হৃদরোগে অ্যাডহক শিক্ষকের মৃত্যু সরকারকে দায়ী করল ১০৩২৩ চাকরিচ্যুত শিক্ষক সংগঠন

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৮ আগস্ট৷৷ চাকরি হারানোর দুশ্চিন্তায় আরও একজন অ্যাডহক শিক্ষকের মৃত্যু হয়েছে৷ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মুঙ্গিয়াকামী দ্বাদশ শ্রেণি বিদ্যালয়ের শিক্ষক সুরজিৎ দেববর্মার মৃত্যু হয়েছে৷ তাঁর মৃত্যুর জন্য ত্রিপুরা সরকারকে দায়ী করেছেন চাকরিচ্যুত ১০৩২৩ শিক্ষকরা৷ বুধবার সন্ধ্যায় আগরতলায় চাকরিচ্যুত শিক্ষকদের সংগঠন মোমবাতি মিছিলের মাধ্যমে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তাঁদের চাকরি সুনিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন৷


ত্রিপুরা হাইকোর্টের রায়ে ১০৩২৩ জন শিক্ষকের চাকরি বাতিল হয়েছে৷ সুপ্রিম কোর্টও ওই রায় বহাল রেখেছে৷ তবে, ত্রিপুরা সরকারের আবেদনে তাঁদের অ্যাডহক ভিত্তিতে আগামী বছরের (২০২০) ৩১ মার্চ পর্যন্ত নিযুক্তিতে অনুমতি দিয়েছে৷ ফলে, ক্রমশ চাকরিচ্যুত শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদ সমাপ্ত হওয়ার সময় এগিয়ে আসছে৷ তাতে, তাঁদের দুশ্চিন্তা ক্রমেই বেড়ে চলেছে৷ কারণ, চাকরি হারানোর পর পরিবার প্রতিপালন কীভাবে করবেন সেই চিন্তাই তাঁদের কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে৷


বুধবার ভোরে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে এক অ্যাডহক শিক্ষকের মৃত্যু হয়েছে৷ চাকরি হারানোর দুশ্চিন্তা থেকেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ মৃতের পরিবারের৷ জানা গেছে, মঙ্গলবার রাতে খাওয়া সেরে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন মুঙ্গিয়াকামী দ্বাদশ শ্রেণি বিদ্যালয়ের প্রাথমিক বিভাগের অ্যাডহক শিক্ষক সুরজিৎ দেববর্মা৷ আজ সকালে তাঁকে ডাকাডাকি করেও ঘুম থেকে না ওঠায় তাঁর পরিবারের সদস্যরা চিৎকার শুরু করেন৷ সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়৷ কিন্তু, চিকিৎসকরা তাঁকে তেলিয়ামুড়া মহকুমা হাসপাতালে স্থানান্তর করেন৷ তেলিয়ামুড়া হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন৷ তাঁকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছে বলে পুলিশ ডেকে তাঁর মৃতদেহ ময়না তদন্তের জন্য পাঠিয়ে দেন চিকিৎসকরা৷


মৃতের স্ত্রী জানিয়েছেন, ময়না তদন্তের পর তাঁর স্বামীর দেহ তাঁদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে৷ তাঁর মৃত্যুর খবর পেয়ে বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অ্যাডহক শিক্ষকরা ছুটে আসেন৷ জনৈক অ্যাডহক শিক্ষিকা জবা ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, ত্রিপুরা হাইকোর্টের রায় ঘোষণার পর থেকে এখন পর্যন্ত ৩৮ জন শিক্ষককে আমরা হারিয়েছি৷ আরও কতজনের এভাবে মৃত্যু হবে তা মনে হলেই শিউরে উঠি, বলেন তিনি৷


এদিকে, সহকর্মীর আকস্মিক মৃত্যুতে আজ সন্ধ্যায় ১০৩২৩ শিক্ষকদের সংগঠন আগরতলায় মোমবাতি মিছিল করেছে৷ সংগঠনের সভাপতি বিমল সাহা অ্যাডহক শিক্ষক সুরজিৎ দেববর্মার মৃত্যুর জন্য ত্রিপুরা সরকারকে দায়ী করেছেন৷ তিনি বলেন, তাঁদের চাকরি বাঁচানোর প্রশ্ণে রাজ্য সরকার কোনও উদ্যোগ নিচ্ছে না৷ অথচ সরকারের ভুলেই তাঁরা আজ চাকরিচ্যুত হয়েছেন৷ তাঁর দাবি, চাকরিচ্যুত শিক্ষকদের চাকরি সুনিশ্চিত করতেই হবে৷ নয়তো, ত্রিপুরায় বৃহত্তর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি৷