চিরাং (অসম), ১৭ অক্টোবর (হি.স.) : বিটিএডি এলাকার অন্তর্গত চিরাং জেলার বিজনি মহকুমার অন্তর্গত ভারত-ভুটান সীমান্তবর্তী ঘন জঙ্গলে অভিযান চালিয়ে ঝোঁপের ভিতর থেকে বহু গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে যৌথবাহিনী।

বৃহস্পতিবার চিরাঙের পুলিশ সুপার সুধাকর সিং জানান, বিশেষ গোপন সূত্রে তাঁর কাছে খবর আসে, ভারত-ভুটান সীমান্তে শুকানতেকলাই নদী তীরবর্তী ঘন মাওরিয়া জঙ্গলে কতিপয় যুবক সন্দেহজনক বেশ কিছু সামগ্ৰী লুকিয়ে মজুত করেছে। ওই খবরের ভিত্তিতে গতকাল সকাল প্রায় দশটা নাগাদ মহকুমা পুলিশ আধিকারিক (এসডিপিও) প্ৰকাশ মেধির নেতৃত্বে ভারতীয় সেনা বাহিনীর পঞ্চম গাড়োয়াল রাইফেল এবং ১৫ নম্বর সশস্ত্ৰ সীমা বল (এসএসবি)-এর যৌথ বাহিনী ভারত-ভুটান সীমান্তবর্তী আমগুড়ি থানার অন্তৰ্গত কয়লা-ময়লা পুলিশ ফাঁড়ি এলাকার ঘন মাওরিয়া জঙ্গলে তালাশি অভিযান চালায়।
ঘন জঙ্গলে মেটাল ডিকেক্টরের সহায়তায় তালাশি চালিয়ে বিকেলের দিকে প্ৰথমে একটি প্লাস্টিকের ড্ৰাম দেখেন অভিযানকারীরা। তাছাড়া জঙ্গলের আশপাশে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে ছিল বহু প্লাস্টিকের ক্যারি ব্যাগ। পরে ওই ড্রাম ও ক্যারিব্যাগ থেকে একে সিরিজের বহু গুলি, বিস্ফোরক, হ্যান্ড গ্রেনেড ইত্যাদি উদ্ধার করে অভিযানকারী যৌথ বাহিনী।
পুলিশ সুপার জানান, অভিযানে একে সিরিজ রাইফেলের ১০১টি সক্রিয় গুলি, ৫.৫৬ এমএম পিস্তলের ৮ রাউন্ড সক্রিয় গুলি, ৭.৬২ এমএম পিস্তলের ৩ রাউন্ড সক্রিয় গুলি, একটি চাইনিজ হ্যান্ড গ্ৰেনেড, একটি ৩৬ নম্বর হ্যান্ড গ্ৰেনেড, তারের সঙ্গে সংযুক্ত ইলেক্ট্ৰনিক ডিটেনেটর ১০টি, হস্ত নিৰ্মিত বোমা ২-টি, খালি কাৰ্তুজ ২ রাউন্ড।
অভিযানে কাউকে আটক করা যায়নি বলে জানিয়ে পুলিশ সুপার সুধাকর সিং বলেন, উদ্ধারকৃত গুলি ও বিস্ফেোরকগুলি কে বা কারা, কোথা থেকে বা কার কাছ থেকে মাওরিয়া জঙ্গলে এনে মজুত করেছিল সে সম্পর্কে এখনও তাঁদের কাছে কোনও তথ্য নেই। তাঁর সন্দেহ, এগুলি উগ্ৰপন্থী সংগঠন এনডিএফবি-র হতে পারে। তবে এর তদন্ত প্রক্রিয়া চালানো হচ্ছে বলে দাবি করেন পুলিশ সুপার সিং।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গত ২৪ সেপ্টেম্বর নিম্ন অসমের বোড়োল্যান্ড টেরিটরিয়াল এরিয়া ডিস্ট্রিক্ট (বিটিএডি)-এর অন্তর্গত পানবাড়ি সংরক্ষিত বনাঞ্চলে যৌথবাহিনীর অভিযানে উদ্ধার হয়েছিল আগ্নেয়াস্ত্রের বিশাল ভাণ্ডার। এদিন ভোর প্রায় ৫.৩০ মিনিট নাগাদ জেলার গাব্ৰুখুন্দা এলাকার পানবাড়ি সংরক্ষিত বনাঞ্চলে অভিযান চালিয়ে মাটি খুঁড়ে চিরাঙের এসডিপিও নেতৃত্বাধীন সশস্ত্র রাজ্য পুলিশ, ভারতীয় সেনাবাহিনীর ৫-ম গাড়োয়াল রাইফেলস এবং ৫৪ ব্যাটালিয়নের সশস্ত্র সীমা বল (এসএসবি)-এর যৌথবাহিনী অভিযান চালিয়ে যথাক্রমে ৯-টি ফ্যাক্টরি নিৰ্মিত রাইফেল, ১১-টি দেশি রাইফেল, ৫৬টি ৭.৬২ একে সিরিজের সক্রিয় গুলি, ৫.৫৬ একে সিরিজের গুলি ১০টি, ৭.৬২-এর স্নিপার গুলি ২১, ৭.৬২-এর পাইকা গুলি ১০টি, ৭.৬২ সিটিএন ২৯টি, ৩৩৩ নাইট্রো ০১-টি, এম ২০ গুলি ০১-টি, দেশি বন্দুকের গুলি ০৫-টি, খালি কার্তুজ ৮৩টি, ১২ বোরের খালি কার্তুজ ১৫টি, ৭.৬২ এমএম পিস্তলের ম্যাগাজিন ০৩-টি, পয়েন্ট (.) ২২ এমএম পিস্তলের ম্যাগাজিন ০১-টি, ১৭ কিলোগ্রাম বিস্ফোরক (পিইকে), চীনে নির্মিত এইওয়াইটি হ্যান্ড হেল্ড রেডিও ০২-টি, ১২ ভোল্টের ব্যাটারি ০১-টি, ওয়ার ৯৩ ফুট, সন্দেহজনক লিড/লোহার বল ১০টি এবং অতিরিক্ত ব্যারাল ০১-টি উদ্ধার করেছিল।
পুলিশ সুপারের ধারণা, যৌথবাহিনীর তীব্র জঙ্গি-বিরোধী অভিযানে দিশেহারা হয়ে সংশ্লিষ্টরা তাদের আগ্নেয়াস্ত্রগুলি ঘন জঙ্গলের কোথাও মাটির নীচে অথবা এদিক-ওদিকে লুকিয়ে রাখছে। তিনি জানান, এলাকায় জঙ্গি কার্যকলাপের বিরুদ্ধে সাঁড়িশি অভিযান অব্যাহত থাকবে।

