নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৭ অক্টোবর৷৷ পণ্য সরবরাহে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মধ্যে ত্রিপুরা প্রথম স্থানে রয়েছে৷ আজ এই দাবি করেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব৷ তাঁর কথায়, বাংলাদেশের সহযোগিতায় ত্রিপুরায় পণ্য পরিবহনে বৈপ্লবিক পরিবর্তন হতে চলেছে৷ তাতে, ত্রিপুরা উত্তর-পূর্বাঞ্চলের লজিস্টিক হাব হতে চলেছে৷

প্রসঙ্গত, রিকগনিশন অব প্রায়র লার্নিং (আর পি এল) প্রকল্পে ত্রিপুরায় ২০ হাজার জনকে কৃষি, নির্মাণ, রাবার এবং হস্তকারু শিল্পক্ষেত্রে ২০২০ সালের মার্চের মধ্যে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করে তোলার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে৷ সমর্থ প্রকল্পে ত্রিপুরায় ৩৫৪০ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে৷ রোজগার মেলায় ১৬টি সেক্টরের ৩৫টি শিল্প সংস্থা অংশ নিচ্ছে৷ এর মধ্যে বহির্রাজ্যের ১৮টি সংস্থা রয়েছে৷ আজ হাপানিয়া মেলা প্রাঙ্গনে রোজগার মেলার সূচনা করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ত্রিপুরার সম্পদকে কাজে লাগিয়ে আগামীদিনে শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠার সম্ভাবনা রয়েছে৷ এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর জন্য দরকার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দক্ষ ব্যক্তি৷ তাহলেই রাজ্যে রোজগারের পথ সুুগম হবে৷ তাতে, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা শিল্প প্রতিষ্ঠানে কর্মসংস্থানের সুুযোগ পাবেন৷
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার ব্যক্তিত্ব বিকাশের উপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে৷ সেই লক্ষ্যে দক্ষতা উন্নয়ন দপ্তরের মাধ্যমে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে৷তাঁর দাবি, রাবার, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, পর্যটন ইত্যাদি ক্ষেত্রগুলির উপর বিশেষ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে৷ ফলে, রাজ্যবাসীকে রাজ্যে সহজলভ্য বিভিন্ন সম্পদ যেমন আনারস, কাঁঠাল, কমলা, লেবু, সুুপারি, আদা, কালোমরিচ ইত্যাদি সম্পদকে কাজে লাগিয়ে রোজগার করার প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে হবে৷ পাশাপাশি মৎস্যচাষের ক্ষেত্রেও বিশেষ প্রশিক্ষণ নেওয়ার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন মুখ্যমন্ত্রী৷
এদিন মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেন, ভবিষ্যতে ত্রিপুরা লজিস্টিক হাবে পরিণত হবে৷ উত্তর-পূর্বা’লের রাজ্যগুলির মধ্যে ত্রিপুরা লজিস্টিক্সে প্রথম স্থানে রয়েছে৷ তাঁর কথায়, ত্রিপুরার সাব্রুমে স্পেশাল ইকোনমিক জোন (এস ই জেড) গড়ার জন্য প্রয়োজনীয় অনুমোদন পাওয়া গেছে৷ সেখানে বড় মাত্রায় মানুষের রোজগারের সুুযোগ সৃষ্টি হবে৷ ২০২০ সালের মার্চের পর ফেণী নদীর উপর নির্মীয়মান সেতুর কাজ সম্পন্ন হয়ে যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন৷ তাঁর মতে, ওই সেতু নির্মাণ হলে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে খুব সহসাই প্রয়োজনীয় সামগ্রী রাজ্যে নিয়ে আসা যাবে৷ একই সঙ্গে গোমতী নদী হয়ে জলপথে সোনামুড়া পর্যন্ত আন্তর্জাতিক প্রোটোকল রুট হিসেবে ইতিমধ্যে স্বীকৃতি দিয়েছে ভারত এবং বাংলাদেশ দু’দেশের সরকার৷ ফলে, সোনামুড়ায় অস্থায়ীভাবে জেটি নির্মাণ করা হবে৷ তাই রাজ্যবাসীকে আগামীদিনে এই কর্মসূচিগুলিতে অংশ নিতে এখন থেকেই সেই বিষয়গুলির উপর দক্ষতা অর্জন করতে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ নেওয়ার আহ্বান জানান মুখ্যমন্ত্রী শ্রীদেব৷
তাঁর মতে, পর্যটন ক্ষেত্রে আগামীদিনে রোজগারের বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে৷ তাই পর্যটন ক্ষেত্র সহ রাবার, চা পাতা, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ এবং ট্রেডিং বিষয়গুলির উপর প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য তিনি গুরুত্বারোপ করেন৷ মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, আগামী ৩ বছরের মধ্যে ২ লক্ষ মেট্রিকটন ধান রাজ্যের কৃষকদের থেকে ক্রয় করা হবে৷ তাই রাইস মিলে কাজ করার উপর প্রশিক্ষণ দেওয়ার উপরও গুরুত্ব আরোপ করেন তিনি৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যে প্রায় ৩৫০টি ইট ভাট্টা রয়েছে৷ কিন্তু সেই সব প্রতিষ্ঠানে আমাদের রাজ্যের কোনও নিজস্ব আগুন মিস্ত্রি নেই৷ সেই ক্ষেত্রে দক্ষ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে রাজ্যেই যাতে আগামীদিনে আগুন মিস্ত্রি তৈরি করা যায় সেই লক্ষ্যে কাজ করার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে উদ্যোগ নিতে বলেন মুখ্যমন্ত্রী শ্রীদেব৷
প্রসঙ্গক্রমে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আগামীদিনগুলিতে দেশে রোজগারী মানুষের সংখ্যা ক্রমাগত বেড়ে চলবে৷ এর ফলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি এবং প্রগতির পাশাপাশি দেশের প্রব’দ্ধির হার বাড়বে৷ এই প্রসঙ্গে অন্যান্য দেশের উন্নতির অবস্থানের কথাও তিনি তার বক্তব্যে তুলে ধরেন৷ তিনি বলেন, দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কপর্োরেট কর কমিয়ে এনে ২৫ শতাংশ করেছে৷ এর ফলে ভারতের বাজারে দেশে বিদেশী পুঁজিপতিরা লগি করতে উৎসাহিত হবে৷ কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তে কেন্দ্রীয় সরকারের রাজস্ব খাতে আদায় কম হলেও এর ফলে ভবিষ্যতে ৭ থেকে ৮ লক্ষ কোটি টাকা ভারতের বাজারে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে৷ এর মাধ্যমে ভারতের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন৷
অনুষ্ঠানে মুখ্যসচিব ইউ ভেঙ্কটেশ্বরলু বলেন, ত্রিপুরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে৷ যেহেতু আন্তর্জাতিক সীমানা খলে যাচ্ছে তার ফলে লজিস্টিক, হোটেল ট্যুরিজম ইত্যাদি ক্ষেত্রগুলিতে রোজগারের সুুযোগ তৈরি হবে৷ তিনি বলেন, পর্যটনে একটা বিশাল সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে৷ এইগুলিকে কাজে লাগিয়ে স্বনির্ভর হতে হবে৷
বহির্রাজ্যের দক্ষ কর্মীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে হলে দক্ষতা এবং ক্যাপাসিটি বিল্ডিং অত্যন্ত প্রয়োজন৷ শিক্ষার পাশাপাশি দক্ষতা বিকাশের ক্ষেত্রেও বিশেষ জোর দেওয়ার উপর মুখ্যসচিব গুরুত্ব আরোপ করেন৷ অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তরের প্রধান সচিব শশীরঞ্জন কুমার৷ ধন্যবাদসূচক বক্তব্য রাখেন দক্ষতা উন্নয়ন দপ্তরের অধিকর্তা স্মিতা মল এম এস৷
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী কৌশল বিকাশ যোজনায় প্রশিক্ষণ প্রাপ্তদের শংসাপত্র এবং প্রশিক্ষণ নিয়ে বিভিন্ন সংস্থায় যারা নিযুক্ত হচ্ছেন তাদের হাতে নিয়োগপত্র তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব৷ অনুষ্ঠানে অধিক সংখ্যায় যুবাদের প্রশিক্ষণ এবং দক্ষতা বিকাশে উদ্ভাবনী প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য সংস্থাসমূহকে স্মারক উপহার তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী৷ রোজগার মেলায় রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলের যুবক-যুবতীরা অংশগ্রহণ করে৷

