বাধারঘাট উপনির্বাচনে জয়ী বিজেপি, অক্সিজেন পেল সিপিএম ও কংগ্রেস

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৭ সেপ্ঢেম্বর৷৷ বাধারঘাট কেন্দ্রে উপনির্বাচনে বিজেপি জয়ী হয়েছে৷ বিজেপি প্রার্থী মিমি মজুমদার ২০,৪৮৭টি ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন৷ অন্যদিকে তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সিপিএম সমর্থিত বামফ্রন্ট প্রার্থী বুল্টি বিশ্বাস ১৫,২১১টি দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছেন৷ তেমনি কংগ্রেস প্রার্থী রতনচন্দ্র দাস ৯১০৫টি ভোট পেয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছেন৷ তবে, বাধারঘাট উপনির্বাচনের ফলাফলে নতুন ভাবনা জরুরি হয়ে পড়েছে, তা অস্বীকার করার কোনও অবকাশ নেই৷


এদিন সকাল থেকে গণনা শুরু হওয়ার পর বিজেপির জয় নিশ্চিত হয়ে যায়৷ কারণ, পোস্টাল ব্যালটের গণনা এবং প্রত্যেক রাউন্ডেই বিজেপি প্রার্থী এগিয়ে যাচ্ছিলেন৷ আজকের ভোটগণনাকে ঘিরে সকাল থেকেই বিজয় মিছিলের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিল বিজেপি৷ গণনা যত এগিয়েছে, বিজেপি কর্মী ও সমর্থকদের উল্লাসের মাত্রা ততই বাড়তে থাকে৷ উপনির্বাচনে রিটার্নিং অফিসার জানিয়েছেন, বিজেপি ২০,৪৮৭, সিপিএম ১৫,২১১, কংগ্রেস ৯,১০৫, এসইউসিআই প্রার্থী ৪৭০টি ভোট পেয়েছেন৷ নোটায় ভোট পড়েছে ৬৬৭টি৷ তাছাড়া, চারটি ভোট বাতিল হয়েছে৷ সবমিলিয়ে ভোট পড়েছিল ৪৫,৯৪৪টি৷ বিজয়ী প্রার্থীর হাতে জয়ের সংশাপত্র তুলে দিয়েছেন রিটার্নিং অফিসার৷


প্রত্যাশিতভাবেই উপনির্বাচনে বিজেপি জয়ী হয়েছে৷ ২০১৮ বিধানসভা নির্বাচনের তুলনায় কমেছে সিপিএমের ভোট৷ কিন্তু, উনির্বাচনে একাংশ ভোটারের ভোট বাক্সে মত প্রকাশে অনুপস্থিতিতে বিজেপিকে নতুন করে ভাবতে হবে৷ কারণ, উপনির্বাচনে বিধানসভা নির্বাচনের তুলনায় ১২ শতাংশ ভোট কম পড়েছে৷ তেমনি তর তর করে বিজেপির ভোটের হারও কমে গেছে৷ সিপিএমেরও ভোট কমেছে, কিন্তু কংগ্রেস-সিপিএম মিলে বিজেপি থেকে ভোট বেশি পেয়েছে৷ বিরোধী খাতায় ভোটার বেড়ে যাওয়ার ঘটনায় নতুন করে ভাবনা জরুরি বলে মনে করা অস্বাভাবিক নয়, মন্তব্য রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের৷
২০১৮ সালের বিধানসভা, এর পর ২০১৯ লোকসভা নির্বাচন এবং এখন একটি মাত্র কেন্দ্রে উপনির্বাচনের হিসাব-নিকাশ অত্যন্ত জরুরি বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল৷

২০১৮ বিধানসভা নির্বাচনে দিলীপ সরকার জয়ী হয়ে তাঁর দুর্গ ধরে রেখেছিলেন৷ প্রয়াত দিলীপ সরকার কংগ্রেস থেকে তৃণমূল এবং তার পর বিজেপিতে যোগ দিলেও ভোটাররা ২০১৮ বিধানসভা নির্বাচনে তাঁর উপরই আস্থা রেখেছিলেন৷ আবার বলা যেতেই পারে, ত্রিপুরার ভোটাররা বিজেপি এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রতি আস্থা প্রদর্শন করেছিলেন৷ এর পর ২০১৯ লোকসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হল৷ কিন্তু তখন বিধায়ক দিলীপ সরকার প্রয়াত হয়েছেন৷ কিন্তু, ভোটের ফলাফলে কোনও হেরফের হয়নি৷


২০১৮ বিধানসভা নির্বাচনে বাধারঘাট কেন্দ্রে ৫৭,৬৬১ জন ভোটারের মধ্যে ৫৩,১০৩ জন ভোট দিয়েছিলেন৷ প্রয়াত বিধায়ক দিলীপ সরকার পেয়েছিলেন ২৮,৫৬১ ভোট, শতাংশের হিসেবে ৫৩.৮৫ শতাংশ৷ সেই তুলনায় সিপিএম প্রার্থী ঝর্ণা দাস বৈদ্য পেয়েছিলেন ২৩,১১৩ ভোট, শতাংশের হিসেবে ৪২.৫৮ শতাংশ৷ তবে, জাতীয় দল কংগ্রেসের ওই নির্বাচনে চূড়ান্ত ভরাডুবি হয়েছিল৷ কারণ, কংগ্রেস প্রার্থী রতনচন্দ্র দাস পেয়েছিলেন মাত্র ৫০৫টি ভোট, শতাংশের হিসেবে দাঁড়ায় ০.৯৫ শতাংশ৷
এর পর ছিল ২০১৯ লোকসভা নির্বাচন৷ ওই নির্বাচনে ভোটার প্রায় একই ছিলেন৷ ভোটের ফলাফলে দেখা গেছে, বিজেপি ২৮,১৪০, সিপিএম ৯,৭৩৩ এবং কংগ্রেস ৮,৪৯৯ ভোট পেয়েছিল৷ ওই নির্বাচনে বিজেপি-র ভোটে কোনও প্রভাব না পড়লেও, বিরোধী ভোট আড়াআড়িভাবে বিভক্ত হয়েছিল৷


কিন্তু, এবার উপনির্বাচনের ফলাফলে পাটিগণিতের ভাষায় কিছুটা তারতম্য ঘটেছে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল৷ কেননা, ২০১৮ সালে বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি ৫,৪৪৮ ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছিল৷ এবার উপনির্বাচনে ৫২৭৬ ভোটার ব্যবধান৷ জয়ের ব্যবধানে খুব একটা ফারাক নেই, এমনকি শতাংশের হিসাবে উপনির্বাচনে ভোটের হারে বিধানসভা নির্বাচনের তুলনায় ১ শতাংশ বৃদ্ধি হয়েছে৷ তবু, বিজেপিকে এখন থেকে নতুন করে ভাবতে হবে, সে-কথা উড়িয়ে দেওয়া মোটেও স্বাস্থ্যকর হবে না বলে দাবি রাজনৈতিক মহলের৷


তাঁদের যুক্তি, উপনির্বাচনে বিধানসভা নির্বাচনের তুলনায় ১২ শতাংশ ভোট কম পড়েছে৷ ২০১৮ বিধানসভা নির্বাচনে ভোট পড়েছিল ৫৩,১০৩ এবং এবার উপনির্বাচনে ভোট পড়েছে ৪৫,৯৪৪৷ সোজা কথায়, ৮,১৫৯টি ভোট এবার কম পড়েছে৷ ভোট কম পড়ার হাজারো যুক্তি থাকতেই পারে, তা-ও অস্বীকার করার কোনও সুযোগ নেই৷ কিন্তু, হিসাব মিলিয়ে দেখলে বোঝা যাবে, বিধানসভা নির্বাচনের তুলনায় উপনির্বাচনে বিজেপি ৮,০৭৪টি ভোট কম পেয়েছে৷ উপনির্বাচনে যাঁরা ভোট দেননি, তাঁরা সকলেই বিজেপি সমর্থক, এমনটা ভাবাও যথেষ্ট ছেলেমানুষী হবে বলে মনে করা হচ্ছে৷ অথচ, সিপিএম এবং কংগ্রেসের উপনির্বাচনে সম্মিলিত ভোটের হার ২৪,৩১৬৷ তাতেও অস্বীকার করার সুযোগ নেই, বাঁধারঘাটের অধিকাংশ ভোটার বিরোধী দলের প্রতি আস্থা রেখেছেন৷ সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ হল, ২০১৮ বিধানসভা নির্বাচনের তুলনায় কংগ্রেসের ভোট অস্বাভাবিক বৃদ্ধি হয়েছে৷


তাই বলা হচ্ছে, এখন থেকে রমজ্যে প্রশাসনিক এবং সাংগঠনিক পরিচালনায় নতুন ভাবনা নিয়ে নামতে হবে বিজেপিকে৷ তবেই রাজ্যের রাজনৈতিক সমীকরণে কোনও হেরফের হবে না বলে ধারণা রাজনৈতিক মহলের৷