কলকাতা, ২৩ সেপ্টেম্বর (হি.স): ‘আপনারা সাহসী হোন । আমি আপনাদের সঙ্গে দুঃসাহসী হব । আমি সাহসী লোকজনকে পছন্দ করি । আর যদি সাহস না দেখিয়ে ভয়ে গুটিয়ে যান, তাহলে আমাকে পাশে পাবেন না।’ সোমবার কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনস্থ কর্মক্ষেত্রগুলোতে জনবিরোধী নীতির প্রতিবাদে নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসির তরফে একটি সমাবেশের আয়োজন করা হয় । সেখানেই মূল বক্তা হিসেবে ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । সেখানেই তিনি একথা বলেন । রেল, কয়লা, বিএসএনএল, ব্যাঙ্ক সহ বিভন্ন কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থায় নরেন্দ্র মোদী সরকার যা ইচ্ছে তাই করছে বলে অভিযোগ তৃণমূলের । সে কথা বলতেই মুখ্যমন্ত্রী এদিন এনআরসি প্রসঙ্গ তোলেন । বলেন, ‘বাংলায় আতঙ্কে মানুষের মৃত্যু হচ্ছে । কেউ ভয় পাবেন না । আমরা তো আছি নাকি । আমরা তো মরে যাইনি।’

কেন্দ্রীয় সংগঠন বিলগ্নিকরণের প্রতিবাদে আগামী মাস থেকে পথে নামবে তৃণমূল । মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দেন, আগামী ১৮ অক্টোবর শিয়ালদা থেকে ফেয়ারলিপ্লেসের সামনে পর্যন্ত প্রতিবাদ মিছিল হবে । হাঁটবেন মুখ্যমন্ত্রী । তারপর ২৬ এবং ২৭ অক্টোবরও প্রতিবাদ হবে । ২৬ তারিখ কাশীপুর গানসেল ফ্যাক্টরি এবং ২৭ তারিখ ডালহৌসীতে কোল ইন্ডিয়ার সামনে অবস্থান করবে তৃণমূল । কোল ইন্ডিয়ার সামনে বিক্ষোভ জমায়েত করার জন্য সংসদীয় দল নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে দায়িত্ব দেন । সাংসদদের দায়িত্ব দেন দিল্লিতে ধরনার আয়োজন করার । মুম্বই এবং চেন্নাইতেও ধরনা হবে বলে জানান তৃণমূল নেত্রী ।
তিনি বলেন, ‘আমার প্রতি ক্ষোভ থাকতে পারে । আমি কিন্তু কারও চাকরি খাইনি । ত্রিপুরায় ভোটের আগে বলেছিল সব ডিএ দিয়ে দেওয়া হবে । এখনও পর্যন্ত তা হয়নি।’ বিএসএনএল–এর কর্মীদের বেতন না পাওয়া, এয়ার ইন্ডিয়া বন্ধের চেষ্টা, প্রতিরক্ষা এবং ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রকে বিলগ্নিকরণের চেষ্টা, রেলের বেসরকারিকরণের প্রতিবাদ জানাতে সবাইকে স্বর ওঠাতে আবেদন করেন মুখ্যমন্ত্রী । শহর কলকাতায় প্রতিবাদ মিছিলের পাশাপাশি দিল্লিতেও কীভাবে সরব হবে তৃণমূল নেতৃত্ব, তাও ঠিক করে দেন ।
তাঁর আবেদন, ‘কথা বলতে ভয় পেলে সোশ্যাল সাইটে প্রতিবাদ জানান । আপনারা যদি সাহসী হন, আমি তাহলে দুঃসাহসী হব।’ রাজ্যের বিরোধী দলগুলোর প্রতি উষ্মা প্রকাশ করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন বলেন, তৃণমূলের কোনও ছোট ঘটনাতে বিক্ষোভ দেখালেও বিজেপির এধরনের জাতীয় ইস্যুগুলি নিয়ে কখনও প্রতিবাদ করেনি তারা ।
জাতীয় নাগরিক পঞ্জি নিয়ে এদিন রাজ্য সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘এনআরসি নিয়ে অযথা ভয় পাবেন না।’ এরাজ্যে ইতিমধ্যেই এআরসির জন্য ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে উল্রলেখ করে মুখ্যমন্ত্রীর সাফ মন্তব্য, ‘রাজ্য সরকারের অনুমোদন ছাড়া এনআরসি সম্ভব নয় । আমরা তো কখনওই তা করতে দেব না । বন্যায় নথি হারিয়ে গেলে থানায় একটা ডায়রি করে রাখুন । ভোটার লিস্টে নাম তোলার কাজ চলছে । সেখানে সব জানান । ভয় পাবেন না । আমি তো বলছি, এখানে এনআরসি হবে না । আমার কথায় ভরসা রাখুন । কে করবে এখানে এনআরসি ? করতে হলে রাজ্যের সাহায্য প্রয়োজন। আমি এখানে তা হতে দেব না। কিছু রাজনৈতিক অপপ্রচারে পা দেবেন না । কে বলেছে ১৯৭১ সালের নথি প্রয়োজন ? কীভাবে নথি দেবেন ? এসবের কোনও প্রয়োজন নেই । বিজেপির হুঁশিয়ারিতে কান দিয়ে নিজেদের জীবন নষ্ট করবেন না।’ এই প্রসঙ্গে তিনি সংবাদমাধ্যমের ভূমিকা নিয়েও সমালোচনা করেন।
নেতাজি ইনডোরের জনসভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘ভোটার লিস্টে নাম না উঠলে দলের কর্মীদের বলবেন । না তুললে দিদিকে বলোতে বলবেন । ঘাড় ধরে তোলাব । বিহারের চিফ মিনিস্টার বলে দিয়েছে বিহার মে নেহি হোগা । সব কিছু অত সস্তা নয়।’ দিল্লির দিকে আঙুল তুলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘সন্ত্রাসী উন্মত্ততার দানবীয় তাণ্ডব চলছে । লড়তে হবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে।’

