নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৯ সেপ্ঢেম্বর৷৷ ত্রিপুরায় সাফাই কর্মীদের দুরবস্থার জন্য কার্যত পূর্বতন বামফ্রন্ট সরকারকে কাঠগড়ায় দাঁড় করালেন সাফাই কর্মী জাতীয় কমিশনের সদস্যা মঞ্জু দিলের৷ তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ত্রিপুরায় সাফাই কর্মীদের জন্য সরকারি দফতরে অনুমোদিত পদ নেই৷ তাই তাঁদের অর্থ-সামাজিক উন্নয়ন হয়নি৷

বুধবার তিনি আগরতলায় ত্রিপুরা রাজ্য অতিথিশালায় সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, কেমন আছেন সাফাই কর্মীরা, তা বুঝতে এবং জানতেই ত্রিপুরায় এসেছি৷ কিন্তু তাঁদের অবস্থা দেখে ভীষণ বিস্মিত হয়েছি৷ তিনি ক্ষোভের সুরে বলেন, সাফাই কর্মীদের সুরক্ষা সামগ্রী ত্রিপুরায় সামগ্রিকভাবে প্রদান করা হয় না৷ কোনও কোনও ক্ষেত্রে সুরক্ষা সামগ্রী দেওয়া হয় ঠিকই, কিন্তু সেগুলি অত্যন্ত নিম্নমানের হওয়ায় খুব অল্প সময়ে তা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে৷
তাঁর কথায়, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুসারে সাফাই কর্মীদের নর্দমায় নামানো যাবে না৷ তবে, বিশেষ ক্ষেত্রে নর্দমায় নামানো হলে তাঁদের জন্য সমস্ত সুরক্ষা সামগ্রী সুনিশ্চিত করতে হবে৷ এদিন তিনি বলেন, ভারত সরকার গরিবদের স্বাস্থ্য পরিষেবায় আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্প এনেছে৷ সেক্ষত্রে ত্রিপুরায় সাফাই কর্মী ওই প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন কিনা তা সুনিশ্চিত করার জন্য পশ্চিম ত্রিপুরা জেলাশাসককে নির্দেশ দিয়েছি৷ সাথে যোগ করেন, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় প্রত্যেক সাফাই কর্মীর ঘর বরাদ্দ সুনিশ্চিত করার জন্যও নির্দেশ দিয়েছি৷ তাঁর কথায়, যারা আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পে এখনও অন্তর্ভুক্ত হয়নি এবং প্রধানমন্ত্রী অবাস যোজনায় ঘর পায়নি তাঁদের চিহ্ণিত করে সমস্ত সুযোগ সুবিধা প্রদান করার জন্য বলেছি৷
আজ মঞ্জু দিলের উষ্মা প্রকাশ করে বলেন, ত্রিপুরায় সাফাই কর্মীদের অর্থনৈতিক মানোন্নয়ন কোনওভাবেই সম্ভব নয়৷ কারণ, তাঁরা প্রতিদিন ২৩০ টাকা মজুরি পাচ্ছেন৷ তবে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে তারা মাত্রা ১৬০ টাকা দৈনিক মজুরি পাচ্ছেন৷ ওই সামান্য মজুরি দিয়ে সংসার প্রতিপালন কোনওভাবেই সম্ভব নয়৷ শুধু তা-ই নয়, ত্রিপুরায় সাফাই কর্মীদের জন্য সরকারি দফতরে একটিও অনুমোদিত পদ নেই৷ পূর্বতন সরকার কেন তাঁদের জন্য সরকারি দফতরে অনুমোদিত পদ সৃষ্টি করেনি, অসন্তোষ প্রকাশ করে জানতে চেয়েছেন তিনি৷ তাঁর দাবি, সরকারি দফতরে চাকরি মিললে তবেই সাফাই কর্মীদের অর্থনৈতিক মানোন্নয়ন সম্ভব৷ এদিন তাঁর কথায় মনে হয়েছে, সাফাই কর্মীদের দুরবস্থার জন্য কার্যত বামফ্রন্ট সরকারকেই তিনি কাঠগড়ায় দাঁড় করাচ্ছেন৷
এদিকে, ত্রিপুরায় সমস্ত সাফাই কর্মীদের বছরে অন্তত দুবার স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি৷ শুধু তা-ই নয়, তাঁদের জন্য স্বাস্থ্য শিবিরের আয়োজন বাধ্যতামূলক বলে তা সুনিশ্চিত করতে বলেছেন তিনি৷ এদিন তিনি জানান, ত্রিপুরায় সাফাই কর্মীদের সাথে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে৷ ক্রমশ পরিস্থিতির পরিবর্তন হচ্ছে বলে সাফাই কর্মীরা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন৷ কারণ, অতীতে পুর নিগমের সাফাই কর্মীদের কোনও ছুটি ছিল না৷ কিন্তু ত্রিপুরায় সরকার পরিবর্তন হওয়ার পর তাদের জন্য ছুটি বরাদ্দ হয়েছে৷ তাঁর কথায়, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে সম কাজে সম বেতন চালু করার জন্য ত্রিপুরা সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হবে৷

