
নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২ সেপ্ঢেম্বর৷৷ সমগ্র শিক্ষা অভিযানের অন্তর্গত চুক্তিবদ্ধ শিক্ষক-শিক্ষিকাদের নিয়মিতকরণ রাজ্য সরকারের এক্তিয়ারে নেই ৷ শুধু তা-ই নয়, তাঁদের ত্রিপুরা সরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের ন্যায় ২.৫৭ বেতনক্রম দিতে প্রয়োজনীয় অতিরিক্ত ১২৯ কোটি ৪৮ লক্ষ ২০ হাজার টাকার সংস্থান করাও সম্ভব নয় ৷ সোমবার ত্রিপুরা বিধানসভার বর্ষাকালীন অধিবেশনের দ্বিতীয় দিনে সিপিএম বিধায়ক সুধন দাসের উল্লেখপর্বে আনা নোটিশের জবাবে এ-কথা বলেন শিক্ষামন্ত্রী রতন লাল নাথ ৷
তিনি জানান, ত্রিপুরায় সমগ্র শিক্ষা প্রকল্পে ৫,৫৬৮ জন চুক্তিবদ্ধ শিক্ষক-শিক্ষিকা রয়েছেন৷ তাঁদের মধ্যে ২,৬৮৪ জন অস্নাতক, ২,৬৩৩ জন স্নাতক এবং ২৫১ জন স্নাতকোত্তর৷ তাঁর কথায়, সমগ্র শিক্ষা প্রকল্পে চুক্তিবদ্ধ শিক্ষক-শিক্ষিকাদের জন্য কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের মঞ্জুরি কমিশন ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে ৮৬ কোটি ৯২ লক্ষ ২০ হাজার টাকা মঞ্জুর করেছে৷ তাতে, ছয় মাস তাঁদের বেতন প্রদান করা যাবে ৷
শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য, ১.৮৬ বেতনক্রম অনুসারে তাঁদের এখন বেতন দেওয়া হচ্ছে ৷ তাতে, কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রকের মঞ্জুরি কমিশনের অনুমোদিত অর্থ ব্যতিত অতিরিক্ত ৭৯ কোটি ২৪ লক্ষ ২৬ টাকার প্রয়োজন রয়েছে ৷ সাথে তিনি যোগ করেন, ঠিক একইভাবে ২.২৫ বেতনক্রম অনুসারে ১০৪ কোটি ২ লক্ষ ৬২ হাজার ৮৪৪ টাকা এবং ২.৫৭ বেতনক্রম অনুসারে ১২৯ কোটি ৪৮ লক্ষ ২০ হাজার টাকার অতিরিক্ত প্রয়োজন রয়েছে ৷
তাঁর কথায়, সমগ্র শিক্ষা প্রকল্পে চুক্তিবদ্ধ শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মধ্যে অস্নাতক শিক্ষক-শিক্ষিকারা ২১,৯০৭ টাকা বেতন পাচ্ছেন৷ তার মধ্যে ১৫ হাজার টাকা কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক মঞ্জুর করেছে৷ ফলে, অতিরিক্ত ৬,৯০৭ টাকা ত্রিপুরা সরকার নিজেদের কোষাগার থেকে খরচ করছে৷ ঠিক একইভাবে, স্নাতক শিক্ষক-শিক্ষিকারা ২৭,৭১১ টাকা৷ তাতে, কেন্দ্র দিচ্ছে ২০ হাজার টাকা এবং রাজ্যকে দিতে হচ্ছে ৭,৭১১ টাকা৷ এছাড়া চুক্তিবদ্ধ স্নাতকোত্তর শিক্ষক-শিক্ষিকারা পাচ্ছেন ২৬,৭৩০ টাকা৷ তার মধ্যে কেন্দ্র দিচ্ছে ২৫ হাজার টাকা এবং রাজ্যের বহন করতে হচ্ছে ১,৭৩০ টাকা৷
শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, মনোজ কুমার দেববর্মা এবং অন্যান্য ও সজল দেববর্মা এবং অন্যান্য নিয়মিতকরণ সংক্রান্ত দুটি পৃথক আবেদন ত্রিপুরা হাইকোর্টে জমা পড়েছে৷ ওই দুটি মামলা বর্তমানে শুনানির পর্যায়ে রয়েছে৷ ফলে, বিচারাধীন মামলায় এখনই কোনও মন্তব্য করা কিংবা সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব নয় বলে জানান তিনি৷ তবে, টিআরবিটি-র মাধ্যমে টেট পরীক্ষা দিয়ে তাঁরা শিক্ষকতার চাকরিতে যোগ্যতা অর্জন করতে পারেন৷ তা-হলে, তাঁদের নিয়মিতকরণে যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকে৷
তখন ট্রেজারি বেঞ্চের সদস্য সুদীপ রায়বর্মন বলেন, সমগ্র শিক্ষা প্রকল্পে বর্তমানে যাঁরা চুক্তিবদ্ধ শিক্ষকতা করছেন তাঁদের নিয়োগপত্র ২০১০ সালের ২৩ আগস্টের আগে দেওয়া হয়েছে৷ ফলে, তাঁদের টেট পরীক্ষা দেওয়ার কোনও প্রয়োজনীয়তা আছে বলে তিনি মনে করেন না৷ তাছাড়া, তিন বছর ধরে তাঁদের কোন বেতন বৃদ্ধি হচ্ছে না৷ তাই, অন্তত ১.৮৬ এর বদলে ২.২৫ বেতনক্রম প্রদান করা উচিত বলে দাবি করেন তিনি৷ এ-বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী ত্রিপুরার আর্থিক পরিস্থিতি মনে করালেন৷ সাথে যোগ করেন, প্রয়োজনীয় অতিরিক্ত অর্থের সংস্থানের জন্য সচিব পর্যায়ে অফিসার পাঠিয়ে কেন্দ্রের সাথে দরবার করা হচ্ছে৷ অর্থের সংস্থান হলেই তাঁদের রাজ্যের সরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের ন্যায় বেতনক্রম চালু করা হবে ৷
এদিকে, ত্রিপুরার সমস্ত বিদ্যালয়ে কম্পিউটার শিক্ষা প্রদানে বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে কম্পিউটার ভাড়া এবং পড়ানোর জন্য দরপত্র আহ্বান করা হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী রতন লাল নাথ ৷ তিনি জানান, ত্রিপুরায় ৪০০টি বিদ্যালয়ে ৭৫টি কম্পিউটার চুরি হয়ে গিয়েছে ৷ তাই, এখন নতুন করে কম্পিউটার ক্রয় করবে না দফতর ৷
শিক্ষামন্ত্রীর দাবি, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে বাস্তবায়িত না হওয়া ১৭৯টি বিদ্যালয়, সাথে কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের মঞ্জুরি কমিশনের মঞ্জুর ৭৪টি বিদ্যালয়ে একত্রে আইসিটি প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে ৷

