দ্রের বিধায়ক বীরেন্দ্রকিশোর দেববর্মা৷


অভিযোগ, বিজেপির সিপাহিজলা জেলা সংখ্যালঘু মোর্চার সভাপতি সাহেব মিয়াঁর সাথে বুধবার দুই যুবকের বচসা হয়েছিল৷ ওই সময় সাহেব মিয়াঁ দুই যুবককে শারীরিক নিগ্রহ করেছেন বলে অভিযোগ৷ এতে প্রতিশোধ নিতে সন্ধ্যায় বাইদ্যাদীঘি বাজারে কথিত নিগৃহীত ওই দুই যুবকের ঘনিষ্ঠরা সাহেব মিয়াঁকে পাল্টা মারধর করেছে৷ এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই সাহেব মিয়াঁর ঘনিষ্ঠরা সংঘবদ্ধভাবে বাইদ্যাদীঘি বাজারে হামলা চালায়৷ তখন কসবা এলাকার স্থানীয় জনগণও পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তুলেন৷ দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ মারাত্মক রূপ নেয়৷ উত্তেজিত সংঘর্ষকারীরা বাইদ্যাদীঘি বাজারে দুটি দোকানে আগুন ধরিয়ে দেয়৷ সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা একটি ট্রিপার গাড়িতেও তারা আগুন ধরিয়েছে৷
এদিকে সংঘর্ষের জেরে স্থানীয় দোকানদাররা ভয়ে পালিয়ে যান৷ অনেকে দোকান বন্ধ না করে মটর বাইক, বাই-সাইকেল ফেলে পালিয়ে যান৷ কিন্তু এরই মধ্যে বেশ কয়েকজন স্থানীয় জনগণও সংঘর্ষের জেরে আক্রান্ত হয়েছেন৷ পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে৷ কিন্তু দুটি দোকান ও ট্রিপার গাড়ি রক্ষা করা সম্ভব হয়নি৷ দমকল বাহিনী আগুন আয়ত্তে আনলেও প্রচুর ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গিয়েছে৷


গত রাতের সংঘর্ষে সাহেব মিয়াঁ-সহ ছয়জন আহত হয়েছেন৷ জানা গেছে, সাহেব মিয়াঁর বড় ভাই জুজু মিয়াঁ, শঙ্কর সাহা, জীবনচন্দ্র শীল, উত্তম দেবনাথ এবং প্রদীপ দেবনাথ আহত হয়েছেন৷ তাঁদেরকে বিশালগড় মহকুমা হাসপাতালে ভরতি করা হয়েছিল৷ তাঁদের মধ্যে সাহেব মিয়াঁ ও জীবনচন্দ্র শীলের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় চিকিৎসকরা তাঁদের আগরতলায় জিবি হাসপাতালে স্থানান্তর করেছেন৷ বাকি চারজনকে প্রাথমিক চিকিৎসার পর হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে৷


এদিকে, সাহেব মিয়াঁর বোনের অভিযোগ, কয়েকজন যুবক তাঁর ভাইয়ের গাড়ি আটকে তাঁকে প্রচণ্ড গালিগালাজ করেছিল৷ তখন সাহেব মিয়াঁ গাড়ি থেকে নেমে প্রতিবাদ জানালে ওই যুবকরা তাঁকে বেধড়ক পিটিয়েছে৷ তাঁকে বাঁচাতে গিয়ে তাঁর বড় ভাই জুজু মিয়াঁও আহত হয়েছেন৷ সাহেব মিয়াঁর বোন জানান, আক্রমণকারী যুবকদের পরিচয় তিনি জানেন না৷ কিন্তু ওই ঘটনায় তিনি থানায় অভিযাগ দায়ের করবেন৷ অন্যদিকে সংঘর্ষের খবর পেয়ে বুধবার রাতেই সিপাহিজলা জেলার পুলিশ সুপার কৃষ্ণেন্দু ভট্টাচার্য, বিশালগড়ের এসডিপিও উত্তম বণিক ও জম্পুইজলা এসডিপিও ঘটনাস্থলে ছুটে যান৷ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এলাকায় বিশাল পুলিশ ও টিএসআর বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে৷


এদিকে, সংঘর্ষের খবর পেয়ে বিশালগড়ের বিজেপি নেতা নিতাই চৌধুরী, বিজেপি-র সিপাহিজলা জেলা সভাপতি অঞ্জন পুরকায়স্থ, গোলাঘাটি মণ্ডল সভাপতি সুশান্ত সেনগুপ্ত ঘটনাস্থলে ছুটে যান৷ নিতাইবাবু এই সংঘর্ষের পেছনে কংগ্রেস ও সিপিএমের ষড়যন্ত্র রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন৷ তবে এলাকায় শান্তি বজায় রাখার জন্য তিনি আবেদন জানিয়েছেন৷


অন্যদিকে এই সংঘর্ষের ঘটনা সোশ্যাল মিডিয়ায় নানাভাবে বিভ্রান্তি ছড়ানোর অভিযোগ উঠেছে৷ ফলে, ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে যারা পরিবেশ বিষিয়ে তুলতে চাইছেন তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন গোলাঘাটির বিধায়ক বীরেন্দ্রকিশোর দেববর্মা৷ তিনি সকল অংশের জনগণের কাছে শান্তি বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন৷ পাশাপাশি নদীলাগ এলাকার সিপিএমের ক্যাডার বাহিনী বাইদ্যাদীঘি বাজারে সংঘবদ্ধভাবে হামলা চালিয়ে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টি করে রাজ্য সরকারকে কালিমালিপ্ত করার অপপ্রয়াস চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি৷
গতরাতে সংগঠিত ঘটনায় পুলিশ পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে৷ তাদের বিরুদ্ধে ভারতীয় ফৌজদারি দণ্ডবিধির ১৪৮, ১৪৯, ৩২৫ এবং ৩২৬ ধারায় মামলা হয়েছে৷ আজ পুলিশ সন্টু দেবনাথ, জুজু মিয়াঁ, অদূত মিয়াঁকে গ্রেফতারের পর আদালতে সোপর্দ করেছিল৷ আদালত তাদের ২ নভেম্বর পর্যন্ত জেল হেফাজতে পাঠিয়েছে৷ এদিকে, সাহেব মিয়াঁ ও জীবন শীল পুলিশের নজরদারিতে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন৷


গতকাল রাতে পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসলেও আজ সকাল হতেই ফের উত্তেজনা দেখা দেয়৷ তাই, সিপাহিজলা জেলা প্রশাসন বাইদ্যাদীঘি এলাকায় ৪৮ ঘণ্টার জন্য ১৪৪ ধারা জারি করেছে৷ জেলাশাসক এবং পুলিশ সুপার এলাকা পরিদর্শন করেছেন৷ আগামী ২ নভেম্বর শান্তি বৈঠক হবে বলে স্থির হয়েছে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *