![](https://jagarantripura.com/wp-content/uploads/2016/10/Tripura-Police.jpg)
নিজস্ব প্রতিনিধি, কৈলাসহর, ২৯ আগস্ট৷৷ রাজ্যের দ্বিতীয় প্রাচীনতম কলেজ রামকৃষ্ণ মহাবিদ্যালয়৷ এন এস ইউ আই এবং এবিভিপির মধ্যে উত্তেজনা ও হাতাহাতিকে কেন্দ্র করে জেলা কংগ্রেস ভাঙচুর, বিক্ষোভ মিছিলেন নামে কংগ্রেস সমর্থকরা শহরের বুকে উচ্ছৃঙ্খলতা প্রদর্শন থেকে শুরু করে বিজেপির আঞ্চলিক কার্যালয়ে অগ্ণিসংযোগ, সব মিলিয়ে উত্তপ্ত কৈলাসহর এর রাজনৈতিক পরিবেশ৷ অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ, মামলা-পাল্টা মামলায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে কৈলাসহর মহকুমায়৷
কলেজ চত্বর থেকে রাজপথ রাজনৈতিক দলগুলির কার্যালয় সর্বত্রই মোতায়েন করা হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা৷ দীর্ঘদিন ধরেই রামকৃষ্ণ মহাবিদ্যালয় এন এস ইউ আই এবং এবিভিবি দুই ছাত্র সংগঠনের মধ্যে উত্তেজনা চলছিল৷ প্রায়শই উভয়পক্ষের অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ উত্তরপ্ত হয়ে উঠল কলেজ চত্বর৷ গত সোমবার ধর্মীয় পোশাক পরে কলেজে ক্লাস করাকে কেন্দ্র করে সেই উত্তেজনা আরও তীব্র আকার ধারণ করে৷
বুধবার কলেজের শৃঙ্খলা ভঙ্গ নিয়ে দুই ছাত্র সংগঠনের সদস্যদের মধ্যে বাক্বিতণ্ডা হয়৷ এন এস ইউ আই সমর্থক প্রথম বর্ষের ছাত্র মোঃ আব্দুল নুর অভিযোগ করে যে, গতকাল দুপুর বারোটা নাগাদ তাকে বিনা কারণে ছাত্রসংসদের নিয়ে শারীরিক নিগ্রহ করে এবিভিবি সমর্থিত ছাত্রছাত্রীরা৷ এমনকি তাকে উদ্ধার করতে গেলে তার সহপাঠীদের নিগৃহীত করা হয়৷ অপরদিকে রামকৃষ্ণ মহাবিদ্যালয় তৃতীয় সেমিস্টারের ছাত্র লোকেশ নামা ও তুষার কান্তি দত্ত অভিযোগ করে যে গতকাল বিকালবেলা কলেজ শেষ করে কংগ্রেস ভবন লাগোয়া একটি দোকানে টিফিন করতে আসলে এনএসইউআই সমর্থিত কতিপয় ছাত্র ও বহিরাগতরা তাদের বলপূর্বক কংগ্রেস ভবনে নিয়ে গিয়ে হাত পা মুখ বেঁধে প্রচণ্ড মারধর করে৷ বিষয়টি প্রত্যক্ষদর্শীরা দেখতে পেলে খবর যায় সহপাঠীদের কাছে৷
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসে সহপাঠীরা৷ তাদের কংগ্রেস ভবন থেকে উদ্ধার করে প্রথমে মহকুমা হাসপাতাল ও পরে জেলা হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়৷ পরবর্তী সময় আক্রান্ত লোকেশ ও তুষার দত্ত থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করে৷
রাজ্যে বিপ্লব কুমার দেব এর নেতৃত্বে পরিচালিত সরকার চাইছে রজ্যের উন্নয়ন এর পাশাপাশি শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা করতে৷ আর সেখানেই ষড়যন্ত্র করছে কংগ্রেস সিপিএম দল৷ রাজ্যের শান্তি-শৃঙ্খলা নষ্ট করে উদ্বেগজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চাইছে বিরোধী দল৷ নিজেদের অপরাধ ঢাকার জন্য ও আমজনতার দৃষ্টি নষ্ট করে উদ্বেগজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চাইছে বিরোধী দল৷ নিজেদের অপরাধ ঢাকার জন্য ও আমজনতার দৃষ্টি ঘোরানোর জন্যই নিজেদের কার্যালয় নিজেরা ভাঙচুর করে এনএসইউআই ও কংগ্রেস কর্মীসমর্থকরা৷ এমনটাই অভিযোগ করেন বিজেপি জেলা সভাপতি তথা বিধায়ক ভগবান দাস৷ পাশাপাশি গতকাল গভীর রাতে কৈলাসহরের উত্তরাঞ্চলে বিজেপি দলের যুবরাজ নগরস্থিত আঞ্চলিক কার্যালয়ে অগ্ণিসংযোগ করে কংগ্রেস ও সিপিএম এর মিলিত দুষৃকতকারীরা৷ ফলে সম্পূর্ণ ভষ্মীভূত হয়ে যায় দলীয় কার্যালয়৷ একটি হিংসাত্মক অস্থির পরিবেশ সৃষ্টি করতে বিরোধী দলগুলি৷ নিজের প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে এমনটাই জানান জেলা সভাপতি ভগবান দাস৷
গতকাল জেলা কংগ্রেস অফিস ভাঙচুর ঘটনার খবর পেয়ে বিকেল সাড়ে চারটা নাগাদ ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছায় জেলা কংগ্রেস সভাপতি মোঃ বদরুজ্জামান৷ তিনি এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করে বলেন যে, দীর্ঘ ২৫ বছর কেউ কংগ্রেস ভবন আক্রমণ করার সাহস পায়নি৷ কিন্তু রাজ্যে ক্ষমতা পালাবদলের পর থেকেই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে বিরোধী দলের কার্যালয়ে আক্রমণ ও অগ্ণিসংযোগ হয়েছে৷ শাসকদল গণতন্ত্রের গলা টিপে ধরতে চাইছে৷ কংগ্রেস দল এর মোকাবেলা করবে৷ জেলা কংগ্রেস শাসক দলের বিভিন্ন দুর্নীতি প্রকাশ পেয়েছে৷ ফলে নিজেদের অপরাধ ঢাকতে ও সাধারণের দৃষ্টি ঘোরাতে এ ধরনের কার্যকলুদডগল্যাপ করছে শাসক দল৷ কংগ্রেস ভবন ভাঙচুরের ঘটনায় বিক্ষোভ প্রদর্শন করে কংগ্রেস কর্মী সমর্থকরাও প্রায় তিন ঘণ্টা সেন্ট্রাল রোড অবরোধ করে৷
কৈলাসহর থানার ওসি ও মহকুমা পুলিশ আধিকারিক এর সাথে কোন ধরনের কথা বলতে রাজি হয়নি জেলা নেতৃত্ব৷ পরবর্তী সময় উনকোটি জেলার পুলিশ সুপার লাকি চৌহান ঘটনাস্থলে পৌঁছলে উত্তেজিত কর্মী সমর্থকরা বিক্ষোভ প্রদর্শন করে৷ পরবর্তী সময় পুলিশ সুপারের আশ্বাসে অবরোধ প্রত্যাহার করে নেয় জেলা নেতৃত্ব৷ রাস্তা অবরোধ শেষে বিশাল কর্মী সমর্থক নিয়ে কংগ্রেস নেতৃত্ব শহরের বুকে বিক্ষোভ মিছিল প্রদর্শন করে৷ যদিও এই বিক্ষোভ মিছিলে কতিপয় উগ্র সমর্থকরা শহরের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছিল বলে অভিযোগ স্থানীয়দের৷ জেলা কংগ্রেস নেতৃত্বের পক্ষ থেকে কংগ্রেস ভবন ভাঙচুরের ঘটনায় দোষীদের দ্রুত গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়েছে৷ পাশাপাশি প্রয়োজনে জেলা নেতৃত্ব বৃহত্তর আন্দোলনে যাওয়ার হুমকি দিয়েছে৷
এখন পর্যন্ত কৈলাসহর থানার তিনটি ও ইরানি থানায় একটি মামলা নথিভুক্ত হয়েছে গতকালের ঘটনায়৷ এবিভিপির পক্ষ থেকে লোকেশ নম ও তুষার দত্ত কৈলাসহর থানার ৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে৷ দ্বিতীয় মামলাটি করে জেলা কংগ্রেসের পক্ষ থেকে আশীষ সেনগুপ্ত৷ জেলা কংগ্রেস ভবন ভাঙচুরের ঘটনায় ১৩ ডনেক নামে লিখিত অভিযোগ করেছে কৈলাসহর থানায় মামলা করা হয়৷ অপরদিকে তৃতীয় মামলাটি হয় এনএসইউআই সমর্থিত ছাত্র মোঃআব্দুল নূর এর পক্ষ থেকে৷ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়৷ চতুর্থ মামলাটি হয় ইরানি থানার শাসক দলের কাযালয়ে অগ্ণিসংযোগের অভিযোগে৷ মামলা করে স্থানীয় নেতৃত্ব কৈলাসহর ইরানি থানায়৷
কলেজ চত্বর এএনএসইউআই ও এবিভিপির মধ্যে উত্তেজনাকে কেন্দ্র করে কংগ্রেস জেলা কার্যালয় ভাঙচুর, শাসক দলের কার্যালয়ে অগ্ণিসংযোগ এর ফলে কৈলাসহর মহকুমার স্বাভাবিক পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে৷ পাশাপাশি বিঘ্নিত হচ্ছে রামকৃষ্ণ মহাবিদ্যালয় এর স্বাভাবিক পঠন-পাঠন৷