দেশজুড়ে ৫১টি বিধানসভা উপনির্বাচনেও ভাল ফল বিরোধীদের, অপ্রত্যাশিত ফল বিজেপির

নয়াদিল্লি, ২৪ অক্টোবর (হি.স.) : দুই রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের পাশাপাশি বৃহস্পতিবার ১৮টি রাজ্যের ৫১টি বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচনের ফলাফলের নিরিখে জোর টক্কর দিয়েছে বিরোধীরা। বেশ কয়েকটি রাজ্যে অপ্রত্যাশিতভাবে আসন বাড়িয়েছে কংগ্রেস। প্রত্যাশিত ফলাফল করতে পারেনি গেরুয়া শিবির। খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর রাজ্য গুজরাটের ৬টি আসনে উপনির্বাচনের মধ্যে ৩টি আসনে এগিয়ে রয়েছে কংগ্রেস। অপর ৩টি আসনে এগিয়ে বিজেপি। উপনির্বাচনের আগে এই ৬ আসনের মধ্যে ৪টি আসনই ছিল গেরুয়া শিবিরের দখলে।

অর্থাৎ কংগ্রেস ১টি অতিরিক্ত আসন পাচ্ছে। উত্তরপ্রদেশের ১১টি আসনের ১১টিতেই জয়ের লক্ষ্যমাত্র রেখেছিল বিজেপি। কিন্তু, এই মুহূর্তে বিরোধীরা এগিয়ে আছে ৩টি আসনে। সমাজবাদী পার্টি ২টি, বহুজন সমাজ পার্টি ১টি আসনে এগিয়ে আছে। অন্যদিকে, বিজেপির ভোট শতাংশও অনেকটা কমেছে। হিমাচলপ্রদেশে বিধানসভা উপনির্বাচনে ধর্মশালা কেন্দ্রটি নিজেদের দখলেই রাখল রাজ্যের শাসকদল বিজেপি। এই কেন্দ্র থেকে ৬৬৭৩ ভোটে জয়লাভ করেছেন বিজেপি প্রার্থী বিশাল নেহারিয়া। দলের দুর্দশা বাড়িয়ে তিন নম্বর স্থানে নেমে গিয়েছে কংগ্রেস। শতাব্দী প্রাচীন দলটির প্রার্থী বিজয় ইন্দ্র কর্ণ পেয়েছেন মাত্র ৮১৯৮ ভোট, নির্দল প্রার্থী রাকেশ চৌধুরীর ঝুলিতে গিয়েছে ১৬৭২৪ ভোট। মধ্যপ্রদেশে ১টি আসনে উপনির্বাচন ছিল। তা ধরে রেখেছে কংগ্রেস। এই আসনে পরাজিত হলে কংগ্রেসের সরকার টিকে থাকা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারত। কিন্তু, তা কংগ্রেস ধরে রাখল।

রাজস্থানের একটি আসনেও বড় ব্যবধানে জিতেছে হাত শিবির। ছত্তিশগড়ের এক আসনেও জয় কংগ্রেসের। পঞ্জাবের ৪ আসনের উপনির্বাচনের মধ্যে কংগ্রেসের দখলে গিয়েছে ৩টি। আকালি দলের দখলে গিয়েছে একটি। বিহারেও খারাপ ফল বিজেপি জোটের। মোট পাঁচ আসনের উপনির্বাচনে তিনটি আসনে এগিয়ে কংগ্রেস-আরজেডি জোট। একটি আসনে জয়ী আসাদুদ্দিন ওয়েসির এআইএমআইএম। অপর আসনটি নির্দলের দখলে। সমস্তিপুর লোকসভা সিটে, লোক জনশক্তি পার্টি স্বমহিমায় নিজেদের জায়গা সুরক্ষিত করেছে যা সাংসদ রাম চন্দ্র পাশোয়ানের মৃত্যুর জন্য ফাঁকা ছিল। ছেলে প্রিন্স রাজ কংগ্রেসের অশোক কুমারের থেকে ৮০ হাজার ভোটে এগিয়ে থাকে সমস্তিপুর লোকসভা আসনে। আবার কিষাণগঞ্জে বিজেপির অবস্থা বেশ খারাপ। এআইএমআইএম সেখানে বেশ এগিয়ে। এইবার বিধানসভা নির্বাচনে এই দল বেশ অনেকটা শক্তি বাড়িয়েছে। তাঁরাই যে এইবার তাঁদের অস্তিত্বের প্রমাণ দিচ্ছে তা নিয়েও কোন সন্দেহ নেই।

আবার সিমরি বক্তিয়ারপুরে এগিয়ে রয়েছেন জেডিউ প্রার্থী লক্ষ্মীকান্ত মণ্ডল। এর আগে এই আসনটি জেডিউ-র দখলেই ছিল। নাথনগর কেন্দ্রে এগিয়ে রয়েছেন আরজেডি প্রার্থী জাফর আলম। এই আসনে জেডিউ প্রার্থী অরুণ কুমারের সঙ্গে তাঁর হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলছে। এর আগে এই আসনটি জেডিউ-র দখলেই ছিল। বেলহার কেন্দ্রে এগিয়ে রয়েছেন আরজেডি প্রার্থী রামদেও যাদব। এর আগে এই আসনটি জেডিউ-র দখলেই ছিল। দারাউন্দা বিধানসভা আসনে এগিয়ে রয়েছেন নির্দল প্রার্থী করণজিৎ সিং। এর আগে এই আসনটি দখলে ছিল জেডিউ-র। কেরলের পাঁচ আসনে শূন্য বিজেপি। সিপিএম এবং কংগ্রেস কেরালায় ২টি করে আসনে জয়ী হল। একটি আসন পেল ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন মুসলিম লিগ (আইইউএমএল)।

উল্লেখ্য, গত নির্বাচনে কংগ্রেসের দখলে থাকা কোনি, ভাত্তিয়ুরকাভু বিধানসভায় জয়লাভ করে সিপিএম। অন্য দিকে আরুর, এর্নাকুলাম দখল নিয়েছে কংগ্রেস। ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন মুসলিম লিগ নিজেদের পুরনো মঞ্জেশ্বর আসনটি দখলেই রেখেছে। ভোট শতাংশের নিরিখেও সবার আগে রয়েছে সিপিএম। ৩২ শতাংশ ভোট মিলেছে লালদের। কংগ্রেস ২৮ শতাংশ এবং বিজেপি ২৩ শতাংশ ভোট পেয়েছে। এদিকে পুদুচেরির একটি আসনে এগিয়ে কংগ্রেস। আর তামিলনাড়ুর দুই আসনের উপনির্বাচনে এগিয়ে এআইএডিএমকে। তেলেঙ্গানায় একটি আসনে এগিয়ে শাসক টিআরএস। ওড়িশার একটি আসনে উপনির্বাচন ছিল সেটিও জিতে নিয়েছে বিজু জনতা দল। অসমের চার আসনের মধ্যে ৩টি আসন থাকছে বিজেপি দখলে।

একটি আসন যাচ্ছে বিরোধী এআইইউডিএফের দখলে। একটি আসনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলছে কংগ্রেস-বিজেপির। গেরুয়া শিবিরের জন্য ভাল খবর আছে সিকিম থেকে। সিকিমের ৩ আসনেই জিতেছে বিজেপি জোট। অরুণাচলের এক আসনে এগিয়ে নির্দল। হিমাচলের দুই আসনেই জিতেছে গেরুয়া শিবির। উল্লেখ্য, গত ২১ অক্টোবর মহারাষ্ট্র ও হরিয়ানা দুই রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের পাশাপাশি ১৮টি রাজ্যের ৫১টি বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচনের ভোটগ্রহণ করা হয় |

এদিন ভোটগ্রহণ হয় কর্ণাটকের, উত্তরপ্রদেশ, বিহার গুজরাত, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, পঞ্জাব, অসম, কেরল, মেঘালয়, ওডিশা, পুডুচেরি, সিকিম, তামিলনাড়ু, তেলেঙ্গানা, ছত্তিশগড়, অরুণাচল প্রদেশ এবং হিমাচলপ্রদেশে বিধানসভা আসনে | আজ শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী অরুনাচল প্রদেশে ভোট পড়েছে হার ৯০.৭৪ শতাংশ, অসমে ৭৪.১৪ শতাংশ বিহারে ৪৯.৫০ শতাংশ, গুজরাটে ৫০.৩৫ শতাংশ হিমাচল প্রদেশে ৬৭.৯৭ শতাংশ, কেরলে ৬৪.৯৯ শতাংশ, মধ্যপ্রদেশে ৫৬.৬২ শতাংশ, মেঘালয়ে ৭৯.৮৩ শতাংশ, ওড়িশায় ৭২ শতাংশ, পাঞ্জাবে ৬০.৫৯ শতাংশ রাজস্থানে ৬৪.২৫ শতাংশ, সিকিমে ৬৯.৫৫ শতাংশ, তামিলনাড়ুতে ৬৮.৮৭ শতাংশ, উত্তরপ্রদেশে ৪৫.০৪ শতাংশ, ছত্তিসগড়ে ৭৪.৩৯ শতাংশ, তেলেঙ্গানায় ৮২.২৩ শতাংশ এবং পুডুচেরীতে ভোট পড়েছে ৬৬.৯৫ শতাংশ |