কলকাতা, ২৮ আগস্ট (হি.স): কেন্দ্রীয় সংস্থাকে ব্যবহার করে তৃণমূল ভাঙানোর চেষ্টা করছে বিজেপি বলে বুধবার অভিযোগ করেন তৃনমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । তিনি বলেন, ‘বিজেপিতে যোগ না দিলে জেলে ভরার ভয় দেখাচ্ছে তারা । আমি জেলে যেতে রাজি আছি, কিন্তু বিজেপির সাম্প্রদায়িক রাজনীতি মেনে নিতে রাজি নই’ । এদিন মেয়ো রোডে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসের সভায় দাঁড়িয়ে বুধবার আবারও রাজ্যের মানুষকে দেশ জুড়ে চলা অপশাসনের বিদ্ধে রুখে দাঁড়াবার ডাক দিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ।
![](https://jagarantripura.com/wp-content/uploads/2014/04/mamata-bannerjee.jpg)
ছাত্র সমাবেশে মমতা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘আজ আমার ভাইকে ডাকছে । কাল হয়তো আমায় ডাকবে । আমি তৈরি আছি । জেলে যেতে তৈরি কিন্তু বিজেপির সাম্প্রদায়িকতার সামনে মাথা নোয়াব না’। আজ মেয়ো রোডের গান্ধীমূর্তি সংলগ্ন সভাস্থলে এদিন ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। বিপুল জমায়েতে দাঁড়িয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বার্তা রাজ্যের সব ছাত্র যুবদের কাছে ভয় পাবেন না । ভয়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান । প্রতিবাদে সরব হন ।
এদিন নাম না করে মুকুল রায়কে আক্রমণ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । বলেন, ‘বলে ১০৭ জন বিধায়কের নাম নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে । আগে ৭ জনের নাম বার কর । এত সস্তা না । আমরা বাংলায় লড়াই করি । তাই ওদের বাংলা চাই’ । মমতা আরও বলেন, ‘জেলে গেলে ভাবব স্বাধীনতার লড়াই লড়ছি। দেশ পরাধীন হয়ে গেছে’।
এদিনই নারদ কাণ্ডে আরামবাগের সাংসদ অপরূপা পোদ্দারের বাড়িতে হানা দিয়েছে সিবিআই । বক্তৃতার শুরুর দিকেই মমতা সেই প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘আজকে আসার সময় এক এমপি আমায় বলল, ওরা জানতে চাইছে, তোমার পার্টি মাসে কটা করে ব্লকে মিটিং করে । কী কী কর্মসূচি নেয় । সে তখন বলেছে, আমার পার্টি কী করে, তোমায় বলব কেন ? ওদের নাকি বলতে হবে । গাঁয়ে মানে না আপনি মোড়ল’।
একুশে জুলাইয়ের মঞ্চেও মমতা বলেছিলেন, ‘শতাব্দী আমায় কানে কানে বলল, দিদি দেখো ভোট হয়ে গেছে, আমাকে ইডি ডেকেছে । ডেকেই বলছে তুমি বিজেপির ওমুক নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করো । না করলে তোমারও সুদীপ, তাপসের মতো অবস্থা হবে’।
এদিন তৃণমূলনেত্রী কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে দেশে একনায়কতন্ত্র চালানোর অভিযোগ তোলেন । বলেন, ‘দেশে প্রেসিডেন্সিয়াল ডেমোক্রেসি চালু করার চেষ্টা হচ্ছে । এরা কারও কোনও কথা শোনে না । মানুষের কথা বলার অধিকার নেই । সংবাদমাধ্যম গুলোকে সব কিনে নিয়েছে’। কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে আগেও বারবার সাম্প্রদায়িক রাজনীতি ও কেন্দ্রীয় এজেন্সির অপব্যবহারের অভিযোগ তুলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । লোকসভা নির্বাচনে এই নিয়ে রাজনৈতিক উত্তাপ চরমে পৌঁছয় । লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের আশানুরূপ ফল না হলেও তাঁর আত্মবিশ্বাসে যে চিড় ধরেনি ছাত্রছাত্রীদের সামনে এদিন তা বোঝানোর আপ্রাণ চেষ্টা চালান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ।
এরপরই এদিন নিজের স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে কেন্দ্রের একের পর এক সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনায় সবর হন তৃণমূল নেত্রী । যার শুরুটা এদিন হয় কাটমানি প্রসঙ্গে বিরোধীদের তোলা প্রশ্নে । মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ধর্মের নামে ভেজালের দোকান চলছে । কাটমানি নিয়ে কথা বলা হচ্ছে কিন্তু কালো টাকা নিয়ে কথা নেই । এরপরই সরাসরি আরবিআই-এর দিকে তোপ দাগেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । বলেন, ১,৭৬ লক্ষ কোটি টাকা লভ্যাংশ হিসাবে কেন্দ্রীয় সরকারকে তুলে দিল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক । আরবিআিইয়ের কাছে গচ্ছিত থাকা সোনাও চলে যাচ্ছে । এরপর দেশ কোন বড় বিপদে পড়লে কে সামলাবে ?
তিনি বলেন, মানবিকতার খাতিরে পেনশনটা আমরা তুলে দিই না । আর তা তুলে অনেক টাকা বেঁচে যেত । সমস্ত রাজ্য সরকারি কর্মীদের পেনশন তুলে দিয়েছে । ত্রিপুরায় এই মুহূর্তে বিজেপি সরকার । আর সেখানে তারা ক্ষমতা দখলের পরেই সে রাজ্য থেকে পেনশন তুলে দেয় । কিন্তু একমাত্র পশ্চিমবঙ্গ যেখানে এখনও পর্যন্ত পেনশন দেওয়া হয় । আর তা দেওয়া হয়নি মানবিকতার খাতিরেই । তাঁর এই মন্তব্যে অশনি সঙ্কেত দেখতে শুরু করেছেন রাজ্যের লক্ষাধিক সরকারি কর্মী ।
মেয়ো রোড থেকে দেওয়া ভাষণে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরও বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার একাধিক রাষ্ট্রায়ত্ব সংস্থা তুলে দিচ্ছে । লক্ষ লক্ষ যুবক যুবতির চাকরি চলে যাচ্ছে । এই বিষয়ে সব জেনেও কেন্দ্রীয় সরকার সরকার চুপ করে রয়েছে । এয়ার ইন্ডিয়া হোক কিংবা রেল সমস্ত কর্মীর পাশে তৃণমূল আছে বলে বিজেপির সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দাগেন রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান ।
চিটফান্ড তদন্তে গতি বাড়িয়েছে সিবিআই ও ইডি । শতাব্দী রায়, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, সুব্রত বক্সী, ডেরেক ও ব্রায়েনদের মতো তৃণমূল নেতাদের ডেকে জেরা করেছে এজেন্সি সিবিআই ও ইডি । ডাকা হয়েছিল অভিনেতা প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় ও ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তকেও । গত সোমবার মুখ্যমন্ত্রীর আঁকা ছবি বিক্রি নিয়ে জেরায় ডাকা হয়েছিল শিল্পী শুভাপ্রসন্নকে । দলের মুখপত্র জাগো বাংলার হিসেব নিয়ে জানতে চাওয়া হয় মহাসচিব পার্থ চট্টপাধ্যায়ের কাছ থেকে । যদিও পার্থ চট্টপাধ্যায় বলেছিলেন, সংগঠনের বিষয়ে তাঁর কাছে জানতে চেয়েছে সিবিআই । মমতার এদিনের কথা শুনে অনেকেই তাই প্রশ্ন তুলছেন, এজেন্সির গতিপ্রকৃতি দেখেই কি মুখ্যমন্ত্রী মনে করছেন তাঁকেও ডাকতে পারে সিবিআই বা ইডি ? নাকি কিছুটা নিশ্চিত হয়েই আগে থেকেই সহানুভূতি পাওয়ার কৌশল ?
এই ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে বিজেপি অন্যতম সাধারন সম্পাদক সায়ন্তন বসু বলেন, চুরি ধরা পড়লেই বলা হচ্ছে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা । তৃণমূল যে চিটফান্ড তথা গরিবের টাকা লুঠ করেছে বাংলার শিশুরাও জানে । তাঁর কথায়, চিদম্বরমকে গ্রেফতার করা হয়েছে দেখে ঘুম চলে গেছে তৃণমূলের অনেকেরই । কিন্তু এ সব কুমির কান্নায় আর কোনও কাজ দেবে না ।